রহস্যময় ফ্ল্যাট–যুবায়ের হাসান

“খালাম্মা ওই ফ্ল্যাটে যাইতে আমার ডর ডর লাগে” মিসেস জাহিদ এক ধমক লাগিয়ে দিলেন কাজের মেয়েটাকে, এই দিন দুপুরে কিসের ভয়রে? যা ফ্ল্যাটটা ঝাড়ু দিয়ে আয়। দুরু দুরু বুকে পা বাড়াই ফ্ল্যাটটার দিকে নাসিমা, মিস্টার জাহিদ ইতালি থাকেন, প্রতি বছর কুরবানির ঈদে দেশে আসেন, কিছু দিন থেকে পুনরায় ফিরে যান, এখন তিনি অবশ্য বাসায় আছেন, সামনের সপ্তাই চলে যাবেন, জাহিদ সাহেব মিজমিজিতে একটা দোতালা বাড়ি বানিয়েছেন, একটা ফ্ল্যাটে নিজেরা থাকেন আর অন্যটায় to-let ঝুলিয়ে রেখেছেন, বাড়িটা প্রায় জনমানব শূন্য বললেই চলে, এতো বড় বাড়িটাই শুধু মাত্র মিসেস জাহিদ সাত বছরের ছেলে আরিফ আর কাজের মেয়ে নাসিমা থাকে। মিসেস জাহিদ বেশ কিছুদিন ধরে একটা বিষয় লক্ষ্য করছেন, তা হল নাসিমা ওই ফ্ল্যাটে যেতে ভয় পায়, যদিও ওই ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া এসেছিল কিন্তু দুমাসের বেশি থাকতে পারেনি, দু তিনটে আলতু ফালতু অজুহাত দেখিয়ে কেটে পরেছে, তারপর থেকে আর কোন ভাড়াটিয়া আসেনি ভাড়া নিতে, যতই দিন গড়াচ্ছে ব্যাপারটা ততই অদ্ভুত ঠেকছে আর রহস্যময় হয়ে উঠছে, একদিন নাসিমা বলছিল, ওই ফ্ল্যাটে নাকি অন্য কেও থাকে রাতে ও ওই ফ্ল্যাটটা থেকে হাসি কান্নার আওয়াজ পায়। মিসেস জাহিদ হেসে উড়িয়ে দিলেন কথাটা, বাইরে থেকে তালা মারা থাকে দিনের বেশির ভাগ সময়, ওই ফ্ল্যাটে আবার কে থাকতে যাবেরে। কিন্তু বেশিদিন যেতে না যেতেই আর কাজ করবেনা বলে সুর তুলল নাসিমা, তিনি আর আটকালেননা, গরিবের এই একটা স্বভাব টাকা একটু কম দিলেই আর কাজ করবেনা। সে দিন থেকে তিনি নিজেই ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে ঝাড়ু দিয়ে আসেন। পর পর চার পাঁচ দিন গেলেন ওই ফ্ল্যাটে। নাহ কই কোন ভয় লাগছেনা, মনে মনে ভাবলেন, ছোট মেয়ে ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। দিন যায় রাত আসে, তবে ভাড়াটিয়ার কোন দেখা নেই। হড়াৎ এক রাতে তিনি ব্যাপারটা খেয়াল করলেন, রাত তখন ১২ টা বাজে, পাশের ফ্ল্যাটে কে যেন টেবিল সরাচ্ছে, মিসেস জাহিদ আস্তে আস্তে উঠে গেলেন, দরজা খুলে দেখলেন পাসের ফ্ল্যাটের তালাটা যেভাবে লাগিয়েছিলেন ঠিক অমনি আছে, কোন শব্দ ছাড়াই তালাটা খুলে ফেললেন, ভেতরে ঢুকেই একটা শক খেলেন, সকালে যে টেবিলটাকে তিনি এ মাথাই রেখেছিলেন সেটা এখন কে জানি বাথরুমের সামনে এলোমেলো ভাবে রেখে দিয়েছে। মিসেস জাহিদ কি মনে করে জানি দানে ফিরলেন সাথে সাথে শরীরটা ঝাঁকি দিয়ে উঠল, স্পষ্ট বুঝতে পারলেন রান্না ঘরের দরজা থেকে ঝট করে কেও একটা সরে গেল, আর নই তাড়াতাড়ি ওই ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে ঘরে এসে দু গ্লাস ঠাণ্ডা পানি খেয়ে সুয়ে পরলেন, একটু ঘুম ঘুম এসেছিল সবে আমন সমাই কে যেন ঠক… ঠক… করল দরজাই দেয়াল ঘড়ির ঘণ্টার কাটা তখন ২ টার ঘর ছুঁই ছুঁই করছে, এতো রাতে আবার কে এলো তিনি তাড়াতাড়ি উঠে দরজার কাছে চলে গেলেন, লুকিং গ্লাসে চোখ রেখে কাওকে দেখতে পেলেননা, সাহস করে দরজাটা খুলে ফেললেন নাহ কেও নেই, কিন্তু তিনি সত্যি সত্যিই আওয়াজ পেয়েছেন, যাই হক করে রাতটা কাটিয়ে পরদিন সব ঘটনা আরিফের বাবাকে জানালেন, প্রথম বিশ্বাস করতে না চাইলেও দুদিন থেকে ব্যাপারটা সত্যি হয়েই ধরা দিল তার কাছে, তার কিছুদিন পরে ওই বাড়ি বিক্রি করে সোজা ঢাকায় চলে আসলেন। তারপর আর যাওয়া হয়নি ওই বাড়িতে।

 

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!