গল্পের দ্বাবিংশ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
পবনকুমার আর মহেন্দ্র যখন স্থানত্যাগ করার উপক্রম করছে তখন হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে দুজনেই দাঁড়িয়ে পড়ল। শব্দটা বেশ জোরালোই, কে যেন সুজনের দরজার তালা ভাঙার চেষ্টা করছে।
ঝনাৎ-ঝনাৎ করে বারতিনেক শব্দ হল। তারপরই ঝড়াক করে দরজাটা খুলে ঘরে ঢুকল একটি অন্ধকার মানুষ।অন্ধকার বলে তাকে দেখা গেল না ঠিকই, কিন্তু পবনকুমারের অভ্যস্ত চোখ দেখতে পেল লোকটা বেশ লম্বা-চওড়া।
একটা টর্চ জেলে লোকটা চারদিকটা দেখতে লাগল। জিনিসপত্রও হাঁটকাল, বিশেষ করে টেবিলের ওপর কাগজপত্রগুলো, ডুয়ার খুলে সব তছনছ করল কিছুক্ষণ।
পবনকুমার চাপা গলায় মহেন্দ্রকে বলল, “পরঞ্জয়বাবু।”
“অ্যাঁ! বলো কী !”
“চুপ।
মহেন্দ্র চাপা গলায় বলল, “কী করছেন উনি ?”
“কী খুঁজছেন?”
“তা কী করে বলব ?”
“চলো ওঁকে ধরি।”
“ধরবে ?”
“ক্ষতি কী ?”
“অপ্রস্তুত হবেন হয়তো।”
“তা হোক না, আমাদেরও তো উনি অপ্রস্তুত কিছু কম করেননি।”
“তাহলে চলো ফটকের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। বেরোলে মুখোমুখি হওয়া যাবে।”
“তাই চলো ।”
দুজনে গিয়ে ফটকের দুধারে দাঁড়িয়ে রইলেন।
মিনিট পনরো বাদে পরঞ্জয় টর্চ নিবিয়ে বেরিয়ে এলেন। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবলেন, তারপর ভাবতে-ভাবতেই এগিয়ে এলেন ফটকের দিকে।
পবনকুমার মৃদুস্বরে বললেন, “এই যে পরঞ্জয়বাবু!”
পরঞ্জয় এমন চমকে উঠলেন যে, বলার নয়। ধী করে একটা পিস্তল বের করে প্রায় ট্রিগার টিপে দিয়েছিলেন, আর কি। কিন্তু মহেন্দ্র তার চেয়েও দ্রুতবেগে পরঞ্জয়ের কবজি চেপে ধরে পিস্তলের লকটা নামিয়ে দিয়ে বললেন, “করছেন কী?”
পরঞ্জয় অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, “আরে তোমরা ! তোমরা এখানে কী করছ?”
পবন বলল, “সেই প্রশ্ন তো আমাদেরও, আপনি এখানে কী করছেন?”
পরঞ্জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “কী করছি তা এক কথায় বলা মুশকিল। বলতে সময় লাগবে। “তার আগে বলুন, হঠাৎ নিরুদ্দেশ হলেন কেন।”
“নিজের ইচ্ছায় হইনি।”
“তবে কি সুজনবাবুর ইচ্ছেয় ?”
“অনেকটা তাই, তিনি আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমি সেটা গ্রহণ করেছি মাত্র।”
“এখন বাকি কথা বলুন।”
“এখানে দাঁড়িয়ে?”
“তার দরকার কী ? আমরা সুজনবাবুর ঘরে গিয়েও বসতে পারি। উনি আজ রাতে আর ফিরবেন না।”
“ফিরবেন না? কেন কোথায় গেছেন সুজনবাবু?”
“গুপ্তধনের সন্ধানে।”
“সর্বনাশ! তা হলে তো—”
“ব্যস্ত হবেন না পরঞ্জয়বাবু। গুপ্তধন উদ্ধার করা অত সহজ নয়, কিন্তু আপনিই বা কেন গুপ্তধন নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন?”
