গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
করুণার কথা হচ্ছে – এই সুরের না কোন অর্থ আছে, আর না এটা কারো কাজে আসে।” তারপর নিজের ঘরে ঢুকে খড়ের ছোট্ট বিছানাটায় শুয়ে পড়লো সে, আর তার ভালবাসার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই।
তারপর, আকাশে যখন চাঁদ উঠলো, নাইটিঙ্গেল তখন গোলাপগাছটার কাছে উড়ে গিয়ে ওর কাঁটায় বুক পেতে দিলো। সারা রাত জুড়ে কাঁটায় বুক রেখে গাইলো ও, আর ঠাণ্ডা কাঁচের মত চাঁদটা নুয়ে এসে শুনলো ওর গান।
সারা রাত জুড়ে গাইলো ও, কাঁটাটা ওর বুকের গভীর থেকে গভীরে যাওয়ার সাথে ওর প্রাণরস বেরিয়ে যেতে লাগলো একটু একটু করে।
একটা ছেলে আর একটা মেয়ের হৃদয়ে ভালবাসার জন্ম নিয়ে গাইলো ও সবার আগে। তাই শুনে গোলাপগাছের সবচেয়ে উঁচু শাখায় ফুটলো চমৎকার এক গোলাপ, একেকটা গানের সাথে সাথে একটা করে পাপড়ি মেললো সে।
শুরুতে ফ্যাকাসে ছিল ওটা, নদীর ওপর জমে থাকা কুয়াশার মত—সকালের পায়ের মত ফ্যাকাসে, আর ভোরের ডানার মত রূপোলি। রুপোর আয়নাতে গোলাপের ছায়া যেমন, পুকুরের পানিতে গোলাপের ছায়া যেমন, তেমনই এক গোলাপ ফুটলো গাছের সবচেয়ে উঁচু শাখায়।
কিন্তু গাছ নাইটিঙ্গেলকে অনুরোধ করলো, ও যেন কাঁটার আরো কাছে এগিয়ে আসে। “আরো কাছে, ছোট্ট নাইটিঙ্গেল,” মিনতি করলো গাছ, “তা না হলে গোলাপটা পুরো হবার আগেই রাত ফুরিয়ে যাবে।”
তখন নাইটিঙ্গেল আরো জোরে বুক চেপে ধরলো কাঁটার গায়ে, ওর গানও তীব্র থেকে তীব্র হতে লাগলো, কারণ ও তখন গাইছিল এক নারী আর এক পুরুষের মনে আবেগ অঙ্কুরিত হবার গান।
গোলাপের পাতায় তখন সূক্ষ্ম একটা গোলাপি আভা দেখা দিলো – কনের ঠোঁটে চুমু খাবার সময়ে বরের মুখে যেমন আভা দেখা যায়, ঠিক তেমন। কিন্তু কাঁটা তখনো নাইটিঙ্গেলের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে নি, তাই গোলাপের ভেতরটা তখনো সাদা, কারণ নাইটিঙ্গেলের হৃদয়ের রক্তই কেবল একটা গোলাপের হৃদয়কে রাঙাতে পারে।
গাছ তখন নাইটিঙ্গেলকে অনুরোধ করলো, ও যেন কাঁটার আরো কাছে এগিয়ে আসে। “আরো কাছে, ছোট্ট নাইটিঙ্গেল,” মিনতি করলো গাছ, “তা না হলে গোলাপটা পুরো হবার আগেই রাত ফুরিয়ে যাবে।”
নাইটিঙ্গেল তখন আরো জোরে বুক চেপে ধরলো কাঁটার গায়ে, আর সে কাঁটা ওর হৃৎপিণ্ড স্পর্শ করলো, হঠাৎ তীব্র একটা ব্যথার তীর ছুটে গেলো ওর শরীর দিয়ে।
ব্যথা যত তিক্ত থেকে তিক্ত হলো, ওর গানও তত তীব্র থেকে তীব্র হলো, কারণ তখন ও গাইছিলো সেই ভালবাসার গান – মৃত্যু যাকে পূর্ণ করে, সেই ভালবাসা – সমাধিতে যার শেষ হয় না।
আশ্চর্য সুন্দর গোলাপটা তখন রক্তিম হল, ঠিক পুবাকাশের গোলাপের মত। পাপড়িগুলো রাঙলো, চুনির মত ঘন লাল হল তার বুক।
কিন্তু নাইটিঙ্গেলের কণ্ঠ আবছা হয়ে এলো, ছোট্ট ডানা দুটো ঝাপটাতে লাগলো সে, আর একটা পর্দা এসে ঢেকে দিলো তার চোখ। আবছা থেকে আবছা হতে থাকলো তার গান, ছোট্ট নাইটিঙ্গেলের মনে হল কিছু একটা তার কণ্ঠ চেপে ধরেছে।