সফলতা !

বিখ্যাত কিছু মনিষীর উক্তি দিয়ে শুরু করি…

“সাহস হচ্ছে মৃত্যু থেকে ভীত হওয়া, কিন্তু বাঁচার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।” – জন ওয়েন

“ভয়ের অনুপস্থিতির নাম সাহস নয়, বরং সাহস হচ্ছে এই বিচারবোধ যে, ভয়ের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ অন্য কিছু আছে।” – অ্যাম্বারোজ রেডমুন

“সাহস হচ্ছে ভয়কে রোধ করা, ভয়ের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা; ভয়ের অনুপস্থিতি নয়।” – মার্ক টোয়াইন

আমি কিছুদিন আগে একটি মুভি দেখেছিলাম, After Earth. এই মুভির নায়ক Will Smith তার ছেলে Jaden Smith কে একটি দুরসাহসিক অভিযানে পাঠানোর সময় বলেন—

“Fear is not real. The only place that fear can exist is in our thoughts of the future. It is a product of our imagination, causing us to fear things that do not at present and may not ever exist. That is near insanity. Do not misunderstand me; danger is very real but fear is a choice.”

যারা সাহসী ও সফল মানুষ, তারা ভয় পান না তা নয়। তাদেরও ভয় হয়, কিন্তু তারা ভয়ের সামনে স্তব্ধ হয় না। আসল ব্যাপার হলো, তারা ভয় পাওয়া সত্বেও এগিয়ে চলেন এবং সফলতা লাভ করেন। সফল মানুষরা জানেন, ইঁদুর হয়ে বাঁচার চাইতে মানুষ হয়ে মরাও ভালো। যদিও ইঁদুরের চেয়ে মানুষের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি। তাই আপনি যদি আর একটু সাহস দেখান, সকলের জন্যই তা ভালো হবে। আপনি তা করবেন কি?

কাজেই ভয়কে ঝেড়ে ফেলা বা ভয় থাকা সত্বেও দৃঢ়সংকল্পে আপনার কাজে অগ্রগামী হওয়াই মানুষের মতো আচরণ। ভয়কে অনুসরণ না করে বরং ভয়কে নিয়ন্ত্রণে রেখে আপনার কাজে অগ্রসর হোন। ভয় সত্বেও আপনি যত এগোতে পারেন, ততখানি আপনি মানুষ। আর ভয়কে অনুসরণ করে যতই আপনি ভয় পান, ততই আপনি ইঁদুর বা অন্য কোনো নীচ শ্রেণীর প্রাণীর মতো হয়ে পড়েন। এটি কোনো কল্পনার কথা নয়, কোনো আবেগের কথাও নয়।

আপনার দৈনন্দিন জীবনে সাহসিকতার গুণটি তেমন মনোযোগ পায় না। সাহসিকতা যেন শুধুমাত্র সৈনিক, যোদ্ধা বা কর্মীদের জন্যই প্রয়োজন। আজকাল নিরাপত্তার বিষয়টি যেন সব। সম্ভবত আপনি সবসময় দৃঢ় এবং সাহসী হওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত হয়ে এসেছেন। “এটা খুবই বিপদজনক। এ কাজ করো না। অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিও না। জনতার মধ্যে নিজের দিকে মনোযোগ টেনো না। পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসরণ করো। অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলো না। সন্দেহজনক লোকজনের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। নিরাপদ থেকো।” – আপনি সবসময় এইসব কথাই শুনে এসেছেন।

আমাদের পিতামাতা সবসময় আমাদেরকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ব্যাপারে জোর দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উপর অতিরিক্ত জোর দেয়ার কুফল হলো, এটি আপনাকে প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। কোনো ঘটনায় অংশ নেওয়া বা কোনো ব্যাপারে দায়িত্ব নেয়ার পরিবর্তে ঘটনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবন চালানোর অভ্যাস তৈরি হয়। অর্থাৎ তখন নিজস্ব লক্ষ্য স্থাপনের বদলে, লক্ষ্য অর্জনের পরিকল্পনা করার বদলে, এবং সেগুলির পিছনে আকাঙ্খা নিয়ে ধাবিত হওয়ার বদলে আপনি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন।

