তিনটা কাজ প্রায় একই সময়ে পর পর ঘটে গেল। যেন ঠিক করাই ছিল আগে থেকে। এটা হলে ওটা হবে। তারপর আরেকটা হবে। মুহূর্তের মধ্যে। সুইচ টিপে দেয়া ছিল। ঘটে গেল পর পর।
উদয় এক প্লেট চটপটি নিয়ে গাছের নিচের চেয়ারটাতে বসে ছিল। সাথে রিয়াদ আর আদিব। আশেপাশে আরো কিছু মানুষ। চটপটি বা ফুচকা নিয়ে। হাসি-গল্পে ঝকঝকে একটা বিকেল। মাত্র ক্লাস শেষে ওরা তিনজনও এসে বসেছে ঝকঝকে বিকেলটার ভাগ নিতে। তখনই একের পর এক তিনটা ব্যাপার ঘটল।
উদয় আয়েশ করে প্রথম চামচ চটপটি মুখে দিল আর বেশ আরামে চোখ বুজল।
গাছের উপর থেকে একটা কাক ঠিক ওর প্লেটের মাঝখানে এক দলা গু করল।
২/৩টা চেয়ার পরের কোনো এক জায়গা থেকে একটা মেয়ে হা হা করে অট্টহাসি হেসে উঠল। কিংবা সেটা ঠা ঠা করেও হতে পারে।
উদয় চোখ খুলে দ্বিতীয় চামচ নিতে গিয়েই গুয়ের দলাটা চোখে পড়ল। চটপটির ঈষৎ হলুদাভ মাখা মাখা ঝোলে সাদা-কালো পাতলা গু আস্তে আস্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে। জলরঙ ছড়িয়ে পড়ার মতো। তবে অবশ্যই গু ছড়ানো দেখার বিষয়টা জলরঙের মতোন অতো মনোমুগ্ধকর না। এমন একটা দৃশ্য থেকে মুখ তুলে ভ্যাবাচেকা চেহারায় অট্টহাসি বরাবর তাকাতেই বুঝল সেই হাসিটাও ওর প্লেট বরাবরই বর্ষিত হচ্ছে। এবং দেখল হাসি ওর বন্ধুদের মধ্যেও কিঞ্চিত সংক্রমিত হতে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। চটপটির ঝোলে গু ছড়িয়ে পড়ার মতোই ওদের মুখেও কেমন একটা মজা পাওয়া ভাব ছড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে। পুরো এক প্লেট চটপটির দুঃখে কষ্ট পাবে নাকি মেয়েটার এমন হৃদয়হীনতায় রাগ করবে বুঝে উঠতে পারা যাচ্ছিল না। তবে মেয়েটা সম্ভবতঃ উদয়ের চেহারায় দিশেহারা ভাবটা বুঝল ঠিকই। ভুস ভুস করে উঠতে থাকা হাসি তৎক্ষণাত গিলে ফেলে একটু বিব্রত হয়ে গেল সে-ও। আমতা আমতা করে উঠল একটু,
স্যরি। মানে, কাকের ইয়ে করার ব্যাপারটা একটু ফানি লাগছিল তো।
উদয় এবার গলায় একটু জোর বা কিছু শব্দ খুঁজে পেল। অন্য পক্ষ বিব্রত হয়ে গেলে রাগের পরিমাণটা বেড়ে যায় না? সেই রাগে একটু আধটু আওয়াজও ফের খুঁজে পাওয়া যায় নিজের গলার ভেতরে। সেই সদ্য পাওয়া শব্দগুলোতে একটু ঝাঁঝও মিশিয়ে দিল,
এতো ফানি লাগলে আমার প্লেটটা আপনি নিয়ে নেন। আসেন পালটা পালটি করি। তারপর আপনার প্লেটের গু নিয়ে আপনি যতো খুশি ফান করেন। আর হাসতে থাকেন।
মেয়েটা বিব্রত হলেও আওয়াজ তো হারিয়ে ফেলে নি। উদয়ের করুণ বেচারা মুখটা দেখে সে যতোটা অপ্রতিভ হয়েছিল, ওর ঝাঁঝ মেশানো শব্দগুলোতে ততোটাই সপ্রতিভ হয়ে উঠল,
