হরিপুরের হরেক কান্ড –বিংশ তম পর্ব – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

গল্পের একবিংশ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সব শুনে সুজনবাবু একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন, “সাতপয়সার হাট! গগনচাঁদের হাটই সাতপয়সার হাট ! খবর ঠিক তো !”

পাগলু বলল, “যে আজ্ঞে। দিনুগুণ্ডা এদের দুজনকে বলেছে।”

“তার কথায় বিশ্বাস কী ?”

“আজ্ঞে সেটা যে দিনুর মামার বাড়ি। দিনুর মামাই হল সাতকড়ি।”

“বটে!”

“যে আজ্ঞে। তার সাতানব্বই বছর বয়স ।”

“তা হলে তো সবই মিলে গেছে দেখছি।”

“আজ্ঞে । এখন বাক্সটা নিয়েই সমস্যা ।”

“হম !”

সুজনবাবু একটু ভাবিত হলেন, ঘরের মধ্যেই কিছুক্ষণ পায়চারি করে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, “বাক্সট যারা চুরি করেছে তারা যদি সাত পয়সার হাট আর সাতকড়ির সন্ধান পেয়ে যায়, তা হলেই হয়ে গেল।”

জগা হঠাৎ বলল, “অভয় দেন তো একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”

“কী কথা ?

“বাক্সটা আসলে কার?

“জানি না, অনেকবার হাত বদল হয়ে আমার হাতে এসেছিল।”

জগা একটু গম্ভীর হয়ে বলল, “আজ্ঞে, সঠিক ওয়ারিশটাকে সেটা জানা দরকার।

“কেন বলো তো !”

জগা বলল, “আজ্ঞে, আমরা তো দাগি চোর, আপনারা তো তা নন। বাক্সটা নিয়ে ভদ্রলোকেরা যা করছেন তাতে বড় ঘেন্না ধরে গেল মশাই। চোরে আর ভদ্রলোকে তফাত রইল না দেখছি।”

সুজনবাবু একথা শুনে একটু হাসলেন, তারপর ঠাণ্ডা গলাতেই বললেন, “কথাটা একেবারে খারাপ বলোনি। বাক্সটা কার তা আমাদের ভেবে দেখা উচিত ছিল। যতদূর শুনেছি, বাক্সটা বার-বার এর-ওর কাছ থেকে চুরি হয়েছে বা চুরি করানো হয়েছে। ওয়ারিশও এখন খুঁজে পাওয়া যাবে কি না তা বলা কঠিন৷”

জগা অভিমানী গলায় বলে “খুঁজলে তো পাবেন! কেউ তো ভাল করে খোঁজই করল না।”

সুজনবাবু একটু থমকে গেলেও ভালমানুষের মতো বললেন, “কিন্তু এখন সেসব ভেবে লাভ নেই। এখন কাজ হল রহস্যটা ভেদ করা। এবং তা থেকে যদি কিছু টাকাকড়ি পাওয়া যায় তবে তা সৎ কাজে লাগানো।”

জগা ফস করে উঠল, “সৎ কাজটা কীরকম?”

সুজনবাবু এবারও একটু থতমত খেয়ে বললেন, “আমার একটা পরিকল্পনা হল—একটা ভাল গবেষণাগার তৈরি করা

“তা গাঁয়ের লোকের কী উপকার হবে সুজনবাবু?”

“গবেষণায় সকলেরই উপকার।”

“আমরা গরিব চোর-ছাঁচোড় মানুষ। আমাদের কাছে পেটের চিন্তার বড় চিন্তা নেই। গবেষণা-টবেষণা আমরা বুঝি না। আমাদের অর্ধেক হিস্যা দেবেন বলেছেন তো!”

“হ্যা বলেছি।”

“এখন বলুন তো বাবু আমরা এই তিনজনে যদি টাকাপয়সা বা গুপ্তধন উদ্ধার করি, তা হলে আপনাকে অর্ধেক বখরা দেব কেন? আপনি কিসের হিস্যাদার?