পরঞ্জয় একটু থতমত খেয়ে বললেন, “আসলে কী জানো, রহস্য ভেদ করতে আমি বড় ভালবাসি।”
পবনকুমার বললেন, “রহস্যভেদ করা ভাল, কিন্তু আগে জানা দরকার গুপ্তধন বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা আসলে কার প্রাপ্য। আপনি কি তা জানেন?”
“না, কার প্রাপ্য তোমরা জানো?”
“জানি। ওই বাক্সটা মহেন্দ্রর হেফাজত থেকে অনেকদিন আগে চুরি যায়।”
“বলো কী !”
“হ্যা। ওই গুপ্তধনের আসল উত্তরাধিকারী মহেন্দ্র। ওর পিতামহ কিছু বিষয়সম্পত্তি বা টাকাপয়সা যাই হোক একজনের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন। কী শর্তে তা অবশ্য আমাদের জানা নেই, সেটা উদ্ধার করা যাবে কি না তাও
জানি না। কিন্তু উদ্ধার হলে তা মহেন্দ্ররই প্রাপ্য হয়।”
পরঞ্জয় যেন একটু ঘাবড়ে গেলেন। তারপর বললেন, “ওহে বাপু, অতশত আমার জানা ছিল না। আমি শূলপাণির কাছে শুনেছিলাম যে, ওই বাক্সে যা আছে তা এলেবেলে জিনিস নয়, একটা সংকেত আছে।”
“তাই কি দুজনে ষড়যন্ত্র করছিলেন?”
“ষড়যন্ত্র ! ষড়যন্ত্র হবে কেন?
আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি, সঙ্কেত উদ্ধারের চেষ্টা করতাম, যেমন লোকে ধাঁধাঁর সমাধান করে বা শব্দজব্দ মেলায়।
“গুপ্তধন যদি উদ্ধার হত তা হলে কী করতেন?”
“সত্যি কথা বলব?”
“বলুন না।” “আমার ইচ্ছে ছিল কিছু মোটা টাকা পেলে মধ্যপ্রদেশে গিয়ে অনেকটা জমি বন্দোবস্ত করে নিয়ে একটা জঙ্গল বানাতাম।”
“জঙ্গল?”
“হ্যাঁ । এ-দেশের বনজঙ্গল যেভাবে সাফ হয়ে যাচ্ছে, তাতে মনটা বড় খারাপ হয়।”
পবন আর মহেন্দ্র দুজনেই হাসল। পরঞ্জয় বললেন, “জঙ্গল বানিয়ে বাঘ টাঘ ছাড়তাম।”
“তারপর বাঘগুলোকে শিকার করতেন তো!”
“আরে না, শিকারের শখ যৌবনে ছিল, এখন অরণ্যের জীবদের জন্যে কষ্ট হয়। যাকগে, গুপ্তধন যখন মহেন্দ্রর তখন আর ও নিয়ে ভেবে লাভ নেই।”
“কিন্তু আপনি অজ্ঞাতবাস ছেড়ে ফিরছেন কবে?”
“সংসার আর ভাল লাগে না। জঙ্গলে তো বেশ আছি, তাঁবুতে থাকি, সারাদিন ঘুরি, পাখির ডাক শুনি। বেশ কেটে যাচ্ছে, তোমরা আমাকে এরকমই থাকতে দাও।”
“তাই নয় থাকবেন।”
“এতদিন সুজন আমাকে পুষতেন, তাঁরই খরচে আছি, এবার থেকে না হয় নিজের খরচেই থাকব।”
“আমাদের জানা দরকার সুজন আপনাকে পুষতেন কেন?”
“সেটা প্রথমে বুঝতে পারিনি, ভেবেছি আমার প্রতি তাঁর একটা সিমপ্যাথি হয়েছে বলেই বুঝি প্রস্তাবটা দিয়েছেন, কিন্তু পরে বুঝতে পারি আমাকে ঘটনা থেকে দূরে রাখার জন্যেই এটা একটা চালাকি।”
“তাই ওঁর ঘরে আজ হানা দিয়েছিলেন?”
“অনেকটা তাই, আমি দেখতে এসেছিলাম বাক্সের সঙ্কেত ভেদ করে উনি কী পেয়েছেন।”
“তালা ভাঙলেন কেন?”
