আকালুর অদ্ভুত ক্ষমতা –৩য় পর্ব-মঞ্জু সরকার

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বাপকে উদ্ধার করার জন্য আকালু মাঝেমধ্যে ঢাকায় যাওয়ার কথা ভেবেছে। লেখাপড়া না শিখেও তাদের গ্রামের দুটি ছেলে তো ঢাকায় গেছে। একজন রিকশা চালায়, আরেকজন গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি করে। আকালুও ঢাকায় গেলে বাপের দেখা না পাক, চাকরি করে মাসে মাসে টাকা পাবে। চাকরি যদি না পায়, আর একটু বড় হলে সে রিকশা চালাতে পারবে অবশ্যই। এখনই পারে। আর ঢাকায় রিকশা চালিয়ে মেলা টাকা রোজগার করতে পারলে, জমানো টাকা দিয়ে আকালু একটা মোবাইলও কিনতে পারবে।

কিন্তু আকালুর মা তার ঢাকা যাওয়ার কথা শুনলেও ভীষণ ভয় পায়। বলে, তোর বাপের মতো তুইও যদি গ্রাম থেকে চলে যাস, তা হলে আমি বিষ খেয়ে মরব।

মাকে ছেড়ে আকালু তাই গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। কিন্তু তাই বলে আশ্চর্য জিনিস দেখার নেশা কমেনি আকালুর। বাবা যখন ছিল, প্রাইমারি স্কুলে যেত আকালু। সে সময় একটা সাইকেলের চাকাকে গাড়ির মতো ঘোরাতে ঘোরাতে মোটর গাড়ি নয়, একটা ট্রেন চালাবার কথা পর্যন্ত ভেবেছে আকালু।

কিন্তু গরিবের ছেলের কপাল দেখ। বাসে একবার একটুখানি উঠলেও, আজ পর্যন্ত ট্রেনে ওঠেনি ও। গাঁয়ের অন্য বন্ধুদের মতো শহরে গিয়ে সিনেমা হলে ঢুকে বড় পর্দায় সিনেমাও দেখেনি কোনোদিন। আশ্চর্য জিনিসের শখ মিটাতে যে অনেক টাকা লাগে! বাড়তি বিশটি টাকা রোজগার করতে না পারার কারণেই আজ পর্যন্ত বাসে চড়ে কাছের শহরে যাওয়াও হয়নি আকালুর।

অনেক টাকা রোজগারের কথা ভাবলে ঘুরেফিরে আকালুর আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগটার কথা মনে পড়ে। সময় পেলেই রাতে বাজারের ক্লাবঘরের টিভি দেখতে যায় সে। টিভিতে সেই আশ্চর্য প্রদীপ আর দৈত্যটার সিনেমা দেখেছে একদিন। ঘষে দিলেই দৈত্যটা এসে হাজির হয়। আর প্রদীপের মালিক যে হুকুমই দিক না কেন, সঙ্গে সঙ্গে হুকুমমতো সব জিনিসই এনে পায়ের কাছে জড়ো করবে। এমন আশ্চর্য একটা প্রদীপ পেলে কোনো অভাবই থাকবে না আকালুর। তার আগে দৈত্যটাকে হুকুম দিয়ে দুনিয়ার সব আশ্চর্য জিনিস দেখার শখ মিটিয়ে নিত সে।

আকালু তাই গ্রামে কাজে-অকাজে ঘোরার সময় আশ্চর্য প্রদীপের মতো কিছু একটা পড়ে পাওয়ার কথা ভাবে। ভয়ঙ্কর কোনো দৈত্য-দানো না হোক, আল্লাহ ইচ্ছে করলে একটা জিনকে তার গোলাম করে দিতে পারে। পাশের গ্রামে একজন জিনে-ধরা মৌলভী আছে। তার অনেক টাকাপয়সা। লোকেরা বলে জিনটাই নাকি তাকে টাকা এনে দেয়। তাছাড়া ভূতের মতো আশ্চর্য একটা শক্তি অনেকের শরীরে ভর করে। তখন সে করতে পারে না, এমন কাজ নেই। এ রকম ভর-করা দুটি লোককে আকালু নিজেও দেখেছে। একজন ইনসাফ, হাডুডু খেলে। খেলার সময় যদি তার শরীরে ভূতটা ভর করে, তবে একশ’ জন ধরেও আটকাতে পারে না ইনসাফকে। আর একজন তারই মিতা, তাদের গাঁয়েরই বুড়ো আকালু। মাছ ধরতে গেলে সে এমন এক মন্ত্র পড়ে পানিতে নামে, পানির বড় মাছ তার কাছে ছুটে আসে। আকালু বুড়োর মাছ শিকার নিয়েও কত আশ্চর্য গল্প আছে গ্রামে। আকালু বুড়ো অচল হয়ে পড়ার পর হাঁটাচলা করতে পারে না আর।

গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!