গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সকলে কোনমতে কলমা পড়ার চেষ্টা করলো। নিজেরা বলতে লাগলো এ ধরনের সিধান্ত — নেওয়াটা ঠিক হয়নি। ওরা বাড়ীর ফেরার সাহস ও হারিয়ে ফেললো। রাত গড়াতে লাগলো। ওদের ধারণা ভোরে ফজরের আজান পড়লে ভূত চলে যাবে তখনই ওরা বাড়ী ফিরবে। ভোর হতে এখনো অনেক বাকী। আবারও আগুন। এবার আগুনের কুন্ডলী পুকুরের মাঝ খান থেকে নয়, বিরান ভিটা থেকে। আক্তার মনির আর মতিনের দাঁত লাগার মতো অবস্থা।
আবার সব নিঃ¯—ব্ধ। ওরাও চুপচাপ কিন্তু ভয়ে আরষ্ঠ। বিরান ভিটার পাশে ফাকা জমি। জমিতে পাতা পানি। জমির আশে পাশে ছোট ছোট হিজল গাছ। গাছগুলিকে মনে হচ্ছে কারা যেন বসে আছে। ওদের বসে থাকার জায়গা থেকে জমির দুরত্ব আনুমানিক ২০/৩০ গজ মাত্র।
এবারের ঘটনা আরো ভয়াবহ। চার দিকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দে ও কবরস্থান থেকে ভেসে আসা শিয়ালের ডাকে ভারী হয়ে আসছিল পরিবেশ। এরই মধ্যে জমির পাতা পানিতে কারো হাটার চপ্… চপ্… চপ্… শব্দ কানে এলো। শব্দ ক্রমশ এগুচেছ। ওদের শরীরের লোম ভয়ে খাড়া হয়ে গেল। ওরা বুঝতে পারলো সারাজীবন ভূতের গল্প শুনলেও আজ সত্যিকারের ভূতের কবলে পড়েছে। ওরা ভাবছে হয়তো আজ আর প্রাণ নিয়ে ঘরে ফেরা হবে না।
আসন্ন মহা বিপদের জন্য মনে মনে প্রস্তুত হতে লাগলো। এরই মধ্যে নাকা নাকা কন্ঠে শব্দ শুনলো। মাঁছ ক্ষুদে ——- মাঁছ খাঁমো। এবার জীবন বাঁচানোর জন্য এক সঙ্গে ওরা বাড়ীর দিকে উঠি পরি করতে করতে দৌড়ে কোন মতে বাড়ী পৌঁছে সেই রাতের জন্য প্রাণে বাঁচলো।
পরের দিনের ঘটনাঃ- পরের দিন সন্ধ্যায় এক বাড়ীতে আক্তার বসে আছে। কেরোসিনের চুলায় চা বানাচ্ছে বাড়ীর একজন। কেরোসিনের চুলার আগুনের দিকে দৃষ্টি যেতেই আক্তার ভূত, ভূত, ভূত বলে আজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। জ্ঞান ফেরার পর আক্তার উপস্থিত সকলের কাছে গত রাতের ভৌতিক ঘটনার বি¯—রিত বর্ণনা দিল। এবার ভৌতিক ঘটনাটি গ্রাম ভরে ছড়িয়ে পড়লো। মুর“ব্বীদের পরামর্শক্রমে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে ফকির (ওঝা) আনা হলো।
ফকিরের বক্তব্যঃ- ওদেরতো আসলটায় পাইছিলো। অল্পের জন্য বাইচা গেছে। ধারানী দিতে অইবো। ফকির গলায় ধারণ করতে তাবিজ দিয়ে চলে গেল । তাতে অবস্থায় উন্নতি না হওয়ায় বরং অবনতির দিকে ধাবিত হওয়ায় আমি চিন্তিত হয়ে পরলাম। কারণ ঐ রাতের ভূতের ভূমিকায় ছিলাম স্বয়ং আমি নিজে। কিন্তু কেন ? আসলে এ ধরনের যে কোন আয়োজনে সব সময় আমি দলে থাকতামই। যে কোন কারণে বা ভুলে ঐ দিনের মাছ ধরার আয়োজনে ওরা আমাকে ওদের সঙ্গে নিতে ভুলে গিয়েছিল। আর তাই আমি প্রতিশোধ নিতে এই ভূত ভূত খেলার দুঃসাহসিক অভিযানে নেমেছিলাম। ঐ রাতে আমি ছিলাম ভূতের ভূমিকায়- যখন ওদের বলেও বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না তখন ওদের সকলকে স্পটে নিয়ে কাদায় আমার পায়ের ছাপ মিলিয়ে দেখিয়ে ও সেভলনের শিশি থেকে মুখে কেরোসিন নিয়ে তা জ্বলন্ত — লাইটারের সামনে ফুৎকার দিয়ে আগুনের কুন্ডলী বানিয়ে দেখিয়ে ঐ রাতের ভৌতিক ঘটনার আস্ত —রালের কাহিনী শেষ পর্যন্ত — বুঝাতে সমস্যা হই। এটা ওদের ও আমার জীবনের স্মৃতিপটে একটি স্মরণীয় ঘটনা।
গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।