ডাকঘরে ভূত

রামকানাইবাবু সপরিবারে এসেছেন ।ভুবনেশ্বর থেকে ওয়ালটেয়ার ।বদলির চাকরি ।যেতেই হয় ।তবে এবারের বদলিতে তিনি খুশিই হয়েছেন ।ওয়ালটেয়ার স্টেশনে নেমে আরো খুশি হলেন ।কারণ জানুয়ারি মাসে পাখা চলছে প্ল্যাটফর্মে ।ভুবনেশ্বরে এখন ভাল ঠান্ডা ।ওখানে রাতের ডিউটি মানে কাড়ি কাড়ি গরম জামা কাপড় চাপানো ।যাক ভালই হল ।এখন গরম জামা কাপড়ের বালাই নেই ।ভাবতে ভাবতেই মোট ঘাট নিয়ে চললেন ।স্ত্রীকে বললেন,চপলা কেমন দেখছো ? কি বল ? বদলি নিয়ে ভাল করেছি না ? চারদিকে চেয়ে চপলাও দারুন খুশি ।খুশিতে ডগমগিয়ে চপলা বলল ,হ্যা গো , খুব সুন্দর জায়গা ।এর পর একমাস কেটে গেলে ।রাম কানাই বাবু লক্ষ করলেন এখানে রাতে ডিউটি কেউনিতে চায়না ।একদিন শঙ্করা পার্সেল গুলো গুনতে গুনতে ব্যাগে ভরছে ।চিন্না বাবু গালা দিয়ে ব্যাগের মুখ বন্ধ করছে ।সব গুলো ভরা হয়ে গেলে কালো রঙ দিয়ে ব্যাগের গন্তব্যের ঠিকানা লিখে দিলেন ।
রামকানাইবাবু বললেন ,কটা হলরে ?
প্রায় কুঁড়িটা ।শঙ্করা বলল ।এবার আমরা যাই ।রামকানাইবাবু শঙ্করার ভয় মিশ্রিত মুখ দেখে বললেন ,এত ভয় পাস কেন বলতো ?আমতা আমতা করে শঙ্করা বলল , দু একঁদিনেই বুঝবেন । একমাস পেরিয়ে গেল কিছুই তো বুঝলাম না ।শঙ্করা আর চিন্না চলে যেতে তিনি নিজের হাতে পোস্টাপিসে র দরজা বন্ধ করে দিলেন ।ঘড়িটা দেখে নিলেন ।সাড়ে আটটা বাজে ।রাত দশটায় মাদ্রাজ মেইল আসবে ।কোলকাতার ডাক উঠিয়ে তবে তিনি শুবেন ।তিনি চেয়ারে বসে পড়লেন ।ভয়ের একটা কারণ হইত আছে তবে ওসবের কেয়ার রামকানাই বাবু করেন না ।যুবক বয়সে অনেক মরা পুড়িয়েছেন ভূতেরা তার ধারেকাছে আসবেনা ।চেয়ারে বসেই ঢুলছেন রামকানাইবাবু ।হঠাত্‍ গাড়ির হুইসল শুনে কেপে উঠলেন তিনি ।আরে ট্রেন কিছেড়ে দিল ? কিন্তু মাল ,চিঠিপত্র নিতে তো কেউ এলনা ।ধড়মড় করে উঠে বসতে গেলেন কিন্তু উঠতে পারলেন না ।কিন্তু তিনি তো বসে নেই ? চেয়ার তো পাশের ঘরে রয়েছ ।এটা তো বিশ্রাম নেবার ঘর ।কখন এলেন এই ঘরে ?খাটেই বা শুলেন কখন ?ঠিক তখনই পার্শেল আর চিঠির ব্যাগগুলোর দিকে তাকালেন ।একি !দরজা খোলা !একটাও ঝোলা নেই ।তবে কি…..।তখনই দেখলেন একটা কালো ছায়া বাইরে চলে যাচ্ছে ।রামকানাই বাবু বিছানা ছেড়ে প্ল্যাটফর্মের দিকে ছুটলেন ।হ্যা ট্রেন দাড়িয়ে আছে ।আর. এম .এস .কামরার দিকে যেতেইট্রেন ছেড়ে দিল ।আর.এম.এস এর কামরায় কেউ নেই ।অথচ ডাক গাড়িতে মালগুলো আপনা আপনি উঠে যাচ্ছে ।শেষের বস্তা উঠতেই গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেল ।কি মনে করে রামকানাইবাবু ডাক কামড়ার দিকে ছুটতে লাগলেন ।এমন সময় ভয়ঙ্কর ঠান্ডা একটা অদৃশ্য হাত তাকে যেন ছূড়ে ফেলে দিল ।জ্ঞান ফিরতেই রামকানাইবাবু দেখতে পেলেন তিনি তার বাড়িতে ।সব শুনেচপলা বলল ,চল এখান থেকে চলে যাই ।শরীর ভাল হতেই আফিসে আসলেন রামকানাই বাবু ।এমন সময় শঙ্কর এসে বলল ,স্যার কেমন আছেন ? আপনার এত সাহস জানলে আগেই সব খুলে বলতাম ।রামকানাই বাবুকে শঙ্করা বলতে লাগলঃহরি বোস এক কর্মচারি ।ডাক ব্যাগ ট্রেনে উঠাতে রেল লাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে ।পরদিন হাতে একটা দরখাস্ত নিয়ে রামকানাই বাবু জি. পি . ও তে দেখা করেন ।বড়বাবু বললেন , কি বদলি চাই ? না ছুটি চাই ।গরায় হরিবোসের পিন্ড দান করতে যাব ।এরপর থেকে হরি বোসের উত্‍পাত বন্ধ হল ।

 

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!