সুজনবাবু এবার চটলেন, ফরসা মুখখানা লাল টকটকে হয়ে গেল। প্রায় কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “তোমার এত বড় সাহস!

জগা হাতজোড় করে বলল, “কিছু মনে করবেন না, এই পাগলুদাদাই আমাদের আপনার কাছে নিয়ে এসেছে, আপনি ভাল পরামর্শ দেবেন বলে, তা পরামর্শ আর কী দিলেন! শুনছি তো, কেবল বখরার কথা আর গবেষণাগার না কী যেন, বলি কাজটা কী করে উদ্ধার হবে তার কথা কিছু বলবেন? চাট্টি খেয়ে আমাদের তো রওনা হতে হবে । রাত হতে চলল, হাতে বিশেষ সময়ও নেই।”</div>

সুজনবাবু রাগে আর উত্তেজনায় প্রথমটা কথাই বলতে পারলেন না কিছুক্ষণ। তারপর নিজেকে অতিকষ্টে সামলে নিয়ে পাগলুর দিকে চেয়ে বললেন, “যদি আমাকে ডিঙিয়ে তোমরা সম্পদ উদ্ধার করে গাপ করো তা হলে তার পরিণতি ভাল হবে না।”

পাগলু কিছু বলার আগেই জগা বলল, “কেন বাবু, আপনি কি আমাদের মারবেন নাকি?

এতক্ষণ রামপ্রসাদ কথা-টথা বলছিল না, এবার হঠাৎ বলে উঠল, “আপ ভি চোর আছেন, হামলোগ ভি চোর আছে, গুসসা করে কী হোবে? মগজমে কোই মতলব আসলে বলিয়ে ফেলুন, আপনার ভি দু-চার পইসা হোবে, হামার ভি দু-চার পইসা হোবে।”

সুজনবাবুকে খুবই চঞ্চল আর অস্থির দেখাচ্ছিল। তিনি ফের কিছুক্ষণ পায়চারি করে বললেন, “তোমরা এখন যাও। আমার ভাবতে কিছুক্ষণ সময় লাগবে। এক ঘণ্টা বাদে এসো।”

তিনজন নিঃশব্দে উঠে বেরিয়ে গেল। সুজনবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনজন অন্ধকারে কিছুদূর হেঁটে এসে একটা গাছতলায় দাঁড়াল।

জগা বলল “পগলুদাদা, সুজনবাবুর সঙ্গে তোমার সম্পর্কটা কী একটু বলবে?

পাগলু হেসে বলল, “ওরে, উনি যে আমার মাসতুতো ভাই।”

“মাসতুতো ভাই?”

“চোরে-চোরে তো তাই সম্পর্ক।”

“তাই বলো, লোকটা কিন্তু সুবিধের নয়।”

“তা আর বলতে, লোক ভাল হলে আমাদের সঙ্গে গুজগুজ ফুসফুস করে?

“তা লোকটা চায় কী?”

“মুফতে রোজগার করতে চায়। ভেবেছিলাম লোকটা কিছু কাজের কথা বলতে পারবে।”

হঠাৎ জগা বলল, “ওই দ্যাখ, সুজনবাবু কোথায় যাচ্ছে!”

বাস্তবিকই দেখা গেল সুজনবাবুর বাড়ির দিক থেকে একটা মোটরবাইক বেরিয়ে ঝড়ের বেগে কোথায় যেন চলে গেল।

“কোথায় যাচ্ছে বলে তো পাগলুদাদা?”

