গল্পের শেষ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভাল করে দেখবে বলে একটু এগুতে গেছে এমন সময় পেছন থেকে ক্যাক করে কে তার ঘাড়টি চেপে ধরে। ভোম্বল দেখে বংকিম-স্যার। মুখে নিষ্ঠুর হাসি, এইবার তোমায় আমি ব্যঙ্গচিত্র বানাচ্ছি, দাঁড়াও। ডোম্বল পাঁচিলের দিকে আঙুল তুলে বলে, স্যার দেখুন।
স্যার পাঁচিলের দিকে তাকান। আর সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজে কার্টুন হয়ে যান। এমন গো-গো আওয়াজ করে হাত-পা ছরকুটে পড়েন যে ডোম্বল তো ভোম্বল, পাঁচিলের হুতুম থুমোটা পর্যন্ত ঘাবড়ে যায়।
‘কেষ্টদা কেষ্টাদা ভোম্বলের পরিত্রাহি ডাক শুনে কেষ্টধন পড়ি কি মরি করে ছুটে আসে লণ্ঠন হতে । দুজনে মিলে তোল্লাতুল্লি করে স্যারকে ঘাসজমির ওপর শুইয়ে দেয়।
স্যারের শখের বাবরি, ফিনফিনে পাঞ্জাবি সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। মুখে-চোখে জলের ছিটে দিতে তিনি চোখ মেলে তাকান, আমি কোথায়?’ তারপরেই ডোঁক গেলেন, ‘বুঝেছি। দেরে থুড়ি ব্রহ্মদেত্য আমার ঘাড় মটকাতে
চেয়েছিল…’ হয়তো ফের অজ্ঞান হতেন। কিন্তু হঠাৎই ভোম্বলের হাতের দিকে নজর পড়ে, এ কি দাড়ি? হা করে তাকান তিনি ভোম্বলের মুখের দিকে।
হেসে ভোম্বল বলে, ‘হ্যাঁ স্যার। আর ওই যে দেখুন। স্যার দেখেন গাবগাছের কাছে একটি মাঝবয়সী, রোগাপীনা, গালে-আঁচিল লোক কঁচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে, কেষ্টধন লণ্ঠন তুলে যেন তার মুখে ‘ফোকাস করছে এমনি ভঙ্গিতে দাঁত বার করে হাসছে পাশে দাঁড়িয়ে।
এসব কি? বংকিম-স্যার কৈফিয়ত তলব করার ভঙ্গিতে বলেন, ‘এ দাড়ি কেথেকে এল? আর এ লোকটাই বা কে? আমার যে নাড়ি ছেড়ে যাবার উপক্রম!
‘ও তো জটাোঁ স্যার, ভোম্বল জবাব দেয়, ‘চিনতে পারছেন না? কালীপুরের জটাই বহুরূপী । রাসের মেলায় যার সাজ দেখার জন্যে লোক ভেঙে পড়ে। রায়বাবুদের বাড়ি ভাসানের সময়ও ওকে দেখে থাকবেন আপনি ।’
ও তাই বুঝি’, ঠাহর করে দেখে বংকিম-স্যার বলেন। তারপর মাটি থেকে বেতটা তুলে নিয়ে বলেন, তা আমার সঙ্গে এসব করার মানে কি? আজ তিন মাস আমি অনিদ্রারোগে ভুগছি। বাঁশগাছে প্যাঁচা ডাকলে আমার হেঁচকি ওঠে। আমাকে এমন বিপদগ্রস্ত করার অর্থ কি আমি— স্যার রাগলে যে সাধুভাষা বলেন তা ভোম্বল জানে।
সে বলে, স্যার, আপনাকে ভয় দেখাতে জটাইদা মোটেই চায়নি। আসলে ঘটনা যদি শোনেন তবে খুব অবাক হবেন। আমাকে জটাইাঁ সব বলেছে। হয়েছে কি, জটাইদারও ভারি লেখাপড়া শেখার ইচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো পুঁচকেদের পাশে বসে অ, আ, ক, খ পড়তে ভারি লজ্জা—তাই না জাটাইদা?
জটাই ঘট ঘট করে মাথা নেড়ে বোঝাতে চায় যে ভোম্বল ঠিক কথাই বলেছে।
অ তাই বুঝি’ বংকিম স্যারের মনটা একটু ভিজেছে কিন্তু নিজের ছাত্রের সামনে এমন নাকাল হওয়াটা তিনি ঠিক মেনে নিতে পারছেন না। বেতের আগা দিয়ে আলখাল্লাটা শূন্যে তুলে বলেন, তা এসবের কি দরকার ছিল—এ্যাঁ?”
ছিল তো নাই, ভোম্বলের জবাবও তৈরি, কিন্তু জটাইদাকে কে বোঝায় বলুন!