রোগ নিরাময় ও বিপদ মুক্তি সংক্রান্ত মু’যিযা
হযরত বারা ইবনে আজিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবূ রাফে এর উপর আক্রমন এর জন্য আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক (রাঃ) এর নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র দল পাঠালেন। গভির রাতে আব্দুল্লাহ বিন আতিক আবু রাফে এর শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে স্বীয় তলোয়ার তার পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দেন। তিনি বলেন, যখন আমি নিশ্চিত হলাম যে, আবু রাফে” মৃত্যু বরণ করেছে, তখন আমি কক্ষের দরজা খুলে বের হয়ে এলাম।
ঐ সময় আমি পা ফসকিয়ে মাটিতে পড়ে গেলে আমার পা ভেঙ্গে যায়। অতঃপর আমার ভাঙ্গা পা মাথার পাগড়ী দ্বারা বেধে কোন ক্রমে সাথীদের নিকট পৌছি। পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করলে তিনি স্বীয় হস্ত মোবারক আমার ভাঙ্গা পায়ের উপর বুলায়ে দিলেন। সাথে সাথে আমার ভাঙ্গা পা এমন ভাবে জোড়া লেগে গেল যে, ওতে আমার আঘাতের কোন চিহ্ন রইল না। আবূ রাফেকে হত্যা করার বিস্তারিত বর্ণনা নিম্নে বর্ণিত হলোঃ আবু রাফে” হেজাজের অধিবাসী। পেশায় সে ছিল একজন ব্যবসায়ী।
সে সব সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে নানা ভাবে কষ্ট দিত। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আবূ রাফে’ কে বন্দী অথবা হত্যার উদ্দেশে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক (রাঃ) এর নেতৃত্বে কয়েকজন আনসার নওজেয়ানকে পাঠালেন। তাদের হযরত আবূ রাফে’র মহল্লায় পৌছাতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। দলপতি আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক সবাইকে এক স্থানে অবস্থান করতে বলে নিজে কোন বাহানায় আবূ রাফের গৃহে প্রবেশের জন্য অগ্রসর হল। ঘটনাক্রমে ঐদিন আবূ রাফের গাধা হারিয়ে গিয়েছিল। লোকেরা লন্ঠন হাতে চর্তুদিকে তা খুঁজছিল। তার আশঙ্কা হল যে, তাদের কেউ হয়ত তাঁকে দেখে ফেলতে পারে। সুতরাং সে মাথা নত করে এস্তেঞ্জার বাহনায় এক স্থানে বসে পড়ল। যারা গাধা তালাশ করছিল ইতোমধ্যে তাদের সকলে গৃহে ফিরে গেল।
গৃহের দারোয়ান আব্দুল্লাহকে বসা অবস্থায় দেখে নিজেদের লোক মনে করে ডেকে বলল, তুমি জলদি আস, নতুবা আমি ফটক বন্ধ করে দিচ্ছি। আব্দুল্লাহ এমন একটি সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিল। এ ফাকে সে গৃহে ঢুঁকে পড়ল এবং সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে আস্তাবলের এক কোণে বসে পড়ল। দারোয়ান প্রধান ফটক বন্ধ করে চাবির গোছা একটি খুটির সাথে ঝুলিয়ে রাখল। এদিকে আবূ রাফে সকলের সাথে আহার শেষ করে কিছু গল্প-গুজবের পর তার নির্দিষ্ট বিশ্রাম কক্ষে শয়ন করল। ক্রমে সকলেই স্ব স্ব কক্ষে চলে গেল। এবার আব্দুল্লাহ আস্তাবলের কোন থেকে সন্তর্পনে বের হয়ে এলেন।
চর্তুদিকে সাবধানী দৃষ্টি ফেলে খুটি থেকে সন্তর্পনে চাবি নিয়ে প্রথমেই বাড়ির প্রথান ফটকটি খুলে রাখলেন। অতঃপর সকল কক্ষের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করে দিলেন।উদ্দেশ্যে কোন প্রকার হৈচৈ শুনে তৎক্ষণাৎ যেন কেউ এগিয়ে আসতে না পারে। এবার তিনি আবূ রাফের দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। আবু রাফে নিজের ছেলে মেয়েদের সাথে বিশ্রাম করছিল। ঘুট ঘুটে অন্ধকারের কারনে তাঁকে নির্দিষ্ট করা যাচ্ছিল না। প্রতিটি মুহুর্ত আব্দুল্লাহর কঠিন দূর্ভানায় অতিক্রম হচ্ছিল। হঠাৎ তিনি সতর্ককন্ঠে আবু রাফে কে ডাক দিলেন। কোন কিছু বুঝে উঠার পুর্বেই আবু রাফের কণ্ঠে জবাব এলো, কে? মুহুর্ত মাত্র বিলম্ব না করে আব্দুল্লাহ তার কণ্ঠ লক্ষ্য করে তলোয়ার এর আঘাত হানল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে তার আক্রমণ লক্ষ্য ভ্রষ্ট হল। আবূ রাফে’ প্রতিপক্ষের আগামন টের পেয়ে মুহুর্তের জন্য চিৎকার করে উঠে আবার কি মনে করে নীরব হয়ে গেল।
কিছু ক্ষন পর আব্দুল্লাহ গলার স্বর পাল্টিয়ে সহানুভূতির স্বরে জিজ্ঞেস করল, হে আবূ রাফে! তোমার কি হয়েছে? আবূ রাফে এবার ফাদে পা দিল। তাঁকে নিজের লোক মনে করে বলে উঠল, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? এই মাত্র কে জেন তলোয়ার দ্বারা আমার উপর আক্রমণ করেছিল। আবূ রাফের শব্দ লক্ষ্যকরে আব্দুল্লাহ সামনে অগ্রসর হয়ে আঘাত করল। এবার আর লক্ষ্যভ্রষ্ট নয়। তলোয়ারের এক আঘাতেই আবু রাফে, প্রান হারাল। কাল বিলম্ব না করে আব্দুল্লাহ কক্ষ ত্যাগ করল। বাইরে তখন চাঁদের আলো ছায়া। সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় পা ফসকে পড়ে গেল। আব্দুল্লাহর পা ভেঙ্গে গেল। এর পরবর্তী অবস্থা প্রথমেই আলোচনা করা হয়েছে। (বোখারী)