বনু কোরাইযার ঘটনা – পর্ব ১

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন আমি ঘর হইতে বাহির হইয়া লোকদের পিছন পিছন যাইতেছিলাম। হঠাৎ পিছনে কাহারো পায়ের আওয়াজ শুনিয়া তাকাইয়া দেখিলাম, হযরত সা’দ ইবনে মুআয (রাঃ) ও তাহার ভাতিজা হযরত হারেস ইবনে আওস (রাঃ) আসিতেছেন। হযরত সা’দ (রাঃ) এর হাতে একটি ঢাল ছিল।

আমি মাটির উপর বসিয়া গেলাম। হযরত সা’দ (রাঃ) পাশ দিয়া চলিয়া গেলেন। তিনি লোহার বর্ম পরিহিত ছিলেন। দীর্ঘদেহী হওয়ার দরুন তাহার শরীরের কিছু অংশ বর্মের বাহিরে ছিল। আমার আশঙ্কা হইল যে, তাহার দেহের এই উন্মুক্ত অংশে শত্রুর আঘাত না লাগে। হযরত সা’দ (রাঃ) স্থূলকায় ও দীর্ঘদেহী দিলেন। তিনি এই কবিতা আবৃত্তি করিতে করিতে যাইতেছিলেন-

لبست قليلا يدرك الهيجا حمل

ما احسن الموت اذا حان الاجل

অর্থঃ একটু থাম, হামল (নামী ব্যক্তি) কেও যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছিতে দাও, মৃত্যু কতই না সুন্দর লাগে যখন উহার সময় উপস্থিত হয়।

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি উঠিয়া একটি বাগানে ঢুকিলাম। সেখানে কয়েকজন মুসলমান সহ হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বসিয়াছিলেন। তাহাদের মধ্যে একজন লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত ছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) আমাকে দেখিয়া বলিলেন, তুমি এখানে কেন আসিয়াছ? আল্লাহর কসম, তোমরা ভাবী সাহস।

তোমার কি এই আশঙ্কা হয় না যে, হয়ত কোন বিপদ হইতে পারে বা যুদ্ধে পরাজয় ঘটিতে পারে, আর তখন আত্মরক্ষার জন্য ছুটাছুটি আরম্ভ হইয়া যায়? অতএব যুদ্ধ চলাকালীন তোমার এইভাবে ঘরের বাহিরে আসা কোনক্রমেই উচিত হয় নাই। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, হযরত ওমর (রাঃ) আমাকে এতবেশী তিরস্কার করিতে থাকিলেন যে, আমার ইচ্ছা করিতেছিল যে, যদি মাটি ফাটিয়া যাইত তবে আমি উহার ভিতর প্রবেশ করিতাম।

এমন সময় লৌহশিরস্ত্রাণ ব্যক্তি মাথা হইতে তাহার শিরস্ত্রাণ উঠাইলে দেখিলাম, তিনি হযরত তালহা ইবনে ওবায়দুল্লাহ (রাঃ)। তিনি বলিলাম, হে ওমর, তোমার ভাল হোক, আজ তুমি এই বেচারীকে অনেক বেশী বলিয়া ফেলিয়াছ। আমরা পরাজিত হইয়া অথবা পালাইয়া আল্লাহ ব্যতিত আর কাহার নিকট যাইব?

হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, হযরত সা’দ (রাঃ) সম্পর্কে আমি আশঙ্কা করিয়াছিলাম তাহাই ঘটিল। কোরাইশের ইবনে আরেকা নামী এক ব্যক্তি লও আমার তীর, আমি ইবনে আরেকা বলিয়া হযরত সা’দ (রাঃ) কে লক্ষ্য করিয়া একটি তীর নিক্ষেপ করিল। তাহার তীর আসিয়া হযরত সা’দ (রাঃ) এর বাহুস্থিত শিরার উপর লাগিল এবং শিরা কাটিয়া গেল। হযরত সা’দ (রাঃ) আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করিলেন, আয় আল্লাহ, বনু কোরাইযার দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি দেখিয়া আমার চক্ষু শীতল না হওয়া পর্যন্ত আমাকে মৃত্যু দিও না।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

বনু কোরাইযার ঘটনা – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।