আবুল এবং ভুত

আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগের কথা । এই পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে এক দেশ ছিল। সেই দেশে বাস করত আবুল নামের এক লোক, সহজ সরল তবে একটু বোকা টাইপের । কোন কাজ কাম করত না সারাদিন শুধু বড়শি নিয়ে পুকুর ধারে বসে থাকতো । কারন বড়শি দিয়ে মাছ ধরা ছিল তার নেশা । সে মাছ মেরে বিক্রি করত না তবে মাছ গুলোকে সে শুটকি বানাতো । শুটকি গুলো সে তার ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়া রাখতো আর প্রতিবেশি সবাই কে দেখাত । কারণ সে সবাই কে দেখিয়ে খুব আনন্দ পেত আর সবাই তার মাছ মারার বাহাদুরী দেখে খুব প্রসংশা করতো ।

একদিন হল কি, মাছ মারতে মারতে তার বাড়ীর পাসের সব পুকুরের সব মাছ ফুরিয়ে গেল , কিন্তু মাছ মারা তার নেশা । মাস না মারা পর্যন্ত তার শান্তি নাই মাছ তাকে মারতেই হবে । তাই সে বের হল পুকুরে খোঁজে হাঁটতে হাঁটতে তার পাশের গ্রামে একটা পুকুর খুঁজে পেলো, কিন্তু পুকুর এর কাসে গিয়ে দেখে এক বাউন্ডুলে টাইপে এক লোক বড়শি দিয়া মাস মারছে সে দূর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল।

বাউন্ডুলে টাইপ এর লোকটা তাকে কাছে ডেকে নিয়ে জিঙ্গাসা করল , “কি হে ! তোমার প্রশংসা তো সারা গ্রামে, সবাই বলে তুমি নাকি খুব ভালো মারতে পারো, মাছ মারবে আমার সাথে? তোমার মত একজন লোক আমার ভীষণ দরকার । আমি এখানকার এক মাছের আড়তে চাকুরি করি। তোমাকে টাকা দেবো , কি মাছ মারবে আমার সাথে ?”

আবুল মিয়া এই কথা শুনে খুশিতে গদগদ এটা যেন তঁার কাছে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি । কত টাকাদিবে কি সমাচার সে কিছুই জিজ্ঞাসা করল না কথা তার ধারনা ভাল-ই পাবে । লোকটির মুখের কথা শুনে এক বুক আশা নিয়ে সে বাড়ী ফিরে এলো। এর পর থেকে দুজনে মিলে মাছ মারতে সুরু করল । এ ভাবে বেশ কিছু দিন কেঁটে গেল ।

পুকুর পারের সরা গাছে যে ভুত থাকতো সে কথা কেউ জানতো না । একদিন হলো কি মাছের কাঁচা গন্ধে থাকতে না পেরে সরা গাছ থেকে একটা ভুত বের হয়ে এলো । ভুতটা বের হয়েই, মাছ খাব! মাছ খাব! বলে চিৎকার চেচামেচি সুরু করে দিল । ভয়ে বাউন্ডুলে লোকটা ভুতের সামনে আবুল কে এগিয়ে দিয়ে মাস গুলো নিয়ে মারলো এক দৌড় । পিছন থেকে আবুল মিয়া অসহায়ের বাউন্ডুলেকে ডাকতে লাগলো, কিন্তু কেউ তার ডাকে সারা দিল না, এমন কি বাউন্ডুলেও না, সে কোথায় গিয়া পালাল সেটা কেউ জানেনা ।

আবুল মিয়া তখন ভুতের ভয়ে থর থর কাপছিল । ভুতটা তখন চিৎকার করছিল আর মুখ দিয়ে আগুন বের করছিল, সজরে এক হুঙ্কার দিতে-ই আবুল মিয়া পুকুরের গভীর গর্তে পা ফস্কে পরে গেলো। পুকুর টা এতটাই গর্ত ছিল যে কেউ একবার পরে গেলে তার আর রক্ষা নাই নির্ঘাত মরতে হবে, এতটাই গভীর, পুকুরটা অনেকটা কুয়োর মত। আবুল মিয়া ঠিক মত সাঁতারও জানেনা, পুকুরের পঁচা পানিতে হাবুদুবু খাচ্ছিল । কারন পুকুরে এততাই পানি ছিল যে সেখানে দাড়ানোর জন্য তার ঠাই হচ্ছিল না। এখন সে উভয় সংকটে পরেছে উপরে ভুত আর পায়ের নিচে মানুষ খেকো মাছ। কোনটা নিচ থেকে তাঁকে কামরাচ্ছিল, কোনটাআবার শিং ফুটিয়ে দিচ্ছিল আবার কোনটা তাকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখাচ্ছিল । তার এই বিপদের সময় সে তার আরৎদার সবাই কেই ডাকছিল কিন্তু সবাই তখন ব্যস্তছিল। তার বিপদের সময় কেউ পাসে এসে দাড়ায়নি । সে খুব কান্না কাঁটি করছিল তখন । পানিতে সাঁতার কাঁটতে কাঁটতে কিছুুক্ষণ পর পায়ের নিচে একটুকরো মাটি খুঁজে পেলো এটি-ই তাঁর বেঁচে থাকার শেষ ভরসা ।

