এক.
আকাশে তখন অনেক তারা ছিলো। এমন একটা সময়ে মেয়ের হাত ধরে এডওয়ার্ড ডি কস্তা ফিরে এসেছিলো তার গ্রামে। প্রায় বিশ বছর পর তার এই প্রত্যাবর্তন ছিলো। তারপরও আট বছর বয়সী মেয়ের হাত ধরে পূর্বপুরুষের জমিদার বাড়ি খঁুজে পেতে তার মোটেও কষ্ট হয় না। সে আবিষ্কার করে গুটিকয়েক পাকা বিল্ডিং আর দুয়েকটি বাড়িতে ইলেকট্রিক বাল্ব জ্বলা ছাড়া গ্রামের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। হঁ্যা, সত্যিই কোন পরিবর্তন হয়নি। এমনকি নদীটা পর্যন্ত অনেক নদীর মতো শুকিয়ে যায়নি। ঠিক কিশোর কালের মতোই জোনাকির আলোয় পথ চিনে সে তার পূর্বপুরুষের ভিটার দিকে এগুতে থাকে। তার আশ্চর্য সুন্দর মেয়েটি চুপচাপ চারিদিক তাকাতে তাকাতে হাত ধরে এগোয়। কোন প্রশ্ন করে না। যেন নিজেই বুঝে নিতে চায় সবকিছু।
দুই.
রাইসুল আমিন রহিমপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী ছিলেন। নৌকায় করে দূর বাণিজ্যে যেতেন। এখানকার সাবেক জমিদারবাবু একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে যখন সবকিছু বিক্রি করে চলে যাচ্ছিলেন তখন রাইসুল তার দুইশ’ বিঘা জমি নামে বেনামে কিনে নেন। অবশ্য সেসময় তিনি ছাড়া এই তল্লাটে কারো সেরকম সামর্থøও ছিলো না। গ্রামের মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরণের অহংকার জেগে ওঠে। রাইসুল আমিনের দান খয়রাতের হাতও ছিলো ভালো। ফলে গ্রামের মানুষের কাছে সে খুব দ্রুত প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে।
বাহাত্তুর সালের এক বর্ষায় চলনবিল অঞ্চলে নৌকার বহর নিয়ে দূর বাণিজ্যে যায় রাইসুল। যাবার পর মাস ছয়েকের জন্য সে গায়েব হয়ে যায়। সাতটি নৌকার বহরসহ স্রেফ গায়েব। রওনার মাসখানেক পর ঐ একই গ্রামের দুজন মাঝি ফেরত এসে জানিয়েছিলো রাইসুল আমিন এর পুরো নৌকার বহর ডাকাতির কবলে পড়েছে। ডাকাতরা প্রত্যেককে কেটে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। এমনকি রাইসুল আমিনও বেঁচে নেই। কিন্তু দেখা গেল ছয়মাস পরেই রাইসুল আমিন ফেরত এসেছেন বহাল তবিয়তে। সবকিছু আগের মতোই আছে। একেবারে ঠিক সেই আগের মানুষটি। গলায় শুধু একটা রূপার ক্রুশ ঝোলানো। তিনি খ্রীস্টান হয়ে গেছেন। বেঁচে রয়েছেন প্রভু যীশুর কৃপায়। আর তার নতুন নাম হয়েছে রইস ডি কস্তা। কোন এক অজ্হাত কারণে রাইসুল আমিন তার এ নতুন জীবনের শুরু কিভাবে হলো তা গোপন রেখেছিলেন।
গ্রামের মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য এই ব্যাপারটি ছিলো বিশেষ ধাক্কা। এই ধাক্কার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে রাইসুল আমিনকে তারা একঘরে করে। কিন্তু মাস ছয়েক যেতে না যেতেই তাদের এ সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। কারণ রাইসুল আমিনের হাতে টাকা ও কাজ ছিলো যে! আর গ্রামের মানুষের হাতেও ছিলো কাজ এবং টাকার অভাব। কাজেই একবছরের মাথায় তারা আগের মতোই রাইসুল আমিন ওরফে রইস ডি কস্তার সঙ্গে আগের মতোই সহজ হয়ে ওঠে।
যে বছরটায় রইস ডি কস্তা গ্রামে একঘরে হয়ে ছিলেন সে বছরেই এডওয়ার্ড ডি কস্তার জন্ম। রইস ডি কস্তার জন্য একঘরে হয়ে থাকাটা খুব একটা সমস্যার ছিলো না। কিন্তু এডওয়ার্ড ডি কস্তার জন্মের সময় এটা একটা প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। গ্রামের কোন ধাত্রীকেই এই বাচ্চা প্রসবকালীন থাকতে রাজি করানো যায়নি। ফলে বাচ্চা জন্মালো ঠিকই, মারা গেল বাচ্চার মা। আর এর ঠিক মাস খানেক পরেই রইস ডি কস্তা আরেকটা বিয়ে করতে বাধ্য হলেন। সম্ভ্রান্ত খ্রিস্টান ঘরের এক মেয়েকে। এডওয়ার্ড ডি কস্তার তিনি সম্পর্কে সৎ মা হলেও বাস্তবে আসল মা হয়ে গেলেন। পরবতীূকালে এডওয়ার্ড ডি কস্তার কথা বিবেচনা করেই তিনি আর কোন সন্তান নেননি। অথবা এমনও হতে পারে তিনি ছিলেন বন্ধ্যা।
তিন.
এক গ্রামে এক পরিবার খ্রীস্টান হলে সাধারণত ঐ পরিবারের সবাই একই ধর্ম গ্রহণ করে। সাধারনত যা হয় রইস ডি কস্তার ক্ষেত্রে তা হয়নি। সে আর তার বউ ছাড়া তার পুরো পরিবারের কেউ আর খ্রীস্টান ধর্ম গ্রহণ করেনি। ফলে গ্রামের খ্রীস্টান সংখ্যা ঐ দুইজন ছাড়া আর বাড়েনি। ষোলো বছর বয়সেই এডওয়ার্ড কস্তার পড়াশোনার জন্য ঢাকা শহরে মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারপর এই গ্রামে এডওয়ার্ড কস্তা এসেছে মাত্র বার তিনেক। প্রথমবার দুই বছর পর অর্থাৎ আঠারো বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর সময়। একবার মাকে শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এবং শেষবার মায়ের মৃত্যুর পর বাবার পাশে কবর দেয়ার জন্য। সেবার অবশ্য পুরনো কেয়ারটেকার জমির উদ্দিনের সঙ্গে একটা চুক্তি করে এখানকার ল্যাঠা চুকিয়ে সে চলে যায়। তারপর বিশ বছর বিস্মৃত থাকে গ্রাম সম্পর্কে। মধ্যবর্তী এ সময়ে এখানকার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিলো কেবল জমির উদ্দিন নামের মানুষটি। জমির উদ্দিন যক্ষের ধনের মতো তাদের বিপুল সম্পত্তি আগলে রেখেছে। শুধু আগলেই রাখেনি বরং নিজের সম্পত্তি মনে করে এটি বাড়িয়েছে। নিজ দায়িত্বে এডওয়ার্ডকে ষান্মাসিক কিংবা বাৎসরিক হিসাব ও ফসল পৌঁছে দিয়েছে। এরকম সৎ লোকের কথা কেবল পাঠ্যপুস্তকেই পাওয়া যায়।
অবশ্য জমির উদ্দিনের সৎ থাকা ছাড়া বোধ করি কোন উপায় ছিলো না। কারণ তার একমাত্র ছেলেটি ছিলো মানসিক প্রতিবন্ধী। আর সুন্দরী মেয়েটিকে যথেষ্ট ভালো ঘরে বিয়ে দেয়ার মতো সামর্থø তার ছিলো। এখানে একথা বলা বাঞ্ছনীয় নয় যে এডওয়ার্ডের অবর্তমানে জমির উদ্দিন নিজেই জমিদারের মতো সারাজীবন কাটিয়ে গত বছর দুয়েক আগে মর্তøলোক ত্যাগ করেছেন। তার অবর্তমানে ডিগ্রি পাশ তনয়া জমিলা বুঝে নিয়েছে কেয়ারটেকারির দায়িত্ব। বাঙ্গালি নারীর স্বাভাবিক দক্ষতা দিয়েই সে এডওয়ার্ডের সম্পত্তি দিনকেদিন আরো বাড়িয়েই তুলেছে।
চার.
