হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১২তম পর্ব
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু দিনের দাওয়াত গ্রহনের জন্য কেউ এগিয়ে এল না বরং হযরত মুছা (আঃ) এর প্রতি আরও কঠিন খারাপ ব্যবহার করতে লাগল। হযরত মুছা (আঃ) তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আল্লাহার দরবারে তৃতীয় বার গজবের জন্য দোয়া করলেন। আল্লাহ তায়ালা তখন দেশে ব্যাঙের প্রাদুর্ভাব ঘটিয়ে দিলেন। ব্যাঙের উপদ্রপ এত পরিমাণ বাড়ল যে মানুষের ঘরে বিছানায় খাবার ঘরে রান্না ঘরে পাতিলের ভিতরে, কলসির ভিতর, ব্যাগের মধ্যে পকেটে সর্বত্র ব্যাঙের উপদ্রপ, দেশের ফলমূল খাদ্য শস্য সব কিছু ব্যাঙরা শেষ করে দিল। শুধু খেয়ে শেষ করে তাই নয় প্রসাব-পায়খানা করে সর্বত্র স্তূপ করে রাখত। রাস্তা ঘাটে রাজদরবারে বহু তলা অট্টলিকার উপরে কোথাও তিল ধরনের স্থান ছিল না।
ব্যাঙের উপদ্রপ শেষদিকে এত পরিমাণ বাড়ল যে মানুষের পথ চলা কঠিন হয়ে পড়ল। শুধু ব্যাঙ্গের আধিক্য মানুষের বিরাট ক্ষতি করত তা না, ব্যাঙের মুখের লালাটা ছিল ভীষণ বিষাক্ত, মানুষের শরীরে লাগলেই চামড়া উঠে যেত। ক্ষতের সৃষ্টি হত। মানুষ যন্ত্রণাই দিবারাত্র ছটফট করতে থাকত। আর এই ব্যাঙ গুলা দিবারাত্র মুখের সে ফেনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখত। খাবার সাথে যারা এই ফেনা ভুলে খেয়ে ফেলত তারা আর বাঁচত না। এমন অবস্থায় দেশের হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে লাগলো। তখন ফেরাউনের দলবল নবীর কাছে গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিল। দয়াল নবী মানুষের কান্না দেখে আর সহ্য করতে পারল না। আল্লাহার দরবারে দোয়া করে ব্যাঙ এর উপদ্রুপ থেকে দেশবাসীকে মুক্তি দিলেন। দেশবাসী কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেল। কিন্তু পরে আর কেউ তা ঠিক রাখল না।
সবাই আগের অবস্থায় ফিরে গেল। প্রতি তিন বছর পর পর এ সমস্ত গজব তাদের উপর আসতে থাকে। এবারেও তারা তিন বছর সুখ সাচ্ছন্দে কাটিয়ে হযরত মুছা (আঃ) এর উপর অত্যাচার শুরু করে। হযরত মুছা (আঃ) অসহ্য হয়ে বদদোয়া করেন। তখন সমস্ত পানি ও পানি দ্রব্য রক্তে পরিণীত হয়। এই ব্যাপার টি শুধু ফেরাউন এর উপর আস্থাবান ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘটে। একই পানি কুপ থেকে বনী ইসরাইল রা এনে রাখত তাও ভাল থাকত। কিন্তু ফেরাউন এর দলের লোকদের পানি রক্তে পরিণীত হত। সে রক্ত খেলে কলেরা রোগে আক্রান্ত হত। দীর্ঘদিন যাবত এই অবস্থা থাকায় দেশের মানুষের চারভাগের একভাগ মারা গেল।এই সময় পুনারায় দেশবাসী হযরত মুছা (আঃ) এর কাছে কাকুতি মিনুতি শুরু করে এমন কি তারা বহুলোকের কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয় গেল।
হযরত মুছা (আঃ) এই অবস্থা দেখে তাদের বিপদ মুক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করল। আল্লাহ তায়ালা গজব উঠিয়ে নেন। এই ভাবে কওমে ফেরাউনের উপর আরও কয়েক ধরনের আযাব আসে। যেমন পঙ্গপালের উপদ্রপ প্লাবন, ভুমিকম্প, ইত্যাদি। এই সমস্ত মো’যেজা দেখা সত্তেও তারা ঈমান আনে নি বা হযরত মুছা (আঃ) কে তার উম্মত, বনী ইসরাইল দের কে নিয়ে দেশ ত্যাগের অনুমতি দেয়নি। বরং তাদের উপর নির্যাতন কর হত। তারা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক পাহারার ব্যাবস্থা রাখা হয়েছিল।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন