‘তখন ক্লাস ফোর ফাইভে পড়ি। আব্বার সাথে বাজারে গেছিলাম। বিকাল শেষের দিকে তখন। বাজার থিকা ফিরতেছি, আমি একাই। আব্বা বাজারেই ছিল। আমার কাছে মাছ দিয়া দিছিলো যেন বাড়িতে মাছ কুটতে, রানতে (রাঁধতে) পারে আগে আগেই।
বাজার থিকা ফেরার পথে আমাদের বাড়ির আগে প্রায় মেইলখানেক রাস্তা চরা ক্ষেত। ওই সময় ক্ষেতে কোন ধান বা পাট কিছু ছিল না, তাই ক্ষেতের মাঝখান দিয়া আইল (দুই ক্ষেতের মাঝখানে মাটি দিয়ে তৈরি সরু সীমানা) ধইরা হাইটা ফিরতাছিলাম। সন্ধ্যা হইতে খুব দেরি নাই। অন্ধকার কেবল নামা শুরু করছে। চারিদিকে ঝাপসা হইতাছে আস্তে আস্তে।
হঠাৎ মনে হইলো সাথে কেউ আছে! কেউ আসতেছে পিছে পিছে, এইরকম লাগল। আমিও মনে মনে চাইতাছিলাম কেউ সাথে থাকলে ভাল হইত, কারণ, সন্ধ্যার আগ দিয়া ভয় ভয় লাগতেছিল! দেখার জন্য পিছনে তাকায় দেখি কেউ নাই! অস্বস্তি আরও বাড়ল। তাইলে কি ভুল বুঝলাম?
আবার হাঁটা শুরু করছি, আবার একই রকম মনে হইল – কেউ আসতাছে সাথে! আবার তকাইলাম, কেউ নাই! ভাল কইরা দেখলাম কুকুর, বিড়াল আছে নাকি। তাও নাই!
আমার তখন অনেক ভয় লাগা শুরু হইলো! জোরে হাঁটা শুরু করলাম। এইবার মনে হইলো কী যেন আমার হাতের মাছ ধইরা টানতেছে!! আমার তখন অবস্থা খারাপ! দৌড় যে দিমু সেই উপায়ও নাই। ওইখান থিকা আমাদের বাড়ি আরও অনেকখানি দূর। অবশ্য কাছাকাছি ফুপুর বাড়ি ছিল। এইদিকে মাছ ধইরা কী যেন টাইনাই যাইতাছে! উপায় না দেইখা ফুপুর বাড়ির দিকে দিলাম দৌড়।
ফুপু, ফুপা দুইজনই ছিল বাড়িতে। গিয়া কইলাম সব! উনারা আমার মাথায় হাত বুলায়া কি কি যেন সব দোয়া দরূদ পইড়া ফু দিয়া দিল। তারপর বাড়িতে দিয়া আসলো।’
‘এইটা তো কমন ঘটনা। ধুরো! ‘ – আমি বললাম এ পর্যন্ত শুনে।
‘শেষ হয়নাই এখনো!’
‘তাইলে?’
‘বাড়িতে আইসা দেখি মাছের গায়ে বেশ কয়েকটা খামচার দাগ!!’
২.
– ‘বর্ষার সময় আমাদের স্লুইস গেটে মাছ ধরে সবাই, তা তো জানস-ই।’
– ‘হু’
– ‘ক্লাস সেভেন এইটে থাকার সময়ের ঘটনা। জলিল স্যার রে তো চিনস? ওই যে আমাদের কলেজের ফিজিক্যাল টিচার প্লাস লাইব্রেরিয়ান ছিলো’
– ‘হু, চিনসি, বল্।’
– ‘স্যারের বাসা তো আমার বাসার কাছেই ছিলো। স্যারের দুই ছেলে ছিলো বড় বড়। ওই বার বর্ষার সময় একদিন উনারা আমারে বলল – চল্ মাছ মাইরা আসি। এমনিতে প্রতি বছরই যাইতাম মাছ মারতে। জানস-ই তো সারা রাত ধইরা মাছ মারা চলে ওইখানে।
তো সেইদিন বৃষ্টি ছিলো। তাই লোকজন কম। আমরা গেছিলামই রাত ১২ টার দিকে। ১ টা ১:৩০ টার দিকে মোটামুটি লোকজন নাই হয়া গেল। আমরাও চিন্তা করতেছিলাম চইলা আসমু। তা দূরে দেখি যে নদীর মধ্যে আলো জ্বলে, নৌকার আলোর মতো। আমরা ভাবলাম লোক যেহেতু আছে আরেকটু পরে যাই।
যাইহোক, আরও ঘণ্টাখানেক পর একটা মাছ আটকাইলো। এতো শক্তি করতাছিলো যে আমরা তিনজন মিলা তুলবার পারতাছিনা! অস্বাভাবিক শক্তি!
হঠাৎ কইরা দেখি ওই যে দূরে যে আলো টা ছিলো সেইটা অনেক দ্রুত আমাগোর দিকে আগায়া আসতাছে! মেশিনের নৌকাও এত জোরে চলে না। অনেক দ্রুত!
জলিল স্যারের বড় ছেলে একবার খালি কইল – মাছ রখ্, দৌড়া! আমরাও বিপদ বুইঝা দিলাম দৌড়! ওই আলোটা ততক্ষণে প্রায়ই কাছাকাছি চইলা আসছে। আমরা আর পিছনে না তাকায়া দৌড়াইতাছি। পিছন থেইকে শুধু একটা গলা ভাইসা আসলো – এইবারের মতো বাঁইচা গেলি!
শেষ কথা:
ভুতুড়ে পরিবেশে গভীর রাতে এইসব কাহিনী শুনতে নেহাত মন্দ নয় বরং কেমন একটা গা শিউরে ওঠা অনুভূতির জন্ম দেয়। আর দিনের আলোতে বা আলো ঝলমলে অট্টালিকায় হাসির উদ্রেক করে!
অশরীরী বা ভুত বলে কি কিছু আছে? আমি কখনো দেখিনি। রাত বিরাতে একা একা বাসায় ফিরেছি কবর কিংবা বড় বড় গাছের নিচ দিয়েও। নাহ, কখনো দেখা মেলেনি।
তবে এক প্রকারের ভুত আছে যারা দিব্বি সশরীরে আমাদের আসেপাশেই সবসময় ঘুরে বেড়ায়। আর সময় বুঝে ভুত হয়ে অদ্ভুত কোনো কাজ করে দিব্বি হাওয়া হয়ে মিলিয়ে যায় সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে!
এরা গ্রামের কোন মেয়ে রাতের বেলা প্রাকৃতিক কাজে বের হলে ভুত হয়ে আছর করে ধর্ষণ করে দিব্বি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ভুতদের অনেক ক্ষমতা থাকে, সাথে আছে ভেল্কিবাজি! তাই তাদের ধরা যায় না।
শুধু কি তাই? আধুনিক ভুতেরা দিনের বেলাতেও শরীর ধারণ করে এখানে সেখানে বোমা ফাটিয়ে আবার ফুট করে অশরীরী হয়ে যায়। অশরীরী-ই হয় বৈকি, না হলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না কেন?!!
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।