বড় হওয়া— রেনেসাঁ সাহা

অনন্যা জানে, এরপর কী হবে । সম্রাট বাড়ি ফিরে দেখবে, অনন্যা বাড়ি নেই। তাতে ওর কোন হেলদোল হবে না। দিব্যি ঠ্যাং নাচিয়ে আই পি এল দেখবে টি ভি তে। আর উইকেট পড়লে, বা চার ছয় হলেই চেল্লাবে। তারপর ৪-৫ দিন বাদে ধীরে-সুস্থে বউকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে আসবে। অনন্যার বাবা মা এর কানে তুলবে যে মেয়ে রাগারাগি করে বাপের বাড়ি চলে এসেছে। তারপর মা-বাবা জীবন অতিষ্ঠ করে তুলবে স্বামীর ঘরে ব্যাক টুগেদার করার জন্য। অবশেষে অনন্যাকে ফিরতে হবে সম্রাটের সাথে। বাড়ি ফিরে অনন্যার সামনে সোফায় বসে যুদ্ধজয়ের হাসি হাসবে “পুরুষোত্তম” সম্রাট। রাগে-দুঃখে অনন্যার চোখ দিয়ে সমানে জল পড়ছে।
সম্রাট আর অনন্যাদের বিয়ে হয়েছে ২ বছর ২ মাস। এর মধ্যে ৩ বার এমন হয়েছে। ৩ বার-ই সম্রাট জিতেছে।
বিয়ের আগে ওদের ১০ বছরের প্রেম ছিল। এখনও তুই তোকারি করে কথা বলে ওরা।
অনন্যার চোখে পড়ল, বুনু ঘরে ঢুকেছে। হাতে র‍্যাকেট। অনন্যা ডাক দিল- “অ্যাই পুঁচু, শোন, এবার নাকি রেসাল্ট খুব খারাপ হয়েছে তোর? তা সারাদিন র‍্যাকেট হাতে ঘুরলে ব্যাঙ পড়াশোনা হবে তোর! উনি সাইনা নেহওয়াল হবেন!” বলেই গিয়ে বোনের কান ধরে মলে দিল ও।
আর যায় কোথায়! ১৯ বছর বয়সী বোনের এহেন অপমান সহ্য হল না। সে এখন স্বাবালিকা। তার কান ধরে টান?!
সেও চেঁচাল- নিজের চরকায় তেল দে! আমার কথা না ভাবলেও চলবে। তুই ঘরে এসে কাঁদছিলি কেন? ঠিক সম্রাটদার সাথে ঝামেলা করে এসেছিস? ২ মাস আগেও তো এভাবেই এসেছিলি তুই!
অনন্যার বড় করা চোখকে কাঁচকলা দেখিয়ে বোন ছুটল মার কাছে-
“মা জান দিদি এবারও ঝগড়া করে এসেছে।”
খেয়েছে। প্রমাদ গুণল অনন্যা। মা এখন কিচ্ছু বলবে না। বাবার বাড়ি ফেরা অবধি অপেক্ষা করবে। রাতে মা, বাবা আর ঠাম্মা সমবেত সঙ্গীত গাইবে খাবার টেবিলে; এ তার ৩ বারের অভিজ্ঞতা।
অনন্যা বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল। সম্রাটটা চিরকালের ল্যাদাবোদা। বোঝার মধ্যে বোঝে কেবল ক্রিকেটটা। ছুটির দিনগুলোতে বাড়িতে বসে বাচ্চা ছেলের মত মাথা খাবে। আর আই পি এল দেখতে দেখতে বউকে ইভিনিং ডিউটি থেকে বাড়িতে আনতে ভুলে যাবে! এই নিয়েই তো এবারের ঝামেলা! সব থেকে বড় কথা – কিছুতেই কোন হেলদোল নেই!
অনন্যা একটা লম্বা ঘুম দিল। রাত ৮.৩০ টায় ঘুম ভাঙল তার। ঘুম ভাঙতেই পায়ের কাছে বাবা। মাথার দুপাশে মা আর ঠাম্মা। অনন্যা পারলে বিরক্তিতে কেঁদে দেয়। সমবেত অ্যাটাক শুরু হবে; এমন সময় কলিংবেল বাজল। বোন খুলে দিতে ছুটল।
— মা দেখো, কে এসেছে? সম্রাটদা! মাথাটা টনটন করে উঠল অনন্যার। ৩-৩ টে রাম বাড়িতে, তার ওপর সুগ্রীব এসে জুটল। মা, বাবা , ঠাম্মা উঠে দাঁড়াল। অনন্যাও। বোনের হাতে মিষ্টি দিয়ে সম্রাট সোজা বেডরুমে।
মা নাকি দুঃখ শুরু করল- “দেখ তো বাবা, এই মেয়েকে নিয়ে আর পারি না! তোমার সাথে আবার ঝগড়া করে এসেছে!……” –মার কথাটা শেষ হল না। সম্রাট বলল- “কই না তো! আমাদের তো কোন ঝামেলা হয় নি।” তারপর অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলল- “তুই বলিসনি?”
–“আসলে ওর প্রেগন্যান্সি চলছে। একবার এখান থেকে ঘুরে যেতে চাইল । তা, আমি ভাবলাম, যদি ওর মন ভাল থাকে; ক্ষতি কী?”
বাড়িতে আনন্দের হুলুস্থুলু পড়ে গেল।
অনন্যা রিতিমত হাঁ হয়ে গেছে। এই ডাহা মিথ্যেটা কীভাবে বলল সম্রাট। একটু পড়েই খেতে যাবার আগে ঘর ফাঁকা হতেই অনন্যা ধরল সম্রাটকে –“মিথ্যুক, গুলটা কেন মারলি? তুই আর বড় হলি না রে!এবার সামাল দিবি কীভাবে?”
–“কিসের গুল? এই দেখ তোর রিপোর্ট নিয়ে এসেছি দে সেন ক্লিনিক থেকে।” অনন্যা আবার হাঁ। সেই হাঁ-এ একটা বড় মিষ্টি ঢুকিয়ে দিল সম্রাট।
অনন্যাকে হাত বাড়িয়ে কাছে টানল সম্রাট। সম্রাট ভাবছিল, অনন্যা যদি একবারও বলত তার সম্রাটের জন্য মন কেমন করছে। অনন্যাও ভাবছিল, সম্রাট তো একবার ভুলস্বীকার করতে পারত। কিন্ত ওরা কেউই কিছু বলল না। কেবল সম্রাটের বুকের ওমে অনন্যা গলন টের পাচ্ছিল নিজের। হঠাৎ, অনন্যা সম্রাটের গা থেকে পুরুষ পুরুষ কেমন একটা গন্ধ পেল যেন! যেন সম্রাট একদিনেই অনেক বড় হয়ে গেল।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!