মক্কা বিজয়ে আনসার (রাঃ) দের ঘটনা – শেষ পর্ব
হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, আমরা এই নির্দেশের পর অগ্রসর হইলাম। কোরাইশের সেই বাহিনীর অবস্থা এই হইল যে, আমাদের প্রত্যেকেই যত ইচ্ছা তাহাদেরকে হত্যা করিল, তাহাদের কাহারই আমাদের আক্রমণ প্রতিহত করিবার ক্ষমতা রহিল না।
হযরত আবু সুফিয়ান (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আজ তো কোরাইশ গোষ্ঠী শেষ হইয়া যাইবে। আজকের পর আর কোরাইশ অবশিষ্ট থাকিবে না। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, যে নিজের দরজা বন্ধ করিয়া ফেলিবে সে নিরাপদ হইবে। যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করিবে সে নিরাপদ হইবে। এই ঘোষণার পর লোকেরা নিজেদের দরজা বন্ধ করিয়া লইল।
(মক্কার বিজয়ের পর) রাসূল (সাঃ) হাজরে আসওয়াদের নিকট গেলেন এবং উহা চুম্বন করিয়া বাইতুল্লার তওয়াত করিলেন। তাঁহার হাতে একটি ধনুক ছিল যাহার এক কোণা তিনি ধরিয়া রাখিয়াছিলেন। একপার্শ্বে একটি মূর্তি স্থাপন করা ছিল মক্কার কাফেরগণ উহার উপাসনা করিত। রাসূল (সাঃ) তওয়াফের সময় সেই মূর্তির নিকট দিয়া অতিক্রমকালে হাতের ধনুক দ্বারা উহার চোখের উপর খোঁচা মারিতেছিলেন আর বলিতেছিলেন-جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
অর্থঃ সত্য আসিয়াছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হইয়াছে, নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।
অতঃপর তিনি সাফা পাহাড়ের নিকট আসিলেন এবং উহার এতখানি আরোহণ করিলেন যেখান হইতে বাইতুল্লাহ শরীফ দেখা যায়। সেখানে কিছুক্ষণ হাত উঠাইয়া দোয়া ও যিকরে মশগুল রহিলেন। আনসারগণ তখন পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়াইয়াছিলেন। তাহারা পরস্পর বলাবলি করিতে লাগিলেন, এই ব্যক্তি (অর্থাৎ রাসূল (সাঃ)) কে তো নিজ এলাকার মুহাব্বত ও আপন বংশের প্রতি মায়া-মমতায় ধরিয়াছে।
যে কারণে হাজার জুলুম অত্যাচার করা সত্বেও আপন কওমকে হত্যা করিলেন না। আগামীতে হয়ত মদিনা ছাড়িয়া তিনি মক্কায়ই থাকিয়া যাইবেন। ইতিমধ্যে রাসূল (সাঃ)-এর উপর ওহী নাযিল হইতে আরম্ভ হইল। তাঁহার উপর ওহী নাযিল হইতে লাগিলে আমরা তাহা বুঝিতে পারিতাম। ওহী নাযিল হইতে আরম্ভ হইলে তাহা শেষ হওয়া
পর্যন্ত আমাদের কেহ তাঁহার প্রতি চোখ তুলিয়া তাকাইতে পারিত না। ওহী নাযিল হওয়া শেষ হইলে তিনি মাথা মোবারক উঠাইলেন এবং বলিলেন হে আনসারগণ, তোমরা কি এরূপ বলিয়াছ যে, এই ব্যক্তিকে তো নিজ এলাকার মুহাব্বত ও আপন বংশের প্রতি মায়া-মমতায় ধরিয়াছে? আনসারগণ বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমরা এই কথা বলিয়াছি। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, তবে আমার নাম কি হইবে? (অর্থাৎ আমি যদি আপন এলাকার মহাব্বতে ও আপন বংশের মায়া-মমতায় প্রভাবিত হইয়া কাজ করি তবে আল্লাহর রাসূল কিরূপে রহিলাম?) নিঃসন্দেহে আমি আল্লাহর বান্দা ও তাঁহার রাসূল। (আমি তাহাই করিব যাহা আল্লাহ তায়ালা বলিলেন। আমি নিজের ইচ্ছামত কিছুই করিব না।) আমি আল্লাহর প্রতি এবং তোমাদের প্রতি হিজরত করিয়াছি।
তোমাদের সহিত জীবন অতিবাহিত করিব এবং তোমাদের নিকট মৃত্যুবরণ করিব। এই কথা শুনিয়া আনসারগণ (আনন্দের অতিশয্যে) কাঁদিতে কাঁদিতে তাঁহার প্রতি ঝুঁকিয়া পড়িলেন এবং বলিতে লাগিলেন, আল্লাহর কসম, আমরা এই কথা শুধু এই জন্য বলিয়াছি, যাহাতে আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল শুধু আমাদেরই হইয়া থাকেন।
আমাদিগকে ছাড়িয়া আর কোথাও চলিয়া না যান, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের প্রতি একান্ত মুহাব্বতের দরুন আমরা এরূপ কথা বলিয়াছি। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল তোমাদিগকে সত্যবাদী বলিয়া জানেন এবং তোমাদের ওজরকে গ্রহণ করিতেছেন (যে, তোমরা একান্ত মহাব্বতের দরুন এরূপ কথা বলিয়াছে)।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
মক্কা বিজয়ে আনসার (রাঃ) দের ঘটনা – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন