হযরত মুসা (আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১০তম পর্ব

হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-নবম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সমগ্র এলাকার বাতাস এমন ভাবে দূষিত হল যাতে করে অতিথিবৃন্দের লোকজন অনেকে মারা গেল। অনেক আহত হল। বাকি যারা জীবিত ছিল তারা প্রাণ নিয়ে দৌঁড়ালো। ছুটাছুটি করে কে কোথায় গেল, কোন  দিশা ছিল না। পিতা, পুত্র, মা, মেয়ে, এমন ধরনের বহু দর্শকের সমাবেশ ঘটেছিল। কিন্তু এ ভয়াবহ ঘটনার পরে নিজ নিজ আপনজনকে কেউ আর কাছে পায়নি। তাই যারা জীবিত ছিল তারা সকলে ভয়ে এ দিক সে দিক চলে গেল। হযরত মুছা(আঃ)এর প্রতি আল্লাহাতালার নির্দেশ ছিল তিনি যেন  ফেরাউনের সাথে দুর্ব্যবহার বা বে-আদবী না করে। যেহেতু সে তার পালক পিতা অতএব তাকে সম্মান প্রদর্শ করা  মানবীয় তাহজিব। এ বিষয় আল্লাহা হযরত মুছা (আঃ) কে স্মরণ করতে দ্বিধা করেনি। তাই হযরত মুছা (আঃ) এ যাদু প্রদর্শী অনুষ্টানে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেল। তার পরে সঙ্গে সঙ্গে ফেরাউন হেদায়েতের দাওয়াত দিতে যাওয়া একটি বিরক্তিকর আচারন মনে করে তিনি সোজা নিজ বাড়িতে চলে আসলেন এবং আল্লহা তালার শুকরিয়া আদায়কর ধ্যান মগ্ন হলেন।

ফেরাউন একদিন একরাত পরে নিজ মহলে ফিরে এসে রাজদরবারে তার সুউচ্চ ইমারাত, বাগ-বাগিচা ও খাস মহলের অবস্থা দেখে বসে পড়ল এবং দীর্ঘ সময় ধরে নির্বাক হয়ে অনুশোচনা করল। তার পর চারিদিকে লোক পাঠিয়ে তার মন্ত্রী পরিষদ ও রাজকর্মচারিদের ডাকল এবং অতিসত্বর রাজ দরবার পুনরায় নির্মানের হুকুম দিলেন। সেই সাথে একটি উচ্চমিচনার তৈরি করার জন্য হামান কে হুকুম দিলেন। সেখানে উঠে সে মুছার খোদার কার্যবলী  লক্ষ করবে। অতপর সে আছিয়ার কক্ষে প্রবেশ করে দেখল তার ঘরে সব কিছু অক্ষত আছে।

তখন ফেরাউন মনে করল সর্পটি এ পর্যন্ত আসার সুযোগ পায়নি। সে নানা বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা আরম্ভ করল। এ সময় আছিয়া মাথার চুল আচড়াতে গিয়ে তার চিরুনিটা মাঠিতে পড়ে গেল। তখন তিনি বলে উঠলেন অত্যাচারি ফেরাউন ধ্বংস হোক। ফেরাউন আছিয়ার কথা শুনে জিজ্ঞাসা করল,তুমি আমার ধ্বংস কামনা করছ? আছিয়া বললেন হ্যাঁ। ফেরাউন জিজ্ঞাসা করল তুমি কি মুছার আল্লাহার উপর ঈমান এনেছ। আছিয়া  বললেন, হ্যা! ফেরাউন বলল, তাহলে আমি তোমাকে হত্যা  করব। আছিয়া বললেন আমি তোমার হত্যার ভয় করি না এবং তোমার ন্যায় একটি কপট, মিথ্যাবাদী কে কোনরূপ সম্মান প্রদর্শন করতে রাজি নই। তখন ফেরাউন তাকে প্রহর করতে আরম্ভ করল।

