একদিন সকাল বেলা পাঠশালা যাবার পথে এক পন্ডিত শেয়াল একটা গুহার মধ্যে পড়ে গেল। গুহার দেয়ালটা এত খাঁড়া আর উঁচু যে শেয়াল লাফ দিয়ে কোন ভাবেই ওঠে আসতে পারল না। তাই বসে বসে সে ভাবতে লাগল, কী ভাবে এ গুহা থেকে বের হওয়া যায়।
এমন সময় একটা শুকর এল ঐ গুহার নিকটে। সে আন্ধকার গুহার দিকে তাকালো ও হাসল। শেয়াল তখন গুহায় পড়ে থাকা গাছের একটা বড় পাতার ওপর গভীর ভাবে মনোযোগ দিচ্ছিল। শুকর বলল, শেয়াল পাতাটা নিয়ে তুমি কী ভাবছ?
শেয়াল পন্ডিত পাতা থেকে মুখ তুলে নিয়ে বলল, এটা কোন সাধারণ পাতা নয়, এটা একটা যাদুর পাতা। আমি যাদুর পাতার লেখাগুলো পড়ছি।
শুকর এবার আগ্রহ ভরে জিজ্ঞেস করল, যাদুর পাতা! কী লেখা আছে ওতে?
শেয়াল বলল, যাদুর পাতায় লেখা আছে, পৃথিবী আজ ধবংস হয়ে যাবে। আর যারা এ গুহায় থাকবে,তারাই কেবল রক্ষা পাবে।
শুকর বলল, আমিও তোমার সাথে থাকতে চাই।
শেয়াল উত্তর দিল, না! না! তা কী করে হয়? তুমি তো খুব হাঁচি দাও! আর যে হাঁচি দেয় তাকে এ গুহা থেকে বের করে দেয়া হয়।
শুকর বলল, তাহলে প্রতীজ্ঞা করলাম, আমি কখনো হাঁচব না। Ñএই বলে শুকর গুহায় ঝাপ দিল।
ছোট্ট শেয়াল আবার যাদুর পাতাটা পড়তে লাগল।
এমন সময় এক বাঘ এল। সে গুহার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর বাঘ বলল, নির্বোধ প্রাণিরা কেন তোমরা এ অন্ধকার গুহায় বসে আছো?
শুকর বাঘের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলল, শেয়ালের হাতে যে পাতাটা দেখছ, ওটা যাদুর পাতা। ওতে লেখা আছে আজই পৃথিবী ধবংস হয়ে যাবে। কেবল যারা এ গুহায় থাকবে তারাই রক্ষা পাবে।
শুকরের কথা শুনে বাঘ বলল, তাহলে আমিও তোমাদের কাছে এখনই আসছি।
বাঘের কথার উত্তরে শুকর বলল, তা আসতে পার, তবে তুমি বরাবরই হাঁচি দাও! যারা হাঁচি দেয় তাদেরকে এখান থেকে বের করে দেয়া হয়।
বাঘ বলল, তাই যদি হয় Ñতবে আমি কথা দিচ্ছি কখনো হাঁচি দেব না। Ñএ কথা বলার সাথে সাথেই বাঘ গুহায় ঝাপিয়ে পড়ল।
অল্প সময় পরে এক হাতি গুহার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে গুহার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল। তারপর সে ঠাট্টা করে বলল, তোমরা এ অন্ধকার গুহায় কীসের জন্য পরে আছো?
বাঘ হরিণের হাতের যাদুর পাতাটা দেখিয়ে দিয়ে বলল, এটা হল একটা যাদুর পাতা। আর এ পাতায় লেখা আছে, আজ পৃথিবী ধবংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র তারাই বাঁচবে, যারা এ গুহায় আশ্রয় নেবে।
হাতি বলল, তাহলে আমিও গুহায় যেতে চাই।
এবার হাতির কথা শুনে বাঘ বলল, না! না! না! তুমি অত্যন্ত বড় এবং তুমি খুব বেশি হাঁচি দাও। যারা হাঁচি দেয়, তাদেরকে এখান থেকে বের করে দেয়া হয়।
এবার হাতি বলল, আমি কসম খেয়ে বলছি কখনই হাঁচি দেব না। Ñএ কথা বলার সাথে সাথেই হাতি গুহায় লাফিয়ে পড়ল।
এবার শেয়াল পুনরায় যাদুর পাতাটা পড়তে লাগল এবং বলল, শুকর তুমি কী হাঁচি দিতে যাচ্ছো?
শুকর বলল, না! না! আমি আমার নাকটাকে ময়লায় লুকাচ্ছি,যাতে হাঁচি বের না হয়।
শেয়াল বলল, ময়লায় নাক লুকানো হলে তার পক্ষে নি:শ্বাস নেয়া বড় কষ্টকর হয়।
শেয়াল আবার পাতার দিকে মনোযোগ দিল। অল্প সময় পরে সে চোখ তুলে বলল, কেউ কী হাঁচি দিয়েছো? বাঘ তুমি কী?
বাঘ বলল, না! না! না! দেখছ না, আমি আমার থাবা দিয়ে নাকটা ধরেছি, যাতে কোন ক্রমেই আমাকে হাঁচতে না হয়।
শেয়াল বলল, এ ভাবে নাক চেপে ধরলে নিঃশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয় বৈকি।
এবার শেয়াল পূর্বের ন্যায় যাদুর পাতায় মনোনিবেশ করল। একটু পরেই আবার হাতির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কী হাঁচি দিতে যাচ্ছ?
হাতি বলল, না! না! আমি তো আমার সুরটা পেটের নিচে দিয়ে বসে আছি Ñযাতে কখনই হাঁচি বের না হয়।
এবার শেয়াল যাদুর পাতাটা দিয়ে নিজের নাকের মধ্যে সুরসুরি দিল এবং হাঁচি দেয়ার জন্য মুখ খুলল।
শুকর বলল, শেয়াল হাঁচো না! হাঁচো না!
বাঘ বলল, শেয়াল সাবধান হও!
হাতি বলল, শেয়াল থামো! থামো!
কিন্তু শেয়াল থামলো না। সে চোখ বন্ধ করল এবং হাঁচি দিল।
শুকর বলল, শেয়াল হাঁচি দিয়েছে।
বাঘ বলল, আমরা ওকে গুহা থেকে বের করে দেই।
হাতি বলল, চলো তাই করি।
এবার সকল প্রাণী ধরে শেয়ালকে গুহা থেকে বের করে দিল।
শেয়াল গুহার ওপর থেকে শুকর, হাতি ও বাঘকে বাঁকা চোখে দেখতে লাগল। তারপর সবার উদ্দেশ্যে বলল, বন্ধুরা! তোমাদেরকে ধন্যবাদ! আমি পৃথিবী ধবংসের জন্য অপেক্ষা করি নি। আমি কেবল গুহা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলাম।
–এই বলে পন্ডিত শেয়াল তার পাঠশালার দিকে চলে গেল।
(মূল: Small Deer’s Magic Leaf by Betty Boegehold)
============================
গল্পটি পাঠিয়েছেন- তৌহিদ-উল ইসলাম
সহঃ শিক্ষক
লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
গীতিকার,বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।