আপনার গু আপনার কাছেই রেখে দেন। তবে আমার প্লেট নিতে চাইলে আপত্তি নাই। ৪টা ফুচকা খেয়েছি। বাকিগুলা আপনার। হাসির দাম দিয়ে দিলাম।
বলেই সেই মেয়ে আর তার সঙ্গেরজন উঠে এসে আরেকবার ভ্যাবাচেকা খাওয়া উদয়ের হাতে আধা খাওয়া বা আধা না-খাওয়া ফুচকার প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে বীর-ফুচকা-দর্পে হেঁটে চলে গেল।
ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারতো। তবে হলো না।
রিয়াদ ফিক ফিক করে হাসতে শুরু করল। আদিবও চোরা হাসি লুকিয়ে একটা ফুচকা হাতে নিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলল,
দোস্ত তুই তো নিশ্চই খাবি না, তাই না? মেয়েটা এমনে দিয়া গেল। এইটা খেলে তোর ইজ্জত থাকবে না রে! আমরাই খায়া ফেলি। দে।
আদিব এই কথা বলার আগে পর্যন্ত ইজ্জত নিয়ে তেমন একটা চিন্তাভাবনা করছিল না উদয়। এইবার ইজ্জতে হাত দেবার রাগটা গিয়ে পড়ল বন্ধুদের ওপর।
চুপ শালা! দিয়ে গেছে যখন খাব না ক্যান? শালা, তোরা এতোক্ষণ একটা কথা কইতে পারিস নাই! এখন গেছে আর মুখে কথা ফুটছে, না? হারামীগুলা!
এবার দুইজনেই ফিক ফিক হাসি আর চোরা হাসি বাদ দিয়ে হো হো করে হেসে উঠল।
রিয়াদ হাসতে হাসতেই যোগ দিল এবার, এ্যাই ব্যাটা, ক্ষেপিস ক্যান? ব্যাপারটা ফানিই তো ছিল। তুই হুদাই রেগে গেছিস মেয়েটার উপ্রে।
আদিবও সায় দিল, দ্যাখ অন্যকেউ হইলে কিন্তু তুইও হাসতি। আমরাও হাসতাম। তুই হুদাই এমন সেন্টু খাইলি ক্যান? কেউ মজা করলে নিতে পারস না?
কথাগুলো যদিও সত্যি এবং ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলে একটু যৌক্তিকও, কিন্তু এই মুহূর্তে উদয়ের এতো যুক্তি শুনতে মোটেও ইচ্ছা করছিল না। পারলে সেই কালপ্রিট কাকটাকে খুঁজে বের করে সে পাবলিক টয়লেটে নিয়ে ফ্লাশ করে দিত। ওই যে একটা বিজ্ঞপন ছিল না? চুয়িংগামের? এক পিচ্চির আইসক্রীমে এক বদের হাড্ডি কাক প্রতিদিন হাগু করে। একদিন পিচ্চিটা চুয়িংগাম খেয়ে এ্যাত্তো বড় বেলুন ফুলিয়ে উড়তে উড়তে সেই কাকটার ঠিক মাথার ওপরে উঠে যায়। অতঃপর – প্রতিশোধ! বেলুনটার মতোই একটু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতিরঞ্জিত কাহিনি। তবে, অনুভূতিটা উদয় এখন বুঝতে পারছে। নির্ঘাত ওই বিজ্ঞাপনটা তার মতো ভুক্তভোগী কারোরই চিন্তাপ্রসূত হবে। হঠাৎ এতদিন পর সেই বিজ্ঞাপন নির্মাতার জন্যে মমতায় উদয়ের ভেতরটা কেমন আর্দ্র হয়ে উঠল।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।