গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
অদ্ভুত লোকটি বললেন, আপনি তো সিগারেট খান না, তবে কেন কিনলেন? সিপন মনে মনে বললেন, আমি যে সিগারেট খাই না, তা লোকটি কীভাবে জানল! সন্দেহ আরও বেড়ে গেল। তবুও যেতে হবে নিমপুর, সন্দেহ করে কী লাভ। দু’জন উঠল, গাড়ি চলতে লাগল রঘুনাথপুর।…
দাদার কথার মধ্যে ছেদ টেনে ছোট নাতি বলল, দাদা দাদা সিপনকে চেনো?
—গল্প বলছি, গল্প শোনো। কথা বললে গল্প বলব না।
—ঠিক আছে আর কথা বলব না।
—তা হলে বলছি, শোন।
ভবোচন্দ্র ভোলা মারা গেছে তিন মাস হল। জীবিত অবস্থায় তাকে বহু বার দেখেছে সিপন। ভাল মন্দ কথাও বলেছে। তার যত কুর্কম সম্পর্কে সব জানে সিপন। যেমন— কটু কথা বলে ঝগড়া লাগিয়ে দেওয়া। বিচারের মধ্যমণি সেজে ওলটপালট বিচার করা। হামবড়া ভাব নিয়ে গরীবদের শাসাতে থাকা, দখল করে নেওয়া গরীবের সম্পদ। গরীবকে ঠকানো… এমন কোনো কাজ নেই যা সে করেনি।
সিপনের মন ওলটপালট করতে লাগল। উল্টো সময় উল্টো কথা মনে পড়তে লাগল। ভবোচন্দ্র ভোলার কথা ভাবতে ভাবতেই, পাশের লোকটির দিকে তাকাল। দেখতে পেল তার চোখে কোনো সানগ্লাস নেই। লোকটির চেহারা ঠিক ভবোচন্দ্র ভোলার মতো। চমকে উঠল সিপন।
গাড়ি চলছে— কোনো সাড়া শব্দ নেই।
ভয় ভয় অনুভব করছে সিপন তবুও মনে সাহস রাখে।
দেখতে দেখতে গাড়ি চলে এলো রঘুনাথপুর। দু’জন গাড়ি থেকে নামল। টাকা মিটিয়ে দিতেই গাড়ি চলে গেল।
ভীরু-মনে সিপন লোকটির দিকে তাকাল। তাকে স্বাভাবিক রূপে দেখতে পেল।
রাত থম থম করছে। সিপনের মনও থমথম করছে। চারদিকে কোনো লোকজন নেই। থম থম রাতে ভয় ভয় খেলা।
এ সময় ভয় পেলে চলবে না। যা করতে হবে, তা হল, মনে সাহস আর বুদ্ধি নিয়ে।
লোকটি বলল, চল আমরা হাঁটতে থাকি।
—আপনি কতদূর যাবেন?
—না, নিমপুর যাব না। রঘুনাথপুর থেকে যাব। ছোট মামার (একটু থেমে) বাড়ি।
—কেন যাবেন না?
