…একটা এক-পা ওয়ালা ভূত গাছের উপর ঘুমাচ্ছিলো। হঠাৎ ধপাস শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে চুরমার। শব্দটা কিসের?
ভেবে কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছে না। হঠাৎ আবিস্কার করলো, সে গাছের নিচে। কী ব্যাপার সে তো গাছের ওপরেই শুয়েছিলো।
এতোক্ষণে ঘটনাটা বুঝতে পেরেছে।
সে গাছের ডালে চিৎ হয়ে ঘুমাচ্ছিলো। ডালটা ছিলো চিকন। ঘুমের ঘোরে যেমনি একটু কাত হলো, অমনি ধপাস করে সোজা নিচে। আর এই ধপাস শব্দেই তার ঘুম”
” গেলো ভেঙ্গে।
যাই হোক। সে এখন দেখছে কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কিনা। কিছুক্ষণ হাত-পা-মাথা নেড়েচেড়ে বুঝলো। নাহ্ ব্যাথা পায় নি। আর যা-ও পেয়েছে, তাও একটু।
এবার সে উঠে দাঁড়ালো। একপায়ে লাফাতে লাফাতে এগুতো লাগলো। কিছুদূর যেতেই দেখে এক বাঘ গাছের নিচে বসে আছে। বাঘটা কিন্তু সত্যি বাঘ না। ভূত বাঘ। বাঘটা তাকে দেখেই এমনভাবে হাসলো যেন সে তার কতদিনের চেনা।
ভূতটা বলেই ফেলল, “তুমি আমাকে চেনো নাকি?”
“হ্যাঁ। এই যে কিছুক্ষন আগে থেকে। এই যখন তুমি ধুপ করে গাছ থেকে পড়লে। তা তুমি হাঁদার মতো কাত হতে গেলে কেনো?”
ভূতটার তো লজ্জায় মাথাকাটা যাবার মত অবস্থা।
তারপর বাঘ আবার বললো, ‘ আচ্ছা…বাদ দাও। চলো আমরা বন্ধু হই। আমরা দুজন বন্ধু হলে ভালোই হবে। তোমার হবে একটা বাঘ বন্ধু। আর আমারও হবে একপা-ওয়ালা সুন্দর একটা বন্ধু।”
ভূতটা ভাবলো, তাইতো একটা বাঘ বন্ধু থাকলে ক্ষতি কি? সেও রাজী হয়ে গেলো।
তারপর দু বন্ধুতে গাছের নিচে বসে কত রকম কথা। সুখের কথা, দুখের কথা, বন্ধুদের কথা, খেলাধুলার কথা আরও কত কি!
অনেক কথার পর বাঘ ভুতটা বললো, “আমি কিন্তু তোমাদের এ জঙ্গলের বাঘ না। মনের দুঃখে হাঁটতে হাঁটতে এই বনে চলে এসেছি।এখন আর পথ খুঁজে পাচ্ছি না।”
ভূতটা জিজ্ঞেস করলো, ” কি দুঃখ তোমার?”
বাঘ তখন দুঃখের কথা বলতে লাগলো, “জানো, আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে খুব মজা করে খেলছিলাম।অবশ্যি তখন খেলার সময় ছিলো না। ছিলো পড়ার সময়।লুকিয়ে লুকিয়ে খেলছিলাম। হঠাৎ কোত্থেকে বাবা এসে হাজির। জানোই তো বাঘদের রাগ একটু বেশিই থাকে।আমার বাবার তো আরও বেশি। আমাকে কি করলো জানো। এতোগুলোর বন্ধুর সামনে ঠাস করে এক চর মারলো। বললো, “যা…পড়তে বস…!!!” তখন রাগে-দুঃখে-অপমানে আমি কে৬দে ফেলেছিলাম। আমার বন্ধুরা তো ততক্ষণে চম্পট। তারা আড়ালে থেকে সব দেখছিলো আর হাসছিলো। তাই তো আমি দুচোখ যেদিক যায় সেইদিকে হাঁটতে হাঁটতে এইখানে চলে এসেছি।এখন পথা হারিয়ে বসে আছি। আবার খুব ক্ষিধেও পেয়েছে।”
এই কাহিনী শুনে ভুত বলে উঠলো, “আর যাই হোক বাপু, কাজটা কিন্তু তোমার একদম ঠিকা হয় নি। ছেলেমেয়েরা দোষ করলে বাবা-মা তো বকবেই। তাই বলে অভিমান করতে হবে? একেবারে বাড়ি-ঘর ছেড়ে দিতে হবে? তোমার বাবা না হয় একটা চড়-ই মেরেছে। তাই বলে এই? একদম ঠিক হয় নি। একদম না।”
বন্ধুর মুখে বাবার পক্ষে কথা শুনে ভুত বাঘটা ভীষণ ক্ষেপে গেলো।
বললো, ” তুমি বাবার পক্ষ নিলে? আমার এখন ভীষন রাগ হচ্ছে।ইচ্ছে হচ্ছে, তোমাকে ধরে ঘাড় মটকে দেই। কপকপ করে খেয়ে ফেলি।”
এই কথা শুনে ভুত তো ভয়ে পড়িমড়ি করে দিলো ছুট। বেচারা একপেয়ে হলে কি হবে। লাফিয়ে লাফিয়ে ভালোই দৌড়ায়। এদিকে বাঘও তাকে তাড়া করছে। হঠাৎ ভুত দেখলো, তার সামনে নদী। নদীর কাছে যেয়ে থামতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। ঝুপ করে পানিতে পড়ে গেলো।বেচারা সাঁতার জানে না। সে কি নাকানি-চুবানি!
…….এতক্ষণে ঘুম ভাংলো ভূতের। তারমানে ঘটনাটা সত্যি না। স্বপ্ন ছিলো?
সে ভাবতে লাগলো, ” যাক বাবা…বাঁচলাম। ভাগ্যিস স্বপ্ন ছিলো। নইলে হাবু-ডুবু খেতে খেতে আজকে প্রাণটাই বেরিয়ে যেত। কি ভয়ংকর!!!”
সে দেখলো সে গাছের ওপরেই আছে। নিচে পড়ে নি। তবে পড়তে কতক্ষণ। যদি সত্যি সত্যিই পড়ে যায়। যদি স্বপ্নটাও সত্যি হয়ে যায় ।
সাত-পাঁচ ভেবে বুদ্ধি বের করলো। এখন সে ঘুমানোর সময় দড়ি দিয়ে গাছের ডালে নিজেকে শক্ত করে বেঁধে নেয়, যাতে কখনো পড়ে না যায়। আর যাই হোক পড়ে গেলে যদি সবাই দেখেই ফেলে কেমন হবে তখন?
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।