অন্যদিকে ভুতটা রেগে গিয়ে চিল্লাচিল্লি করে সারা দেশ মাথা তুললো ! ভুতের অভিযোগ মাছের গন্ধে তার ঘুমের বেঘাত ঘটানো হয়েছে। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা বলে আরৎদার মহাজন ভুতের পা ধরে মাফ চাইল । এবং ভুতকে খুশি করার জন্য তারা ঘোষণা দিলো যে আবুল মিয়া কে দিয়া তাঁরা আর কখনও তাদের পুকুরে মাছ মারাইবে না এবং তাঁকে বহিস্কার করা হইল । ভুতকে খুশি করার জন্য তাঁরা আরও বহু প্রতিশ্রুতি দিল ।

এদিকে আবুল বেচারার আবস্হা কাহিল চিন্তায় চিন্তায় সে সুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ঠিকমত খাওয়া দাওয়া হয়না, বিপদ থেকে সে কখনও রক্ষা পাবে কি না সেটা সে নিজেও জানে না, সব সময় শুধু আকাশের দিকে সে তাকিয়ে থাকে আর কাঁদে ।

কিছু দিন পর পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল কাল পোষাক পরা এক দল মানুষ , আবুল কে দেখে তাদের খুব মায়া হলো, তাই তারা পুকুরে একটা লম্বা দড়ি নামিয়ে দিলো, এবং আবুল সেই দড়ি ধরেই উপরে উঠে এলো। ছয় মাস দুই দিন পর সে জল থেকে ডাঙ্গায় উঠলো। সে নতুন জীবন ফিরে পেল । কিন্তু আবুলের মন থেকে ভুতের ভয় দূর হয়না, ভুত গুলো তাকে সবসময় তারা করে ফেরে ।

এদিকে কঠোর বাস্তবতা । কাজে খোঁজে আবুল রাস্তায় রাস্তায় ঘোরে, কিন্তু কেউ তাকে কোন কাজ দেয় না, সবাই ভয় পায়, চাকরি দিলে ভুত যদি তাদের উপর ভুতেরা আক্রমন করে ।

এ দিকে যাদের সাথে কাজ করতো তাদের কেউ আর তাঁর কোন খোঁজ খবর নেয় না। প্রয়োজনও মনে করে না।

একদিন আরৎদারের ম্যানেজারর চক্রবর্তী সাহেবের সাথে তার দেখা , চক্রবর্তী সাহেব তাকে কাছে বসিয়ে বলল , “আবুল আমরা তো তোমার সাথে অন্যায় করে ফেলেছি , তা কি করলে তুমি আমাদের ক্ষমা করবে বলো? কি করলে তুমি খুশি হবে?

আমরা তো ঘোষণা দিয়েছি আমরা তোমাকে দিয়ে আর কখনও মাছ ধরাবোনা, ঠিক আছে তুমি কোন চিন্তা কোরোনা আমরা তোমাকে একটা নতুন কাজ জোগার করেদেব । পুকুরে থাকতে তো বহুত শাপলা-শালুক খেয়েছো, এই নাও আমার হাতের RC আর বিরিয়ানি খাও। পরে তোমার সাথে যোগাযোগ করব ।” বলে চক্রবর্তী সাহেব আর সি আর বিরিয়ানি তার সামনে রেখে চলে গেল । পরে সে আর কখনও যোগাযোগ করেনি । আবুল নিজ থেকেও চেস্টা করেছে বহুবার কিন্তু সে পারেনি। কারন তারা বড়লোক উপর তলার মানুষ, তারা সব সময় বাস্ত্য থাকে তাছাড়া প্রয়োজন মনে না করলে সবার সাথে তারা কথা বলেন না।

এভাবে অনেক দিন কেটে গেল এক সময় চক্রবর্তী সাহেব তাঁর দেয়া কথাও ভুলে গেল ।

বহুদিন কারও সাথে কোন যোগাযোগ নাই তাই আবুল মিয়া নিজে থেকেই বাউন্ডুলে কে একটা কল দিল তার ফোেন, উত্তরে বাউন্ডুলে বলল “ভাই আমি খুব অসুস্থ সকালে হাস্পাতালে ভর্তি হইছি। ”

শুনে আবুল বলল, “আমি আপনাকে দেখতে আসি?”

বাউন্ডুলে বলল, “আসেন!”

তার বিপদে বাউন্ডুলে তাকে দেখতে আসেনি তাতে কি হয়েছে, সে তাকে দেখতে যাবে, তার বিপদে পাশে গিয়ে দাড়াবে কারন তার মধ্যে মানবতা আছে। তার জন্য কে কি করল সেতা তার দেখার বিষয় নয় ।

আবুল তার সামর্থ মত ফল কিনে হাস্পাতালে বাউন্ডুলে কে দেখতে গেল।

বাউন্ডুলে হাসপাতালে আবুলকে দেখে তাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!