—না, যেতে ইচ্ছে করছে না তাই।
—ঠিক আছে, যে পর্যন্ত যাবেন এক সাথেই যাই।
—হ্যাঁ, হাঁটো।
সিপন জানে, ছোট মামার বাড়ি মানে ভূতবাড়ি। মনের ভেতর মন আরও ভয়ে গুটগুট খেলতে লাগল।
গা ছম-ছম পরিবেশ বা ভূতভূতে আবহ যাকে বলে— ভাবতে গেলেই মনে পড়ে গেল ভবোচন্দ্র ভোলার মামার বাড়ি রঘুনাথপুর। সিপন তার বাবার কাছ থেকে জেনে ছিল। ভূত বা খারাপ আত্মা আগুন দেখে ভয়ে পালায়। তাই সিপন ম্যাচ বের করে আগুন জ্বালাতেই, লোকটি তাড়াতাড়ি হাঁটতে লাগল। সিপনের বুঝতে বাকী থাকে না লোকটি আসলে কী। কি আর করা বাড়ি তো যেতেই হবে। সামনে একটা লাঠি দেখতে পায়। উপস্থিত বুদ্ধি মাথায় আসে।
লাঠির মাথায় কাপুড় পেঁচিয়ে মশাল বানাল। আগুন জ্বলতে লাগল, সিপন মশাল হাতে হাঁটতে লাগে। এদিকে পেছন থেকে কে যেন ধুপধাপ শব্দ করতে লাগে। পেছনে তাকিয়ে দেখে কেউ না। ধবধব জোছনা ছড়িয়ে আছে। সিপন ফের হাঁটতে লাগল। ডানে ফটফট আওয়াজ। বামে ঘটঘট আওয়াজ। মশাল হাতে সিপন বাড়ির দিকে এগিয়েই যেতে লাগল। শরীর থেকে ঝরতে লাগল ঘাম আর ঘাম। সামনে নিমপুরের বটগাছ। এই পথ ছাড়া বাড়ি যাওয়ার বিকল্প কোনো পথ নেই। মনে সাহস সঞ্চয় করতে লাগল।
বটগাছের কাছাকাছি যেতেই নিভে গেল মশালের আগুন।
কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে সিপন।
সঙ্গে সঙ্গে হাউমাউ করে উঠল মামাভূত— অঁনেক দিঁন পঁরে তোঁকে পাঁইছি। আঁজ তোঁকে ছাঁড়–ম নাঁ, খাঁমু খাঁমু খাঁমু।
মামাভূত কখনো ভাল মানুষকে খায়নি। উপকার ছাড়া অনিষ্টও করেনি। গা ছমছম করে উঠল, কিছু বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছে সিপন।
তবুও ভয়ে ভয়ে বলল, বাবার অসুখ তার জন্য ঔষধ আনতে গিয়েছিলাম ঢাকা। তাই বাড়ি ফিরতে দেরী হয়েছে। বাকী পথটা ঠিকমতো পার করে বাড়ি গিয়ে বাবাকে ঔষধ দিলেই তো বাবা ভাল হবে।
—আঁমি নাঁ হঁয় ছেঁড়ে দিঁলাম। সাঁমনে ভঁবোচঁন্দ্র ভোঁলা আঁছে নাঁ, তঁখন কীঁ কঁরবি?
—তা তো আমার জানা নেই। শুধু জানি, বাবাকে বাঁচাতে হবে।
—আঁমার মঁনে হঁচ্ছে তুঁইও বাঁচবি নাঁ, তোঁর বাঁবাও বাঁচবে নাঁ। বুঁঝলি!
—আমি মরি মরি, তবু বাবাকে বাঁচাতে হবে।
—তোঁর বাঁবাকে বাঁচাতে হঁবে?
—হ্যাঁ, আমার বাবাকে বাঁচাতে হবে।
নিজের জীবন বিলিয়ে বাবাকে বাঁচানোর কথা বলতেই মামাভূতের মন অনেক নরম হয়ে গেল।
বলল— ঠিঁক আঁছে যাঁ তোঁর বাঁবাকে বাঁচা। তঁবে শোঁন, তোঁর মঁশাল জ্বাঁলিয়ে নেঁ। আঁর নবীর কলেমা পঁড়তে ভুঁলবি নাঁ যেঁন।
সিপন সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে— লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূল উল্লাহ। বলতে বলতে হাঁটতে লাগে। ভবোচন্দ্র ভোলা আর সামনে আসে না। কিছু দূর যেতে না যেতেই কানের কাছে বাঁচতে লাগল, হাঁউ মাঁউ খাঁউ। হাঁউ মাঁউ খাঁউ…। বলতেই বলতেই। অগ্নিমশাল নিভিয়ে দিল, বের করল রক্ত মাখানো দাঁত। ভয়ে সিপন কখন যেন উচ্চ স্বরে বলে ওঠে— লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূল উল্লাহ।
বলেই উঠে বসে পড়ল। বুঝতে পারল এতক্ষণ নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল।
গল্পের ১ম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।