“কী করে বলব? তবে নিতাই পালের সঙ্গে সুজনবাবুর দোস্তি আছে।”

“তা হলে এখানেই চেপে বসে থাকি এসো। সুজনবাবু তো এক ঘণ্টা সময় দিয়েছে।”

“অগত্যা তাই।”

“তারা বসে-বসে নানা কথা কইতে লাগল।”

আধঘণ্টা বাদে দেখা গেল, মোটরবাইকটা ঝড়ের বেগে ফিরে আসছে। সামনে সুজনবাবু পেছনের ক্যারিয়ারের আর একটা লোক ।

বোধহয় নিতাই পালকে নিয়ে এল।

“চলো যাই পাগলুদাদা, দেখি লোকটা কী বলে।”

“চল।”

দরজায় ধাক্কা দেওয়ার বেশ কিছুক্ষণ বাদে দরজা খুললেন সুজনবাবু। গম্ভীর মুখে বললেন, “এখনও এক ঘণ্টা হয়নি। আরও পনেরো মিনিট বাকি আছে।

জগা একগাল হেসে বলল, “আজ্ঞে আমাদের হাতে তো ঘড়ি নেই, তা ছাড়া খিদেও পেয়েছে মশাই।”

সুজনবাবু খুব কড়া চোখে তার দিকে চেয়ে থেকে বললেন, “ঠিক আছে, ভেতরে এসো।”

জগা ভেতরে ঢুকে বলল, “তা মশাই, আপনার মাথায় কোনও মতলব এল, নাকি বুটমুট আমাদের হয়রান করছেন?

সুজনবাবু গিয়ে চেয়ারে বসে বললেন, “আমি চা খাচ্ছিলাম। ইচ্ছে করলে তোমরাও খেতে পারো, চা খুব স্টিমুল্যান্ট।”

“কী আন্ট বললেন?”

“বলকারক জিনিস।”

“শুধু চা? ধুর মশাই আমার যে খিদে পেয়েছে।”

“ওঃ হ্যাঁ, সন্দেশ খাবে?

“খুব খাব মশাই, আমাদের আবার জিজ্ঞেস করতে আছে? দিলেই খাই।”

সুজনবাবু একটা সন্দেশের বাক্স ভেতরের ঘর থেকে নিয়ে এলেন, বললেন, “খাও, অনেক আছে।”

তিন জনেই টপটপ করে কয়েকটা খেয়ে নিল।

“আরও খাব মশাই?”

“খাও খাও, কোনও বাধা নেই।”

বাক্স একটু বাদেই ফাঁকা হয়ে গেল। সুজনবাবু বললেন “ওই কুঁজোয় জল আর পাশে গেলাস আছে। জলও খেতে পারো।”

তিনজনেই উঠে গিয়ে জল খেয়ে এল। জগা পেটে হাত বুলিয়ে বলল, “আহা ভুড়ি ঠাণ্ডা না থাকলে মাথাটাও ঠাণ্ডা থাকে না কিনা, আহা, এখন বড় আনন্দ হচ্ছে।”

“হচ্ছে? বেশ বেশ !”

“তা কী ভাবলেন বলুন তো! নাকি বুদ্ধি দেওয়ার জন্য নিতাই পালকে আনতে হল?

“নিতাই পাল ! সে কেন আসবে?”

“এসেছে মশাই, নিজের চোখে দেখেছি।”

সুজনবাবু একটু হেসে বললেন, “তোমার চোখ দেখছি বেশ শার্প।”

হাই তুলে জগা বলল, “যে আজ্ঞে । চোরের চোখ বলে কথা।”

আরও দুজনও হাই তুলল, বড্ড ঘুম পাচ্ছে তিনজনের।

জগা বলল, “মশাই সন্দেশে কি সিদ্ধি-টিদ্ধি কিছু মেশানো ছিল?”

“কেন বলে তো!”

“এত ঘুম পাচ্ছে কেন?”

