গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
ঐটার নীচে তিন হাত খুড়বি। খুড়লেই দেখবি সোনার মোহর ভর্তি একটা কলস। ওই দিয়াই সবকিছু হইবো। কিন্তু খবরদার! .. বিয়া করতে চাইলেই শুধু কলস নিবি। যদি বুঝি ফাঁকি দিসস, তুইও শেষ, তোর মায়েও শেষ!”
হা কইরা শুনতাছিল সব দুলি, একটু পর তাব্ধা ভাইঙ্গা কয়, “আপনে কে? আপনে সামনে আসেন না ক্যান? .. আপনেরে না দেইখা বিয়া বমু ক্যান?”
“এহ! বাইল্লাচুলীর শখ কত! বিয়ার দিনই দেখতে পাবি আমারে, তার আগে না। রাজী থাকলে ক, তোর মায়রে জানা।
বাড়িতে চইলা আসে বুড়ির মাইয়া। কইবো না কইবো না কইরা একসময় কয় মায়রে সবকিছু। মোহরের কথায় বুড়ির চোখ চকচক কইরা উঠে। বিশ্বাস করতে চায় না। তবুও পরদিন যখন মাইয়া বনের পথ ধরে, বুড়ি ছাগলের দড়ি থিকা খুটা ছুটাইতে ছুটাইতে কয়, “চল তোরে মা.. দেখি ব্যাপারটা।
মা’য়ে ঝি’য়ে বনের পথ ধইরা ভিতরে ঢুকে। মাইয়া দূর থিকা দেখায় মা’রে বটগাছটা। কাছে আইতেই হিসহিস কইরা উঠে বটগাছের খোড়ল, কয়,
“বুড়ি আইছস? তোর মাইয়ার লগে আমারে দিয়া দিবি? অনেক সোনা পাইবি। দিবি?”
“বর না দেইখা মাইয়া দিমু ক্যান?”
“এহ! তোর মাইয়ারে বিয়া করতে তো রাজপুত্তুর আইবো পঙ্খীরাজে কইরা! বিয়া দিবি নাকি ক, দেখাদেখি সব পরে হইবো।
বুড়ির কেমন ভয় লাগে, গলার স্বর শুইনা কেমন ঘোর ঘোর লাগে। কিন্তু লোভ ছাড়ে না বুড়িরে,
“কি করতে হইবো কও”, আস্তে আস্তে কয় বুড়ি।
“সোনার কলস তুলবি যেমন কইসি ঐ মান্দার গাছের তল থিকা। তিন মাসের মধ্যে মধ্যে ওই সোনা দিয়া বাড়িঘর ঠিক করবি, আয়োজন করবি বিয়ার। বিয়ার পর কয়দিন আমি তোগো বাড়িতেই থাকুম। আর শুন, বিয়ার দিন কিন্তু আমি, তোর মাইয়া, তুই আর পুরুতঠাকুর ছাড়া কেউ থাকবো না। খবরদার, উল্টাপাল্টা যাতে না হয়। ..আর একটা কথা, উঠানের মাঝখানে একটা আইক্কাওয়ালা বাঁশ গাইড়া রাখিস। সন্ধ্যা হইলেই আমি আইসা পড়ুম।
বুড়ি দুলির হাত ধইরা চইলা আসে। ঠান্ডা মুখে সোজা হাঁটতে থাকে উত্তরমুখী। মাইয়া খালি মার মুখের দিকে চায়। আর একশো কদম যাওয়ার পর ঠিক-ঠিকই দেখে একটা ইয়া মোটা কাঁটাওয়ালা মান্দার গাছ। গা ছমছম করে দুলির। বুড়ি কোন কথা না কইয়া মান্দার গাছের তলায় আসে আর বইসা ছাগলের খুটা দিয়া খুড়তে শুরু করে। খুড়তে খুড়তেই কইতে থাকে, “চিন্তা করিস না মা, সব ঠিক হইয়া যাইবো। এইটা ভগবানের আশীর্বাদ, নাইলে তোর বিয়া দিয়া যাইতে পারুম কোনদিন ভাবতে পারছি? ..চিন্তা করিস না।
হঠাৎ কীসে জানি বাইঝা ঠং কইরা উঠে বুড়ির হাতের খুটায়।
তড়িঘড়ি কইরা বুড়ি মাটি সরায় আর সত্য সত্যই একটা কলসের মত বাইরাইয়া আসে। কলসের ঢাকনা সড়ায় বুড়ি। চক্ষু ছানাবড়া হইয়া যায় তার। প্রথমে কিছুক্ষণ আক্কেল গুড়ুম হইয়া বইসা থাকে মায়ে ঝিয়ে, মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। এত সোনা জীবনেও দেখি নাই দুইজনের কেউ। আনন্দে চিল্লানি শুরু করে বুড়ি, দুলিরে ধইরা চুমা খায়, ভগবানরে ডাকে!