চতুর্মাত্রিক– তাসমি আক্তার

আমি তিনদিন আগে একটা ডিম পেড়েছি। গোলাকার ডিমের গায়ে গাঢ় আর হালকা বেগুনি ছোপ ছোপ। এই মুহুর্তে ডিমে তা দেয়া ছাড়া আমার কোন কাজ নেই। ডিম পেড়েছি
বইয়ের তাকের উপর। ছিমছাম জায়গা, এত উপরের বই কেউ পড়ার জন্য কষ্ট করে নামাতে চায় না। সেই কারনেই এই জায়গাটা বেছে নিয়েছি।
খিদে পেয়েছে। কি খাবো বুঝতে পারছিনা, ইদানিং মুখে কোন খাবারই রুচে না। খাবার এনে দেবারও কেউ নেই। বিধবার জীবন, কে ফিরে তাকায়? খাবারের খোঁজে বের হয়েছি। বইয়ের তাকের ফাঁকে মাঝে মাঝে দুএকটা প্রোটিনখাবার পাওয়া যায়, আজও হয়তো কিছু পেয়ে যাব। ঐ তো, কালো কি যেন একটা দেখা যাচ্ছে! মন্থর গতিতে আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। আমি আমার বিষদাঁত তৈরি করে ফেল্লাম নিমেষের মধ্যেই। আর কয়েকটা মুহুর্ত ………. আরো একটু ……… খতম!
যাক, কিছু শিকার তো পাওয়া গেল। একটু হাওয়া বাতাস খেয়ে আসা যাক। জাল ছেড়ে ছেড়ে অল্প অল্প করে সামনে আগাচ্ছি। দেয়ালের এক কোণে কিছু পিঁপড়া জটলা পাকিয়ে আছে। কি হয়েছে দেখতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু সেইদিকে গেলে বজ্জাত লাল পিঁপড়ার দল আমার উপরেই হামলা চালাতে পারে।
যদিও জানার খুবই কৌতুহল, তাও এই সময়ে আমি এত বড় ঝুঁকি নিতে পারব না। আমার ডিম আছে, ডিমের ভেতরে না জানি কতগুলো বাচ্চা আছে। আমার কিছু হলে ডিমটার কি হবে? হয়তো এমন কোন লাল পিঁপড়ার দল আমার ডিমটাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে! ভাবতেই গায়ের কাঁটাগুলো দাঁড়িয়ে যায়। আবার ফিরে যাচ্ছি বইয়ের তাকের দিকে। ডিমটাকে বেশিক্ষণ একা রাখা ঠিক হবেনা। আমি আমার মতোই জাল ফেলে ফেলে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ আমার কেন জানি মনে হল কেউ আমাকে দূর থেকে লক্ষ্য করছে।

আমার চারটে চোখ, সবচেয়ে ডানের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা টিকটিকি আমার একটা পা কামড়ে ধরল। আমি আপ্রাণ আমার পা টাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম, পারছিনা। আমার মনে তখনো শুধু আমার ডিমটার জন্য চিন্তা। নাহ, আমাকে পারতেই হবে। বাকি সাতটা পা দিয়ে টিকটিকির সাথে মারাত্মক মারামারি শুরু করে দিলাম। শেষ পর্যন্ত সেই একটা পায়ের মায়া আমাকে ত্যাগ করতেই হল। পা ছেড়ে যত জোরে সম্ভব দৌড় দিলাম। কষ্ট হল, কিন্তু কিছু করার নেই। আমার ডিমটার কাছে এসেছি আমি। দেখেই আমার চোখটা জুড়িয়ে গেল। ডিমটা ফুটেছে, কত্তোগুলো বাচ্চা আমার! খুশিতে কি করব বুঝতে পারছিনা। এরা তো একদিনেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে বইয়ের তাকে, তার আগ পর্যন্ত এগুলোকে বুকের কাছে আগলে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে।

 

একটা পায়ের বিনিময়ে এত বড় আনন্দ, আরো হাজারটা পা ত্যাগ করতে রাজি আছি আমি!

 

গল্পটি পাঠিয়েছেনঃ সুজিত বিশ্বাস

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!