“ঘুম পেলে ঘুমোও।”

সুজনবাবু একটু হাসলেন।

তিনজনের ঘুমন্ত মাথা পর্যায়ক্ৰমে ঠাই ঠাই করে টেবিলে পড়ল হঠাৎ৷

ঘরের বাইরে পেছনের আগাছার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে জানালার পাল্লার একটু ফাঁক দিয়ে ঘরের ভেতরকার দৃশ্যটা দেখছিল আর-একজন। সুজনবাবু তিনটে চোরকে সন্দেশ খাওয়ালেন এবং তারপরই তিনজন প্রায় একই সঙ্গে সংজ্ঞা হারিয়ে টেবিলে মাথা দিয়ে পড়ে রইল।

সুজনবাবু পেছনে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমন্ত তিনজনের দিকে চেয়ে পরিতৃপ্তির হাসি হাসলেন, তারপর অনুচ্চ গলায় ডাকলেন, “নিতাই!

ভেতরের ঘর থেকে নিতাই বেরিয়ে এল। চোখমুখে কিছুটা যেন আতঙ্কের ভাব, “সুজনবাবু, এরা মরে যায়নি তো!

“আরে না, মরবে কেন? ঘণ্টা কয়েকের জন্য অজ্ঞান হয়ে গেছে মাত্র।”

“বাঁচা গেল।”

“বড্ড জ্বালাচ্ছিল। চোর বটে, কিন্তু বুদ্ধিমান চোর নয়। কাজ পণ্ড করে দিত।”

“কিন্তু কাজটাই বা কী করে হবে? সেই কড়ি আর পয়সা তো চুরি হয়ে গেছে।”

গম্ভীর হয়ে সুজনবাবু বললেন, “হুম, সেটাই ভাবিয়ে তুলল।”

“চোরদের তো আপনি দেখেছেন। চেনা ঠেকেনি?”

“না হে! আচমকা মাথায় মেরে অজ্ঞান করে দিয়েছিল।”

“এরা কি এভাবেই পড়ে থাকবে?”

“না, জ্ঞান ফিরলে গোলমাল করতে পারে। আমার ঘরে এভাবে এদের পড়ে থাকাটাও ভাল দেখাবে না।”

“তা হলে?

“একটু পরিশ্রম করতে হবে।”

“তিনজনকে অন্য কোথাও পাচার করবেন?”

“ঠিক ধরেছ, তবে বেশি দূরে নয়। রাস্তার ওপাশে একটা জংলা জায়গা আছে। ধরাধরি করে সেখানে নিয়ে গিয়ে রেখে আসতে হবে।”

“কিন্তু তাতে কি প্রতিক্রিয়া এড়াতে পারবেন?”

“সে পরে দেখা যাবে। ”

“এরা জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর আপনার ওপর প্রতিশোধ নেবে না তো!”

“তত এলেম এদের নেই। অন্তত পাগলু সেরকম নয়। তবে ওই জগাটা একটু ট্যাটা আছে। আর রামপ্রসাদ এ-গাঁয়ের লোক নয়। কাজেই ওকে নিয়ে চিন্তা নেই।”

“তা হলে চলুন, কাজটা সেরেই ফেলা যাক। দেরি করলে কে কখন এসে পড়বে।”

এরপর দুজন ধরাধরি করে একে-একে তিনজনকে নিয়ে আগাছার জঙ্গলে ফেলে এল। তারপর দু’জনে মুখোমুখি বসল।

নিতাই বলল, “এরপর প্ল্যানটা কী?

“এটা তো জানা গেছে যে, গগনচাঁদের হাটই সাতপয়সার হাট। আর সাতকড়ি নামে একশো বছরের কাছাকাছি বয়সি একটা লোকও সেখানে থাকে। সুতরাং আমাদের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে।”

“কাজ কোনদিকে এগোল তা তো বুঝতে পারছি না।”

“কেন বলো তো !”

“গোটাটাই তো অন্ধকারে ঢ়িল ছোঁড়া।”

সুজনবাবু গম্ভীর হয়ে বললেন, “হয়তো তাই। কিন্তু কে বলতে পারে?

“সুজনবাবু, সামান্য একটা অনুমানের ওপর নির্ভর করে শূলপাণিকে সরিয়ে ফেলা বা পরঞ্জয়বাবুকে অন্যত্র নিয়ে রাখাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যায়নি কি?

