ওস্তাদের শিক্ষা!

সুলতান নিজামউদ্দিন (রহঃ)-এর সময় এক হিন্দু সাধু বাস করতেন। তিনি এমন এক অভ্যাস অর্জন করেছিলেন যে, কারও উপর দৃষ্টি দিলে তার রোগ দূর হয়ে যেত।

একবার সুলতান নিজামউদ্দিন (রহঃ) গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। মাঝে মাঝে তিনি অজ্ঞান হয়ে যেতেন। জ্ঞান ফিরে এলে খাদেমরা বিনীতভাবে আরজ করল,
“হুজুর, যদি অনুমতি দেন, তবে আপনাকে ওই হিন্দু সাধুর কাছে নিয়ে যাই। তিনি দৃষ্টি দিলেই রোগ সেরে যায়।”

হযরত বললেন,
“সাবধান! এমনটি করবে না। এতে মানুষের ঈমানী আকিদা নষ্ট হয়ে যাবে।”

কিন্তু পীরের প্রতি মুরিদদের ভালোবাসা তো প্রেমের পর্যায়ের হয়। সুলতান নিজামউদ্দিন (রহঃ) যখন আবার অজ্ঞান হয়ে পড়লেন, তখন মুরিদগণ অতিশয় ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। তারা হুজুরের খাট তুলে সেই সাধুর বাড়িতে নিয়ে গেলেন এবং মনে মনে বললেন— “হুজুর জেগে উঠলে আমরা ক্ষমা চেয়ে নেব।”

সাধু দেখল, এমন মহান একজন ব্যক্তি তার বাড়িতে এসেছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ সব কাজ ছেড়ে সুলতান নিজামউদ্দিন (রহঃ)-এর খাটের দিকে তাকালেন। তার দৃষ্টিতেই এমনভাবে রোগ দূর হয়ে গেল যে, হযরত একেবারে উঠে বসলেন— যেন কখনও অসুস্থই ছিলেন না।

চারপাশে তাকিয়ে তিনি বুঝলেন, এটি এক হিন্দু সাধুর বাড়ি। উপলব্ধি করলেন, মুরিদগণ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছে। তাই কাউকে কিছু বললেন না।

তিনি সাধুকে জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমার মধ্যে এই শক্তি কীভাবে সৃষ্টি হলো? কোন আমলের মাধ্যমে এই যোগ্যতা অর্জন করেছো?”

সাধু বলল,
“আমার মধ্যে কেবল একটি গুণ আছে, যা আমার ওস্তাদ আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন— ‘সবসময় নফসের বিরুদ্ধে চলবে; অর্থাৎ তোমার মন যে কাজটি করতে চায়, সেটা করবে না, আর যে কাজটি করতে চায় না, সেটিই করবে।’ এই একটিমাত্র অভ্যাসের কারণে আমার নফস এমন শক্তিশালী হয়েছে যে, আমি তাসররুফের মাধ্যমে মানুষের রোগ দূর করতে পারি।”

এ কথা শুনে হযরত নিজামউদ্দিন (রহঃ) জিজ্ঞেস করলেন,
“আচ্ছা বলো, তোমার কি মুসলমান হতে ইচ্ছে করে?”

সাধু বলল,
“না, মুসলমান হতে মন চায় না।”

হযরত বললেন,
“তাহলে তোমার তো ওস্তাদের শিক্ষার উপর আমল হলো না!”

সাধু চিন্তায় পড়ে গেল।

এরপর হযরত নিজামউদ্দিন (রহঃ) দোয়া করতে লাগলেন,
“হে আল্লাহ! সে আমার উপকার করেছে, আমিও তার উপকার করতে চাই। সে আমার দেহের রোগ দূর করেছে, আমি তার অন্তরের কুফর ও রূহানী রোগ দূর করতে চাই। তুমি আমাকে সাহায্য কর।”

হযরতের এই দোয়ার প্রভাবে সাধুর অন্তরে যেন ঝড় বয়ে গেল। সে চিৎকার করে উঠল—
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ!”

অতঃপর সে ইসলাম গ্রহণ করে ঈমানের সৌভাগ্য লাভ করল।

(আল-ইফাযাতুল ইয়াওমিয়্যাহ)

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!