বেগুনভর্তা

চাষিঘরের জামাই শ্বশুরবাড়ি গেছে একা। সেখানে খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে মেখে পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে বেগুনভর্তা আর গরম ভাত খেতে দিয়েছে। অন্য সব সালুনের স্বাদ ফেলে এটাই মনে ধরেছে জামাইর। আবার খেতে হবে, তাই নামটা জপে জপেই আসছিল।
পথে পড়েছে ছড়া, বর্ষার দাপটে ফুলে ফেঁপে বিশাল হয়ে উঠেছে। পার হওয়ার জন্যে আছে একটা মাত্র বাঁশের সাঁকো, ধরার কিছু নেই। বিকল্প কোনো পথও নেই। অগত্যা পা টিপে টিপে সেটা পার হওয়ার ঝুঁকি নিতেই হলো।
কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে ভারসাম্য রেখে সাঁকো পার হতে গিয়ে সবটা মনোযোগ তো ঢেলে দিতে হয়েছে সে কাজে। ওপারে পৌঁছে দেখে, আরে, সেই তরকারির নামটা তো ভুলে গেছে!
আহ্‌, কিছুতেই মনে পড়ছে না-পটল, পেঁপে, কাঁকরোল, ঝিঙে, মুলা, শসা-কত সবজির নাম মনে পড়ছে কিন্তু আসলটা কিছুতেই মনে আসছে না।
হারানো নাম হাতড়াতে হাতড়াতে উদ্ভ্রান্ত চাষি বাড়ি ফিরে বৌকে ডেকে বলল, হ্যাঁ রে, তোর বাপের বাড়ি আজ যা খেতে দিল, সেটার কী নাম?
বৌ বলল, ওমা, আমি কীভাবে বলব? খেয়েছ তুমি বলব আমি, এটা কেমন কথা?
চাষি বলে, বাহ্‌, তোদের বাড়িতে কী কী খায়, কোনটা কোনটা বেশি স্বাদ হয়, সে-তো তুই-ই জানবি!
বৌ অবাক কণ্ঠে প্রতিবাদ করে, আরে, আমি কি গণক যে এখানে বসে ওখানকার খবর বলে দিতে পারব! তারপর একটু গর্বিত কণ্ঠে না বলে পারে না-তা ছাড়া, আমার মায়ের সব রান্নাই তো দারুণ স্বাদ হয়।
চাষি একটু মেজাজি। এসব শুনে বিগড়ে গেল তার মেজাজ। বৌকে পিটুনি দিল আচ্ছাসে।
হৈচৈ শুনে পাশের বাড়ির ভাবি হা-হা করে বলে ওঠে-আহাহা, একরত্তি বৌটাকে মেরে একেবারে বেগুনভর্তা বানিয়ে দিল।
অমনি চাষি চিৎকার দিয়ে ওঠে-এটা বললেই তো হতো। বেগুনভর্তার কথাই তো বলছি আমি।
মেজাজ তার ভালো হয়ে গেল। আহা উহু করে বৌকে আদর করতে গেল। বৌ ঝাঁঝিয়ে উঠতেই সে একেবারে হাত ধরে অনুনয় শুরু করল।
তা দেখে প্রতিবেশী ভাবি প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিল বৌয়ের গায়ে হাত তোলা চলবে না, তুই-তোকারি করাও চলবে না। তখন জলভরা চোখে নতুন বৌয়ের মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।

আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম
সূত্রঃ প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৬, ২০০৮

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!