সুজন থমথমে মুখে বলে, “তুমি জানো না, শূলপাণির মুখচোখ দেখে আমার মনে হয়েছিল, সেই ওই বাক্সের রহস্য প্রায় ভেদ করে ফেলেছে। পাগল ছাগল যাই হোক, শূলপাণিকে ছেড়ে রাখা বিপজ্জনক ছিল, আর পরঞ্জয় শূলপাণির সঙ্গে মাখামাখি শুরু করায় ব্যাপারটা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।”

“বিপদ এখনও আছে। শূলপাণি ছাড়া পেয়ে গাঁয়ের লোককে ঘটনাটা বললে কী হবে কে জানে!

“ভয়ের কিছু নেই। শূলপাণিকে গুম করেছে বাইরের ভাড়াটে লোক। আমরা যে তার পেছনে আছি, তা তো সে জানে না।”

“আপনাকে ধরা যাবে না ঠিকই, কিন্তু আমাকে তো শূলপাণি দেখেছে।”

“তোমারও ভয় নেই, তুমি অন্য গাঁয়ে থাকো, তোমাকে কেউ কিছু করবে না। তা ছাড়া শূলপাণিকে তো আমরা খারাপ রাখিনি। সে খাচ্ছে দাচ্ছে, ঘুমোচ্ছে, আরামে আছে। শুধু ঘরে তালা দিয়ে রাখা হয় এই যা।”

“পরঞ্জয়বাবু কি কিছু সন্দেহ করবেন না?”

“পরঞ্জয়বাবুর কেসটা আলাদা, তাঁর সংসারে শান্তি ছিল না বলে তাঁকে আমি অজ্ঞাতবাসের পরামর্শ দিই। তিনি তো খুশি মনেই প্রস্তাবটা মেনে নিয়েছেন। আছেনও ভাল। জঙ্গলের মধ্যে ক্যাম্প করে দিব্যি শিকার করছেন, নিজেই রান্না করে খাচ্ছেন। দেখাশোনা করার জন্য লোকও রাখা হয়েছে একজন।”

নিতাই বলল, “হ্যাঁ, এদের পেছনে আপনার টাকা আর পরিশ্রম বড় কম যায়নি। কিন্তু শেষ অবধি কী লাভ হবে সেটাই ভাববার বিষয়।”

“দ্যাখ নিতাই, জীবনটা এরকমই, সবসময়ে লাভ হবে এমন কথা নেই, ঝুঁকি নিতেই হয়। টাকা খরচ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু যদি আন্দাজটা লেগে যায় তা হলে এই খরচটা সুদে-আসলে উশুল হয়ে যাবে।”

“কিন্তু সুজনবাবু, এখন প্রশ্ন হল, ওই সাতটা পয়সা আর সাতটা কড়ি ছাড়া শেষ রক্ষা হবে কি না।

“দেখা যাক। আজ রাতেই আমাদের রওনা হতে হবে। কাল ভোরেই আমাদের কাজ।”

“ঠিক আছে। আমি তৈরি।”

জানালার বাইরে ঘাপটি মেরে থাকা ছায়ামূর্তির পাশে হঠাৎ আর একটা ছায়ামূর্তি এসে দাঁড়াল।

প্রথম ছায়ামূর্তি দ্বিতীয়জনের দিকে চেয়ে ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ থাকতে ইশারা করল।

ভেতরে সুজনবাবু তাঁর রিভলভারে গুলি ভরলেন, একখানা বাঁদুরে টুপিতে মুখমাথা প্রায় ঢেকে ফেললেন, হাতে দস্তানা গলালেন।

নিতাই পালও সোয়েটার পরল।

“তা হলে দুর্গা’ বলে বেরিয়ে পড়া যাক সুজনবাবু।”

“হ্যাঁ চলো।”

দুজনে বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ল। প্রথম ছায়ামূর্তি দ্বিতীয়জনের দিকে চেয়ে বলল, “কিছু বুঝলে?