আছিয়া এই সময় আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। ফেরাউন আছিয়ার মারধর করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তখন কোতোয়াল ডেকে বলল, এ বিশ্বাসঘাতককে মাঠে নিয়ে উলঙ্গ করে ময়দানে শুইয়ে দাও এবং হাত পায়ে পেরেক মেরে মাঠির সাথে আটকিয়ে দাও যেন সে নড়াচড়া করতে না পারে। অতপর তার বুকের উপর গরম পাথর চাপা দাও। এর পরে যদি সে সংশোধন না হয়, তবে তার হাত পা কেটে ফেল এবং সর্বশেষ তাকে হত্যা কর। কোতয়াল ফেরাউনের নির্দেশ অনুসারে আছিয়ার উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালাল। আছিয়া এ সময় জোরে জোরে আল্লহার নাম স্মরণ করতে থাকেন। হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাকে বেহেস্ত দেখান এবং যেখানে তিনি বসাবস করবে সে স্থানটি তিনি তাকে দেখান। অতপর বেহেস্ত থেকে একটি আপেল এনে তাকে খেতে দেন।

যখন তিনি আপেল খেলেন তখন তার প্রান বায়ু বের হয়ে গেল। যাদু প্রদর্শন ও ধ্বংসলীলার পরে ফেরাউন হযরত মুছা (আঃ) ও বনি ইসরাইলের প্রতি ভীষণ কঠোর হল। তাদের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করল। বাড়িঘর লুটপাট করতে আদেশ দিল। মেয়েদের অপরহন করতে আরম্ভ করল। এমন কি কয়েক দিন পর বনি ইসরাইলদের প্রতি এক নির্দেশ জারি করল। সেটা কোন মহিলা পুত্র সন্তান প্রসাব করলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করা হবে। এবং প্রসাবকারি ফেরাউনের দরবারে দাশি গিরি করে জীবন কাটাতে হবে। কিবতীরা যেসব পুরুষ কে হন্দেহ করবে তাদের রাজ দরবারে গোলাম হিসাবে জিবন-যাপন করতে হবে।

বনি ইসরাইল এর সব মানুষ দৈনিক একবার খাবে। অতিরিক্ত খাদ্য নষ্ট করতে পারবে না। যদি কেউ অধিক খাবার দায়ে দোষী বব্যাস্থ হয় তাকে হত্যা করা হবে। বনি ইসরাইলের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি না হয়ে যেন দিন দিন হ্রাস পায় এ জন্য এ আইন পাশ করা হল। বনি ইসরাইলেরা ফেরাউনের চতুর্থখী আক্রমণের ফলে এমন ভাবে নিপীড়িত হচ্ছিল যাতে তাদের ধৈর্য ধারন করা কঠিন হয়ে  পড়েছিল। একদা তারা গিয়ে হযরত মুছা (আঃ) কে  বলল, আপনি দেশে এসে ফেরাউন কে এমন ভাবে ক্ষিপ্ত করেছেন, যাতে এখন আমাদের জানমাল নিয়ে টিকে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না। হযরত মুছা(আঃ) বনি ইসরাইলদের কোন সদউত্তর দিতে পারলেন না।

শুধু বললেন আল্লাহ বোবা নয়, অন্ধ নয়, তিনি সবকিছু দেখছেন। তিনি অচিরেই একটা ব্যাবস্থা করবেন। ফেরাউন এত বড় মো’জেযা দেখে হেদায়েত গ্রহন করল না। বরং তার উজির দের কে বলল, সে বিদেশী উচ্চমান সম্পন্ন যাদুকরের নিকট প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছে, অতএব তার সাথে বুঝাপড়া আমাদের দেশী যাদুকরের কাজ না। এজন্য বিদেশী যাদুকর থেকে মুছা (আঃ) এর সমমানের প্রতিযোগীদের দ্বারা ব্যাবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন। তবে সে পর্যন্ত যেতে চাই না। তার পূর্বে মুছা কে হত্যা কে ফেলব। যদিও হযরত মুছা (আঃ) কে হত্যা করার কথা ঘোষণা দিল কিন্তু সে মর্মে সঠিক কর্মপন্থায় কথা বলল না। যেহেতু ফেরাউন খোদাই দাবী করত।

সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত মুসা(আঃ) এর মোজেযাপূর্ণ নয়টি ঘটনা-১১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।