হযরত লোকমান (আঃ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, একথা নিশ্চিত যে, লোকমান কোন নবী ছিলেন না, তবে তিনি একজন বিচক্ষন ও চিন্তাশীল ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি মানুষের প্রতি সু’ধারণা পোষণ করতেন। আল্লাহ্ পাককে তিনি ভালবাসতেন এবং আল্লাহ পাকও তাকে ভালবাসতেন। আল্লাহ্ তা’য়ালা তাঁকে হেকমত শিক্ষা দিয়েছেন।
হযরত লোকমান একদিন দ্বিপ্রহরে ঘুমাচ্ছিলেন। এমন সময় গায়েব হতে আওয়াজ এল, হে লোকমান! তুমি কি তা কামনা কর না যে, আল্লাহ্ পাক পৃথিবীতে তোমাকে প্রতিনিধি বানিয়ে দিন এবং তুমি মানুষের মধ্যে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম কর তিনি জাগ্রত হয়ে ঐ আওয়াজের উত্তর দিলেন, আল্লাহ্ পাক যদি এ বিষয়ে আমাকে হুকুম করেন, তবে অবশ্যই আমি তা মান্য করব। কেননা, সে ক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব পালনে তিনি আমাকে সহায়তা করবেন এবং যাবতীয় বিপর্যয় হতে আমাকে রক্ষা করবেন। পক্ষান্তরে এ বিষয়ে যদি আমাকে এখতিয়ার দেয়া হয় তবে, আমি এ দায়িতে গ্রহণ হতে নিজেকে বিরত রাখব।
তিনি কেন স্বেচ্ছায় ঐ দায়িত্ব গ্রহণ ঐ দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না, এ মর্মে প্রশ্ন করা হলে হযরত লোকমান উত্তর দিলেন, বাদশাহী ও সুলতানাত বড় বিপদ সংকুল বস্তু। কেননা, এক্ষেত্রে সর্বদা তাঁকে বিবিধ বালা মূসীবত ও জুলুমত পরিবেষ্টন করে রাখে। অতঃপর আল্লাহ্ পাকের অনুগ্রহে সে হয়ত তা থেকে মুক্তি লাভ করে এবং তাতেই সাফল্য। পক্ষান্তরে মানুষ যদি সে ক্ষেত্রে ভুল করে তবে জান্নাতে প্রবেশের পথে তা এক অন্তরায় সৃষ্টি করে। সত্যের উপর অটল থেকে দুনিয়ার শান শওকতের পরিবর্তে অপমানিত হওয়াও উত্তম। যারা আখেরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছে তারা তো আখেরাত হারিয়েছে সেই সাথে দুনিয়াতেও ফেতনায় জড়িয়ে পড়েছে।
হযরত লোকমানের উপরুক্ত যুক্তিপূর্ণ আলোচনায় ফেরেশতারা বড় বিস্মিত হলেন। হযরত লোকমান পূনরায় নিদ্রামগ্ন হলে তাঁকে হেকমতের মধ্যে অবগাহন করানো হল। জাগ্রত হওয়ার পর তিনি অভাবিকভাবে হেকমত পূর্ণ আলোচনা করতে লাগলেন। পরে হযরত দাউদ (আঃ) কে খেলাফত গ্রহনের জন্য আওয়াজ দেওয়া হল। তিনি হযরত লোকমানের মত কোন প্রকার শর্ত আরোপ না করে বিনা শর্তে তা গ্রহণ করলেন।
পরবর্তীতে হযরত দাউদ (আঃ) বিভিন্ন সময় বিবিধ বালা মুসীবতে আক্রন্ত হলেন এবং আল্লাহ্ পাক তাঁকে ঐ সকল বিপর্যয় ও মুসীবত হতে রক্ষা করলেন। হযরত লোকমান সর্বদা নিজের এলেম ও হেকমত দ্বারা হযরত দাউদ (আঃ) কে সহায়তা করতেন। একবার দাউদ (আঃ) বললেন, হে লোকমান! তুমি বড় ধন্য। আল্লাহ্ পাক তোমাকে হেকমত দান করেছেন। এবং সমস্ত বালা মুসীবত হতে মুক্ত করে দিয়েছেন। অথচ দাউদ (আঃ) খেলাফত দানের পাশাপাশি তাঁকে বহু বালা মুসীবত ও ফেতনায় লিপ্ত করা হয়েছে।