আমি একটি মোবাইল কোম্পানীতে কাজ করি। যারা আমার এ লেখাটি পড়ছেন হয়ত তাদের অনেকের সাথেই ফোনে কথা হয়েছে আমার। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। আমার কাজ মোবাইলে কাস্টমারদের কথা শুনা অর্থাৎ তাদের অভিযোগ বা সমস্যাগুলো শুনে তার সমাধান দেওয়া।প্রতিদিনের মত আজও অফিসে এসেছি আমি। এসেই কল রিসিভ করলাম।
-হ্যালো স্লামালাইকুম
-হুম। হ্যালো
-জ্বি বলুন স্যার। কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
-অ্যারে মিয়া কথা কইতে এত বোতাম টিপা লাগে ক্যা?
-জ্বি স্যার? আসলে স্যার এটাই নিয়ম।
-অ্যারে মিয়া রাখ তোমার নিয়ম। তোমার নিয়মের মাথাখুড়ি আমি।
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলাম।
-স্যার আপনার সমস্যার কথা বলুন।
-অ্যারে মিয়া খালি প্যাটর প্যাটর কর ক্যা? যেটা কইছি হেইটাই তো একখান বড় সমস্যা। এইটাই আগে ঠিক কর।
-জ্বি আচ্ছা স্যার। আর আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি স্যার?
-এইটা ঠিক কর। আবার পরে কমুনে সমস্যা।
-জ্বি আচ্ছা স্যার। আমাদের সাথে থাকার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
-অ্যারে ব্যাটা রাখ। খালি প্যাঁচাল মারস।
আমি লাইনটা কেটে দিলাম। এ ধরনের ফোন মাঝে মাঝে আসে। যতসব ইডিয়েটের দল।
আবার রিং বাজছে। আবার ফোন ধরলাম।
-হ্যালো স্লামালাইকুম
-ওয়ালাইকুম আসসালাম
-জ্বি বলুন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-জ্বি আমার এফ এন এফ নাম্বারটি চেঞ্জ করে দেন।
-একটু অপেক্ষা করুন স্যার।
-আচ্ছা।
-হ্যাঁ এবার বলুন স্যার কোনটা চেঞ্জ করতে হবে?
-০১৭১৩……………
-ওকে। নতুন নাম্বারটি এবার বলুন…
-০১৭১৭……………
-ওকে। হয়ে গেছে স্যার।
-আচ্ছা ধন্যবাদ।
-হ্যাঁ স্যার আর কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
ঠিক তখনই লাইনটা কেটে গেল। এরকম হাজারটা কল রিসিভ করার পর লাঞ্চের জন্যে যখন উঠতে যাব ঠিক সেসময় সেই কলটি এল।
-হ্যালো স্লামালাইকুম।
কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই। আমি আবার বলি,
-হ্যালো? হ্যালো?
তারপরও কোন সাড়াশব্দ নেই। কেমন যেন অদ্ভুত ঘড়্গহড় শব্দ হতে থাকে। আমি ফোনটা রেখে দিব এমন সময় এক মহিলা কণ্ঠ ফিসফিস করে বলে উঠে,
হ্যালো?
কণ্ঠ শুনে আমি কিছুটা অবাক হই। কেমন শীতল একটা কণ্ঠ যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসছে। আমি আমার ডিউটি পালন করা শুরু করলাম।
-জ্বি বলুন ম্যাম। আপনাকে কি করে সাহায্য করতে পারি?
কিছুক্ষণ নিরব থাকে কণ্ঠটি। তারপর আগের চেয়ে আরো ফিসফিস করে বলে উঠে,
-আমাকে বাঁচান?
আমি ফের অবাক হই। বলি,
-ম্যাডাম ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা।
-প্লিজ আমাকে বাঁচান।
আমার মেজাজ কিছুটা এবার খারাপ হয় বৈকি। বলি,
-দেখুন ম্যাডাম, আপনি কল্পনা লিংক মোবাইল কোম্পানীর কাস্টমার কেয়ারে ফোন করেছেন। কিন্তু আপনি…
-জ্বি আমি জানি। আমাকে একজন খুন করার জন্যে এসেছে। প্লিজ আমাকে বাঁচান।
-তাহলে এখানে ফোন করেছেন কেন? পুলিশ স্টেশনে ফোন করুন।
-আমি পুলিশ স্টেশনের ফোন নাম্বার জানি না। আমি আপনাদের কাস্টমার কেয়ারের ফোন নাম্বার জানি। তাই ফোন করেছি। আর কাউকে ফোন করা সম্ভব না। দয়া করে আমাকে হেল্প করুন।
মহিলার কথা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও বললাম,
-ঠিক আছে, আপনার ঠিকানা বলুন। দেখি কি করতে পারি।
মহিলা ঠিকানা দিলেন। আর বললেন,
-প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি করবেন। আমি লুকিয়ে আছি ঘরের ভিতর। ওরা আমাকে খুঁজে পেলে মেরেই ফেলবে।
আমি আচ্ছা বলে ফোন রাখলাম। তারপর দ্রুত পুলিশ স্টেশনে কল দিয়ে সবকিছু জানালাম। ঠিকানা দিলাম। তাড়াতাড়ি যেতে বললাম। থানার ওসি আমার বন্ধু মত। দ্রুত কাজ হল তাই।
একঘন্টা পর আমার সেই ওসি ফ্রেন্ড নিজে থেকে কল দেওয়াতে একটু অবাক হ্লাম।
-জ্বি ভাই বলুন। কি দেখলেন?
-অ্যারে ভাই আপনার সাথে কে ভোগাস মারছে। ওই ঠিকানাই কোন বাসাই নেই।
আমি খুব অবাক হলাম। তার চেয়ে বেশি আহত হলাম জেনে। আমি কোন রকমে সেই ওসি ফ্রেন্ডকে বিদায় বলে ফোনটা রেখে দেই।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।