কোনো কাজে বা ঘটনায় অংশ নিয়ে কিছু ফল লাভ করার চিন্তা আপনার জন্য ভীতিকর হয়ে ওঠে। কোনো কাজ শুরু করার আগেই সেই কাজে কি কি বিপদ বা ঝুঁকি থাকতে পারে তা ভেবে, পছন্দের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে আপনার সাহস হয় না। আপনি ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারেন না, বরং ঘটনাই আপনাকে ভয় দেখায়। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আপনি কাজ করার চিন্তা বাদ দিয়ে পিছিয়ে আসেন। অবশেষে, নিজের পছন্দনীয় একটি কাজে সফলতা লাভের পরিবর্তে আপনার অপছন্দনীয় বিরক্তিকর কোনো কাজ নিতে হয়, যদিও তা আপনাকে সন্তুষ্টি দিতে পারে না। দুনিয়া আপনাকে যা দেয়, তার থেকে বেশি কিছু আদায় করার সাহস আপনি করেন না। অসফলতার অনুভূতি নিয়ে আপনাকে পরিবার, বন্ধু ও অন্যদের সঙ্গে অসন্তোষপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়, যদিও ভিতরে ভিতরে আপনি সফলতার গোপন বাসনা রাখেন।

মাঝে মাঝে মনে হয় দুনিয়ার সবকিছু বদলে দিতে হবে। কিন্তু সবকিছু উল্টে দেবেন এমন ভাবনা বাস্তবসম্মত নয়। বরং জীবনে আপনার ভাগ্যকে গ্রহণ করুন এবং সেখান থেকেই সর্বোত্তম সুফল বের করুন। জীবন আপনাকে এই মুহূর্তে যা দিয়েছে, তা দিয়েই শুরু করুন। জীবনের বর্তমান অবস্থাকেই আপনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করুন। ভয় ঝেড়ে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যান। প্রথমে স্রোতের সঙ্গে মিশে যান। আপনার একমাত্র আশা থাকবে যে, জীবনের স্রোত আপনাকে অনুকূল অবস্থার দিকে নিয়ে যাবে।

সন্দেহ নেই, জীবনে সত্যিকারের বিপদ আছে যা আপনাকে এড়াতে হবে। কিন্তু সাহসিকতা এবং দুঃসাহসিকতার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমি এখানে বীরোচিত সাহসিকতার কথা বলছি না। আমি বলছি না যে, আপনি নিজের জীবন বিপন্ন করে কোনো জ্বলন্ত প্রাসাদ থেকে রাজকুমারীকে উদ্ধার করুন। সাহসিকতা বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি কল্পিত সব ভয়কে সরাসরি জয় করুন এবং শক্তিশালী একটি জীবন গ্রহণ করুন, যা থেকে আপনি নিজেকে বঞ্চিত করে এসেছেন।

সফলতা লাভের পথে অসংখ্য কল্পিত ভয় আপনাকে তাড়া করে ফিরিয়েছে। চিরজীবনের অভ্যাসমত ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বদলে, ঘটনা ঘটার আগেই নিরাপত্তার চিন্তা ও অসফলতার ভয়ে প্রথমেই পথ ছেড়ে দিয়েছেন। চিরজীবনের অভ্যাসের কারণে ঘটনাই আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আপনি সংকল্প বাদ দিয়ে তেমন জীবন গ্রহণ করেছেন। অথচ আপনি ইচ্ছা করলে ঘটনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে একটু সাহস দেখালেই ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

আমরা সফলতার চাপ নিতে চাই না। ফলে আমরা অন্যদের যোগ্যতার আলোকে দেখি, আর নিজেদেরকে অযোগ্যতার আলোকে। অথচ আমাদের মধ্যেও যোগ্যতা আছে। সাফল্য বলতে আপনি কি বোঝেন, তা যদিও আপনার নিজস্ব ব্যাপার। কখনও সাফল্য মানে একটি ভালো চাকরি পাওয়া, কখনও সাফল্য মানে মনের মত জুটির সন্ধান পাওয়া, কখনও সাফল্য মানে অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ভালো বন্ধুবান্ধব অর্জন করা। এমনকি কারো কাছে সাফল্য মানে সুন্দর একটি সবজীর বাগান বা বড় একটি মুরগীর খামার। অতএব সাফল্য মানে সবসময় অর্থ বা সম্পদ লাভ নয়। হতে পারে খ্যাতি, সম্মান বা প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন।

আপনার কাছে সফলতার অর্থ যা-ই হোক না কেন, তা অর্জনের উপায় হলো সাহসী হয়ে তা লাভ করা এবং ধরে রাখা। আগেই বলা হয়েছে—“সাহস” অর্থ “ভয়ের অনুপস্থিতি নয়, বরং ভয় থাকা সত্বেও নিজের কাজ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নাম সাহস।”

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!