“আন্দাজ করছি।”

“নাটের গুরু হচ্ছে ওই সুজনবাবু।”

দ্বিতীয় ছায়ামূর্তি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “সে সন্দেহও ছিল।”

পবনকুমার মৃদু স্বরে বলল, “তোমার বাড়ি থেকে কাঠের বাক্সটা কবে চুরি যায়?

“অনেকদিন আগে ”

“বাক্সের রহস্য কিছু জানো?”

“খুব পরিস্কারভাবে জানি না, তবে পিতামহের আমলের কোনও ঘটনা। মনে হয় কোনও একজন বিশেষ খাতকের কাছে আমাদের প্রভূত পরিমাণ পাওনা আছে। দাদু কোনও কারণে সরাসরি পাওনাগণ্ডার দলিল না করে এরকম একটা অদ্ভুত সাঙ্কেতিক ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন । হয়তো রহস্য ভালবাসতেন বলেই। ”

“তার মানে বাক্স যে পাবে এবং রহস্য যে ভেদ করতে পারবে পাওনাগণ্ডা সে-ই আদায় করতে পারবে?

“হ্যাঁ।”

“আর না পারলে পাওনাগণ্ডা খাতকের দখলেই থেকে যাবে?”

“হ্যাঁ”

“ভাল চাল দেখছি।”

“হ্যাঁ।

আমার দাদু এসব ছোটখাটো রহস্য করতে ভালবাসতেন।”

“তার মানে তুমি ন্যায্য অধিকারী হয়েও পাওনাগণ্ডা আদায় করতে পারবে না?

“তাই তো দাঁড়াচ্ছে।”

পবনকুমার একটু ভেবে বলল, “সুজনবাবু যদিও রহস্য ভেদ করতে পেরেছেন কিন্তু বাক্সটা ওঁর কাছে নেই। সুতরাং উনি সুবিধে করতে পারবেন না।”

“না।”

“কিন্তু সঙ্গে রিভলভার নিয়েছেন, খুন-খারাপ করবেন না তো!”

“লোকটাকে আমি সামান্যই চিনি। কীভাবে বলব ?”

“উনি একটু গুণ্ডাপ্রকৃতির মানুষ। বয়স হওয়ায় গায়ের জোর কমলেও বুদ্ধি দিয়ে গুণ্ডামি করতে ছাড়েন না।”

“তাই তো দেখছি।”

পবনকুমার ভু কুঁচকে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “তোমাদের এখন পড়তি অবস্থা। পাওনাগণ্ডা আদায় হলে তোমার সুবিধে হত।”

“হ্যাঁ। প্রজাপালক হিসেবে এ-বংশের নাম ছিল, তুমি তো জানো। কিছু টাকা-পয়সা হাতে এলে সেই কাজটা করা যেত।”

“জানি, কিন্তু সুজনবাবুর সঙ্গে এঁটে ওঠা শক্ত। লোকটা মরিয়া হয়ে নেমেছে। শূলপাণি আর পরঞ্জয়বাবুকে গুম করার মতো কাজ যে করতে পারে সে সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয়।”

“বুঝেছি।”

“কিন্তু আমাদের একটা ভরসা আছে। বাক্সটা এখনও সুজনের হাতে নেই।”

“বাক্সটা কার কাছে আছে পবন?”

“সেটা জানলে তো কাজ হয়েই যেত।”

মহেন্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি আশা ছেড়েই দিয়েছি।”

“তা কেন ছাড়বে? ঠাণ্ডা মাথায় এসো দুজনেই একটু ভাবি ।”

“তা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু ঘটনা যেমন দ্রুত এগোচ্ছে তাতে—”

“আরে, অত ভেঙে পোড়ো না । দেখাই যাক না।

গল্পের একবিংশ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!