আকালুর অদ্ভুত ক্ষমতা–২য় পর্ব-মঞ্জু সরকার

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

আকালুকে বিশ্বাস করানোর জন্য মোমেন ফোনটা আকালুর কানে চেপে ধরে বলে, “নে, আমার দুলাভাইয়ের সঙ্গে একটু কথা বল।”

আকালু ফোনটা কানে চেঁপে কাঁপা কণ্ঠে বলে, “হ্যালো।”

মোমেনের দুলাভাই জানতে চায়, “তুমি কি মোমেনের লগে স্কুলে পড়?”

আকালু জবাব দেয়, “না, আমি কাম করি।”

“কী কাম?”

“ক্ষেতের কাম।”

মোমেনের দুলাভাই বলে, “কামকাজ করা ভালো। তোমাদের গ্রামটা খুব সুন্দর। এবার শ্বশুরবাড়ি গেলে তোমার সঙ্গেও কথা হবে। ফোনটা মোমেনকে দাও।”

মোমেনের দুলাভাইকে তো আকালু দু-একবার দেখেছে, কিন্তু কথা হয়নি কখনও। তবে মোমেনের কাছে দুলাভাইয়ের গল্প শুনেছে মেলা। ঢাকায় হাউজিং কোম্পানিতে চাকরি করে। কোম্পানি তাকে থাকার জন্য একটি বাড়ি দিলেই নতুন বউকে ঢাকায় নিয়ে যাবে। তখন মোমেনও বোনের সঙ্গে ঢাকায় যাবে, সেখানেই পড়বে। বোনের সঙ্গে মোমেনের ঢাকা যাওয়ার স্বপ্নটা যে পাকা, সেটা তো বোনের মোবাইল ফোন হাতে তার ঘুরে বেড়ানো দেখেও বোঝা যায়। তারপরও মোমেন বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বলে, “কী রে খ্যাত, দেখলি তো। আমি ঢাকায় গিয়ে এমন একটা মোবাইল কিনব, যেটা দিয়ে গান শোনা যাবে, টিভির মতো ছবি দেখা যাবে আবার ছবি তোলাও যাবে। গ্রামে এমন আশ্চর্য মোবাইল এখনও কেউ দেখেনি।”

অবিশ্বাস করতে পারে না আকালু। এর আগে মোবাইল ফোন কতজনের হাতে দেখেছে, কিন্তু ছোট যন্ত্রটি চুপিচুপি কানের মধ্যে কীভাবে আরেকজনের গলার স্বর বাজায়, তা মোমেনই তাকে প্রথম দেখিয়ে দিল। ঢাকায় গেলে আরও অনেক আশ্চর্য জিনিস তো সে দেখতে পাবে। যাওয়ার আগেই ঢাকার আশ্চর্য জিনিসের গল্প শুনিয়ে সবাইকে তাক লাগায় মোমেন। ঢাকার রাস্তায় নাকি চারতলা বাস আছে, সে জন্য রাস্তায় জ্যাম লাগে। রাস্তায় জ্যাম হলে ছোট প্লে¬নে চড়েও মানুষ উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদে গিয়ে নামে। বড় একটা মার্কেটে ঢুকলেই নাকি অটোমেটিক সিঁড়ি মানুষকে চারদিকের সব দোকানে নিয়ে যায়। ঢাকায় গেলে, ছবিওয়ালা মোবাইলের মালিক হলে মোমেন যে আরও কত আশ্চর্য জিনিসের গল্প বলে গাঁয়ের ছেলেদের হাঁ করে দেবে! তখন আকালুর গ্রামে দেখা ভূত-অদ্ভুতের পঁচা গল্প কেউ শুনতেও চাইবে না।

মোবাইল নিয়ে মোমেন বোনের কাছে ছুটে গেলে, আকালুও ঘাস কাটার জন্য ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটতে থাকে।

গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়ে ঘাসের মধ্যেও তো আকালু কত কী অদ্ভুত জিনিস খুঁজে পায়! কালো ভোটা পিঁপড়ে, কেঁচো, ছোট ফড়িং ছাড়াও একবার একটা সবুজ রংয়ের উড়াল সাপ দেখেছিল। সেই গল্পও গাঁয়ে সবার কাছে করেছে। আকালুর সত্যি কথাটাকেও গুলগল্প ভেবেছে সবাই। কিন্তু মোমেনের হাতে মোবাইল দেখলে তার ঢাকার বানানো গল্প কেউ অবিশ্বাস করবে না আর। আকালু আজ ঘাস কাটতে গিয়ে কিছুই দেখে না, হারানো বাপ ও ঢাকার কথা ভাবতে থাকে।

মোমেনের দুলাভাইয়ের আগে থেকেই তো আকালুর বাপ ঢাকায় আছে। এখন ঢাকার কাছেই বোর্ড ফ্যাক্টরিতে চাকরি করে। হয়তো বাপের একটা মোবাইল ফোনও আছে। কিন্তু মাসে মাসে বেতন পেয়েও লোকটা বড় ছেলে আকালুকে একটা মোবাইল কিনে দেওয়ার কথা ভাবেনি কখনও। গ্রামে রেখে যাওয়ার পর বউ-বাচ্চাকে খাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে টাকাও পাঠায়নি। তাদের আর খোঁজ না নেওয়ার জন্যই আকালুর মাকে তালাক দিয়ে ঢাকায় আবার বিয়ে করেছে। সেই বউয়ের বাচ্চাও আছে একটা। লোকে বলে, আকালুর সৎমা-ই আসলে দায়ী, সেই মেয়েটাই জাদু করে বন্দি করে রেখেছে আকালুর বাপকে।

 

গল্পের ৩য় অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!