“সুজন নেই দেখে মাথায় বদ মতলব খেলে গেল। ভাবলাম সঙ্কেত ভেদ করে কোথাও কিছু লিখে রেখেছে কি না।”
“কিছু পেলেন?”
“না”
“সঙ্কেত ভেদ করেও লাভ নেই, বাক্সটা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ওটা সুজনের হেফাজত থেকে চুরি গেছে।”
পরঞ্জয় একটু হেসে বললেন, “চুরি আমিই করিয়েছি।”
“বলেন কী ?”
“হ্যাঁ।”
জঙ্গলে যারা কাঠ বা পাতা আনতে যায় তাদের সঙ্গে আমার খুব ভাব। তাদের দিয়েই কাজটা করিয়েছি।”
“তা হলে কি বাক্সটা আপনার কাছে?”
“অবশ্যই, ওটা আমি মোটা প্লাস্টিকে জড়িয়ে মাটিতে পুঁতে রেখেছি।”
“সেটাই যে এখন দরকার ”
“তা হলে চলো, বের করে দিচ্ছি।
ওয়ারিশান যখন পাওয়া গেছে তখন ও বস্তু রেখে আমার লাভ কী? মহেন্দ্র কিছু মনে কোরো না, আগে জানলে আমি লোভ করতাম না।”
মহেন্দ্র বললেন, “আমি কিছু মনে করিনি, তবে এ ব্যাপারে আপনার সাহায্য পেলে খুশি হব।”
“নিশ্চয়ই, সুজনবাবু লোকটি খুব সুবিধের নন। যদিও খুবই উচ্চশিক্ষিত বলে শুনি, কিন্তু মতলবটা মোটেই ভাল নয়। চলো, একটু তাড়াতাড়ি যাই, নইলে অঘটন ঘটতে পারে।”
পবনকুমার বললেন, “হা, সেইটেই ভয়, সুজনবাবু পিস্তল নিয়ে গেছেন।”
তিনজনে যথাসাধ্য দ্রুতবেগে হাঁটা দিলেন।
পরঞ্জয়, পবনকুমার আর মহেন্দ্রর রওনা হতে একটু দেরি হল, কারণ পরঞ্জয়ের জঙ্গলের আস্তানা অনেকটা দূর।পায়ে-হাঁটা পথ নয়। পরঞ্জয় একটা ঘোড়ায় চেপে এসেছেন, আরও দুটো ঘোড়া রাজবাড়ির আস্তাবল থেকে জোগাড় করতে হল, কপাল ভালই, আস্তাবলে রাজবাড়ির শেষ দুটো ঘোড়াই অবশিষ্ট আছে। মহেন্দ্র মাঝে-মাঝে চড়েন।
গোটাপাঁচেক গ্রাম পেরিয়ে প্রায় বারো মাইল দূরবতী জঙ্গলে পৌঁছতে বেশ সময় লেগে গেল।
জঙ্গলের পথে ঢোকার মুখে পরঞ্জয় হুঁশিয়ার করে দিলেন, “ওহে, এরাস্তা খুব অন্ধকার, মাথার ওপর মোটা ডাল, লতাপাতা আছে। মাথা নিচু করে আস্তে-আস্তে এসো। ”
“জঙ্গলটা বাস্তবিকই বেশ ঘন আর জম্পেশ।”
পবনকুমার বললেন, “একসময়ে এসব জঙ্গলে আমার আস্তানা ছিল। সব চিনি।
পরঞ্জয় বললেন, “তা বটে। তুমি যে একসময়ে রাজদ্রোহী ছিলে তা ভুলেই গিয়েছিলাম।”
“ডাকাতিও করতে হত। সে একটা দিনই গেছে।”
আগু-পিছু তিনজন সাবধানে ঘোড়া চালাতে লাগলেন। পরঞ্জয়ের বেশ শক্তিশালী টর্চবাতি থাকায় তেমন অসুবিধে হল না।
জঙ্গলের মধ্যে মাইলখানেক এগনোর পর পরঞ্জয়ের তাঁবু দেখা গেল। মিলিটারির ধরনের খাঁকি রঙের মজবুত তাঁবু। তলায় মাটি চেছে লেপেপুছে বেশ তকতকে করা হয়েছে, ডবল তাঁবুর ভেতরে ক্যাম্পখাট আর বসবাস করার জন্য অত্যাবশ্যক জিনিসপত্র রয়েছে।
“মহেন্দ্র জিজ্ঞেস করলেন, “এভাবে কষ্ট করে থাকেন বুঝি?”
