এক লোক তার স্ত্রীর কাছে কসম করে বলল,
“যদি তোর সঙ্গে আমি আগে কথা বলি, তবে তুই তালাক।”
স্ত্রীও অভিমান করে কসম করল,
“যদি আমি আগে কথা বলি, তবে আমার অমুক গোলাম আজাদ।”
এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেল — কিন্তু কেউ কারও সঙ্গে কথা বলল না। ফলে সংসার অচল হয়ে পড়ল।
স্বামী ভাবল, “আমি যদি আগে কথা বলি, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে।”
অন্যদিকে স্ত্রী চিন্তা করল, “আমি আগে কথা বললে আমার প্রিয় গোলামটি আজাদ হয়ে যাবে।”
ফলে কেউই আগে কথা বলতে সাহস করল না।
লোকটি কসম করার জন্যে ভীষণ অনুতপ্ত হলো এবং উদ্বিগ্ন হয়ে আলেমদের কাছে গেল— কীভাবে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যায়, অথচ তালাকও না হয়।
সব আলেম একবাক্যে বললেন,
“স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তালাক হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। আবার স্ত্রী আগে কথা বললে তার গোলাম আজাদ হওয়া ছাড়া পথ নেই। সুতরাং হয় স্ত্রীর তালাক, না হয় গোলাম মুক্তি — এই দুইয়ের একটিই ঘটবে।”
এ কথা শুনে লোকটির দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গেল।
অবশেষে তার মনে পড়ল ইমাম আযম আবু হানিফা (রহঃ)-এর কথা।
সে গিয়ে পুরো ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-কে জানাল।
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বললেন,
“যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলো। ভয় নেই, তোমার স্ত্রীর তালাক হবে না।”
এই ফতোয়া শুনে উপস্থিত আলেমরা বিস্মিত হয়ে গেলেন। তারা বললেন,
“আমরা তো ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-কে সর্বোচ্চ জ্ঞানী হিসেবে জানি, কিন্তু তিনি এমন নীতিবিরুদ্ধ ফতোয়া দিলেন কীভাবে? কসমের পর কথা বললে তালাক হওয়া তো নিশ্চিত — তবে এখন কেন হবে না?”
তারা অবশেষে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর কাছে এসে ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন।
ইমাম আযম আবু হানিফা (রহঃ) বললেন,
“স্বামীর কসম খাওয়ার পরপরই স্ত্রী যখন তাকে সম্বোধন করে কসম করল, তখন স্ত্রীর মুখ থেকে কথা বেরিয়ে গেছে। অর্থাৎ সে আগে কথা বলে ফেলেছে। তাই এখন স্বামী কথা বললে সেটা স্ত্রীর পর হবে, ফলে তালাক হবে না। তেমনি স্বামী কথা বলার পর স্ত্রী কথা বললেও তার গোলাম আজাদ হবে না।”
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর এ গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দেখে সবাই অভিভূত হলেন।
তাদের মুখে আর কোনো কথা রইল না।
আল-ইফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ, খণ্ড–৪, পৃষ্ঠা–২৩৫
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।