রাকা শুয়ে আছে নরম বিছানায়। শুয়ে শুয়ে ভাবছে অনেক কথা। মনের ডাইরী থেকে পুরাতন কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে। জীবন থেকে শেষ হয়ে গেল ২৪ টি বছর। স্কুল জীবন, কলেজ জীবন, কর্ম জীবন। রাকা এখন একটা প্রাইমারী স্কুলে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে চাকরি করে। সেই কারণে তাকে থাকে থাকতে হয় পরিবার থেকে অনেক দুরে। এই চাকরিটা নেওয়ার পর রাকা অনেকটা পাল্টে গেছে। আগে যেটা ভাল লাগত এখন সেটা বিরক্ত লাগে। এই চাকরিটা রাকা অনেকটা জেদ করেই নিয়েছে। বাবা প্রথম থেকেই আপত্তি করেছিল। বাবার হুকুমের অনেকটা অবাধ্য হয়েই তাকে এখানে আসতে হয়েছে। রাকা হয়তো জানে না তার জন্য সামনে অপেক্ষা করছে অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনা।
বিছানায় শুয়ে নিজের অতীত জীবন নিয়ে ভাবছে রাকা। তার চোখ দুটো বোজা। মাঝে মাঝে চোখ দুটো একটু একটু কেঁপে উঠছে। আরও পাঁচ বছর আগে একটা ছেলে তার প্রেমে পড়েছিল। কলেজে যাওয়ার পথে ছেলেটাকে রোজ দেখা যেত রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকতে। মাঝে মাঝে দেখা যেত রাকাদের বাড়ির সামনের মোড়ে একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে অলসভাবে দাড়িয়ে থাকতে। রাকা কখনো ছেলেটাকে তেমন গুরুত্ব দিত না। নিজের মত করে চলাফেরা করত একদিন রাকা খুব বিরক্ত হয়ে ছেলেটার সামনে গিয়ে বলল, আপনি কি চান বলুনতো? ছেলেটা কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো। – আপনার উদ্দেশ্যটা কি? সব সময় আমার পেছনে ঘুরঘুর করেন কেন?
ছেলেটা এবারও নিশ্চুপ। কথা বললে ছেলেটা কোনো জবাব দেয় না। রাকা বেশ বিরক্ত হয়েই ফিরে এলো।
এরপর থেকে ছেলেটাকে আর দেখা যায়নি রাস্তার পাশে কিংবা রাকাদের বাড়ির সমনে। ছেলেটার এরকম আচরনে রাকা খুব অবাক হলো। ছেলেটার সম্পর্কে অনেক খোজ খবর নেওয়া শুরু করল। ছেলেটার নাম নিলয়। অদ্ভুদ সেই ছেলে নিলয়। রাকা অনেক খুজেও নিলয়কে আর পায়নি। অনেক দিন পরে আজ নিলয়ের কথা বেশ মনে পড়ছে। রাকা চোখ বুজে নিলয়ের সেই হাসিমাখা মুখটা মনে করার চেষ্টা করছে। ক্রিং ক্রিং করে রাকার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল।
ওপাশ থেকে কোনো শব্দ শুনা যাচ্ছেনা। কেবল শো শো একটা শব্দ হচ্ছে। বিপ বিপ শব্দ করে লাইনটা কেটে গেলো।
লাইনটা কেটে যাওয়ার পর অনেক বার চেষ্টা করার পরেও লাইন পেল না। নাম্বারটা মোবাইলে সেভ করে রাখল।
পরের দিন রাকা সেই নাম্বারে কল করল। দুইবার রিং হওয়ার পর ওপাশ থেকে একটা মহিলা কন্ঠ বলে উঠলো, হ্যালো।
রাকা বলল, গতকাল সন্ধ্যায় এই নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছে। মহিলা বলল, কে আপনি? রাকা বলল, আমি যেই হই আপনি কল দিয়েছেন কেন সেটা বলেন? মহিলা বলল, আমিতো আপনাকে কল দেই নি। রাকা কথা না বাড়িয়ে কলটা কেটে দিল। বাজে আলাপ করে নষ্ট করার মত সময় তার নেই। কয়েকদিন পরে এক রাতে সেই নাম্বার থেকে কল এলো। কল রিসিভ করার পর রাকা বলল, হ্যালো । ওপাশ থেকে একটা ছেলের কন্ঠ বলে উঠলো, হ্যালো আমি নিলয় বলছি।
– কোন নিলয়? –
আমার কথা ভুলে গেছ? ভুলে যাবারই কথা। আরো ছয় বছর আগে……
রাকার বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো।
– তুমি নিলয়?
– হ্যা নিলয়। কোনো সমস্যা?
– না সমস্যা হবে কেন?
এই থেকে শুরু। প্রায় প্রতিদিন রাতেই রাকা নিলয়ের সাথে কথা বলত।
একদিন রাকা তাকে বলল, তোমাকে আমি পরে অনেক খুজেছি? কোথায় গিয়েছিলে তুমি।
নিলয় বলল, সে অনেক কথা। আরেক দিন বলব।
রাকা বলল, না এখনই বলো প্লিজ।
নিলয় বলল, জরুরি প্রয়োজনে আমাকে খুলনা যেতে হয়েছিল। তারপর সেখান থেকে আর ফেরা সম্ভব হয়নি।
প্রতিদিন রাতেই রাকা কথা বলতো নিলয়ের সাথে। রাতের পর রাত পার করে দিত কথা বলতে বলতে।
একদিন সকালে নিলয়ের নাম্বারে কল দেওয়ার পর একটা মহিলা কন্ঠ বলল, হ্যালো।
– হ্যালো আমি রাকা।
– কোন রাকা?
– আমি নিলয়ের বন্ধু।
– ওওও
– অপনি কি নিলয়ের মা?
– হ্যা।
– কেমন আছেন আন্টি?
– ভাল। তুমি ভাল আছ?
– হ্যা। আচ্ছা আন্টি, নিলয় কোথায়?
ওপাশ থেকে এবার ফোঁপনো কান্নার অওয়াজ শুনা গেল?
– কাদঁছেন কেন আন্টি।
– তুমি জান না?
– কি হয়েছে আন্টি?
– আরো পাঁচ বছর আগে ঢাকা থেকে খুলনায় আসার পথে …..
মহিলার কান্না এবার আরো বেড়ে গেলো।
– বলুন বলুন আন্টি, কি হয়েছে?
– একসিডেন্টে নিলয় মারা যায়।
ওপাশ থেকে আর কোনো শব্দ শোনা গেল না।
ঠাস করে একটা শব্দ হলো। রাকার হাতের মোবাইলটা পরে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।