“কষ্ট! কষ্ট কিসের? চিরকাল বনজঙ্গল ভালবাসি। এখানে থাকলে মনটা পবিত্র থাকে। খুব ভাল আছি হে।”
কিন্তু বিপদআপদ! সাপখোপ বা পোকামাকড়ের উৎপাতও তো আছে।”
“তা আছে। খুবই আছে। কিন্তু জঙ্গলে বসত করলে ধীরে ধীরে একটা ষষ্ঠ ইন্দ্ৰিয় তৈরি হয়ে যায়। তাঁবুতে যদি সাপ ঢোকে তবে গভীর ঘুমের মধ্যেও আমি ঠিক টের পাব।”
“পেয়ে কী করবেন? সাপটকে মারবেন?”
“পাগ ! অন্ধকারে, ঘুমচোখে সাপ মারার চেষ্টা করা আত্মহত্যার সামিল। তখন নড়াচড়া বন্ধ করে চুপটি করে শুয়ে থাকব। সাপ গা বেয়ে উঠলেও অকারণে কামড়াবে না।”
“আপনার সাহস আছে।”
“সাহস বলো সাহস, কৌশল বলো কৌশল ।”
“জিনিসপত্র এভাবে ফেলে রেখে যান, চুরি হয় না ?”
“না হে, পাহারাদার আছে।
“কোথায় পাহারাদার? কাউকে তো দেখছি না “দেখবে?” বলে হেসে পরঞ্জয় হঠাৎ হাঁক মারলেন, “টুপসা ।”
ডাকার সঙ্গে-সঙ্গেই একজন বেঁটেখাটো মাঝবয়সী লোকের আবির্ভাব ঘটল তাঁবুর দরজায়। লম্ফের ম্লান আলোয় যতদূর বোঝা গেল যে আদিবাসী মানুষ।
পরঞ্জয় বললেন, “আমি সঙ্গে আছি দেখে সামনে আসেনি। নইলে এতক্ষণে তোমাদের ওপর চড়াও হত। “এ কি আপনার কাছেই থাকে?”
“না। জঙ্গলের পাশেই ওদের গ্রাম। খোঁজখবর নেয়, নজরে রাখে, এই পর্যন্ত। আমিও ওদের দায়ে দফায় দেখি, অসুখ হলে হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিই।”
পরঞ্জয় একটা পেট্রোম্যাক্স জ্বাললেন, তারপর একটা শাবল বের করে বললেন, “চলো, আগে বাক্সটা তুলি।”
টুপকা পেট্রোম্যাক্সটা নিয়ে আগে-আগে চলল। তাঁবুর পেছন দিকে একটা বড় অশ্বখ গাছের তলায় পরঞ্জয় শাবল চালিয়ে গর্ত খুঁড়লেন। তারপর বাক্সটা বের করে মহেন্দ্রর হাতে দিয়ে বললো, “খুলে দেখে নাও, কড়ি আর পয়সা আছে কি না ।”
মহেন্দ্র বাক্স খুলে দেখলেন, সবই ঠিক আছে। সবাইফের তাঁবুতে ফিরে এলেন। পরঞ্জয় বললেন, “সাতপয়সার হাটে যাওয়ার অর্ধেক পথ আমরা চলেই এসেছি। আরও দশ-বারো মাইল পথ, রওনা হওয়ার আগে একটু কফি খেয়ে নিই এসো, জঙ্গলে তোমাদের আর কী আপ্যায়ন করতে পারি বলো। “</div>
মহেন্দ্র বললেন, “আপ্যায়নের দরকার নেই, কফি হলেই চলবে।”
পরঞ্জয় বললেন, “সঙ্গে বন্দুক-পিস্তল নিতে হবে নাকি?”
পবনকুমার বললেন, “একটা পিস্তল সঙ্গে থাক। তবে মনে হয় না ওসবের দরকার হবে। ভয় দেখানোর জন্য কাজে লাগতে পারে।”
আরও আধঘণ্টা বাদে তিনজন ঘোড়ায় চেপে রওনা হয়ে পড়লেন।
মহেন্দ্র পরঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করলেন, “শূলপাণি এখন কোথায় তা কি জানেন?”
“না। শূলপাণিকেও কোথাও সরিয়ে রাখা হয়েছে।”
“কেন বলুন তো!”
“শূলপাণিকে তোমরা পাগল বলে জানো। পাগল না হলেও তার মাথায় ছিট আছে। কিন্তু বুদ্ধি বা মেধা তার বড় কম নেই। সে বুঝেছিল, এই বাক্সটা একটা রহস্যময় জিনিস।”
“বাক্সটা আমাদের বাড়ি থেকে চুরি যায়।”
“সেটা আমার জানা ছিল না।”
“আমি ভাবছি, বাক্সটার কথা সরলাবুড়ি কি করে জানল। আর চুরিই বা করাল কেন?”<
সরলাবুড়ি যে রাজবাড়ি থেকেই ওটা চুরি করিয়েছিল এমন নাও হতে পারে। হয়তো তোমাদের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়ার পর সরলাবুড়ি ওটার সন্ধান পায় এবং চোরের ওপর বাটপাড়ি করায়।”
“হ্যাঁ, সবই সম্ভব। তবে বাক্সটার কথা জানা থাকলেও ওটা যে একটা সঙ্কেত, তা আমার জানা ছিল না, খুব সম্প্রতি আমার দাদুর কিন্তু পুরনো হাতের লেখা কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে বাক্সটার ব্যাপারে জানতে পারি। ততদিনে অবশ্য বাক্স চুরি হয়ে গিয়েছিল।”
পবনকুমার বললেন, “পরঞ্জয়বাবু, কিছু টাকা-পয়সা পাওয়া গেলে মহেন্দ্র মানুষের কাজে তা খরচ করবে।”
“খুব ভাল।”
মাঝরাত পেরিয়ে তাঁরা সাতপয়সার হাট নামে গাঁয়ে পৌঁছলেন। গ্রাম নিঃকুম। শুধু কয়েকটা কুকুর তাঁদের দেখে ঘেউ-ঘেউ করতে লাগল।
পরঞ্জয় বললেন, “সাতকড়ির বাড়িটা কোন দিকে?”
পবনকুমার বললেন, “গাঁয়ের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য বাড়িটাই তার হওয়ার কথা, চলুন, একটু ঘুরে দেখি।”
বেশি খুঁজতে হল না। গাঁয়ের এক প্রান্তে বেশ বড় পাঁচলঘেরা একটা দোতলা বাড়ি দেখা গেল। ফটকে মোটা তালা ঝুলছে। ফটকের ভেতরে দারোয়ানের ঘরে দারোয়ানও আছে বলে মনে হল। তবে সে হয়তো ঘুমোচ্ছে।
পরঞ্জয় বললেন, “এবার ?”
মহেন্দ্র বললেন, “আমাদের একটু আড়ালে অপেক্ষা করতে হবে।”
“আড়ালে কেন ?”
“কারণ, সুজনবাবু এবং নিতাই পালও এখন এ-গাঁয়ে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে। তাঁদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়াটা আমি এড়াতে চাই।”
“তা বটে ”
পবনকুমার বললেন, “চণ্ডীমণ্ডপটা পেরিয়ে এলাম। চলুন, সেখানেই ফিরে গিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিই। সকাল হোক তারপর দেখা যাবে।”
“সেটাই ভাল ”
চণ্ডীমণ্ডপটা ফাঁকা হাঁ-হাঁ করছে। বাঁধানো চাতালে তিনজন বসে জিরোতে লাগলেন। ঘোড়াগুলো ছাড়া পেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোতে লাগল।
পরঞ্জয় হঠাৎ বললেন, “আচ্ছা, ওরা তো সোজা পথে গুপ্তধন উদ্ধার করতে পারবে না। যদি ওরা আজ রাতেই ও-বাড়িতে ঢুকে হামলা করে?”
পবনকুমার সোজা হয়ে বসে বললেন, “তাই তো?