ওদিকে এডওয়ার্ড ষোলো বছর বয়সে গিয়েছিলো শহরে, মামার বাড়িতে। খ্রীস্টান মামা ছিলেন অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি। সেই সঙ্গে সংস্কৃতিমনাও। কবি, সাহিত্যিক, গায়ক কে আসতো না তার বাড়িতে? কিন্তু বরাবরই এডওয়ার্ডের নজর কেড়ে নিয়েছিলো এক অদ্ভূত চুপচাপ লোক। কিন্তু এ লোকটাকে নিয়েই গড়ে ওঠে এডওয়ার্ডের পৃথিবী। লোকটা একজন জাদুকর। ছেটোখাটো জাদুকর। জাদু দেখিয়ে কোন মতে দিন আনে দিন খাই ধরণের বাস্তবতার মধ্যে বসবাস ছিলো তার। এডওয়ার্ডের সঙ্গে তার হয়েছিলো কিভাবে কিভাবে যেন খাতির। আসলে প্রকৃত এবং বিশুদ্ধ ভালোলাগা চাপা থাকে না। হয়তো সে কারণেই এডওয়ার্ডের সঙ্গে তার খাতির হয়েছিলো। তিনি এডওয়ার্ডকে শিখিয়েছিলেন কিছু ছোটো খাটো জাদু।
পরাবাস্তব থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বর নিয়ে তিনি এডওয়ার্ডকে বলতেন ¬ শোনো, জাদু হচ্ছে বিজ্ঞান। যে দেশে বিজ্ঞান নেই সে দেশে জাদুও নেই। এডওয়ার্ড এটাকে ফিলোজফি হিসাবে নিয়েছিলো। সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছিলো আরেকটি নিজস্ব ফিলোজফি ¬ কিছু হলে এক নম্বর হতে হবে, নইলে পথই মাড়াবো না।
এ দু’টো লাইন মিলিয়েই এডওয়ার্ড শুরু করেছিলো তার জাদুকর জীবন। জাদু বাস্তবতার জীবন। আর উঠে এসেছিলো প্রথম জাদুকরদের মধ্যে প্রথম সারিতে চমৎকার বাচনভঙ্গি, সুশ্রী চেহারা এবং একদল বিজ্ঞানী ও টেকনিশিয়ান বন্ধুর সাহায্য নিয়ে। এসময় সে প্রেম করেছিলো, বিয়ে করেছিলো এবং শুরু করেছিলো এক স্বাপ্নিক জীবন। বিয়ের বছর তিনেকের মাথায় জন্ম নিয়েছিলো নোরা। তার একমাত্র মেয়ে। যে এখন এই রহিমপুর গ্রামে তার একমাত্র সঙ্গী।
নোরার জন্মের পর থেকেই এডওয়ার্ডের উপলব্ধি হতে থাকে জাদুকর জীবনের অবসান হওয়া উচিৎ। যদিও সে তখন জাদুকর জীবনের শীর্ষে। কিন্তু এদেশ থেকে বিজ্ঞান হারিয়ে গেছে। জাদু নেমে এসেছে শিল্প থেকে সাধারণ ভোজবাজির কাতারে। তার সেই বিজ্ঞানী কিংবা টেকনিশিয়ান বন্ধুরাও একে একে পাড়ি জমিয়েছে বিদেশ। সর্বশেষ নোরার মা-ও বছর তিনেক আগে সুখ স্বপ্নের নেশায় তারই এক বন্ধুর হাত ধরে চলে গেছে। যাওয়ার সময় ছোট্ট এক চিরকুটে ক্ষমা করে দেয়ার কথা বলেছে। অথচ তাদের বিয়েটা ছিলো প্রেমের। নোরার মা-র একক চাপাচাপিতে সে বসেছিলো বিয়ের পিড়িতে। এর জন্য নোরার মার ছাড়তে হয়েছিলো তার সমাজ। সহ্য করতে হয়েছিলো কতো কথা! মানুষ কত দ্রুত বদলে যায়। এগারো বছর কি এমন সময়!
পাঁচ.
রাত সাড়ে আটটায় এডওয়ার্ড তার বাবার সুবিশাল বসত ভিটায় এসে পৌঁছায়। চারিদিকে তখন সুনসান। এ বাড়িটা এককালে জমিদার বাড়ি হওয়ায় গ্রামের মানুষের বাড়ি এখান থেকে বেশ তফাতে। রহিমপুর গ্রামে পা দেয়ার পর এখনই নোরার মুখ থেকে প্রথম কথা বেরিয়ে আসে¬ বাবা, এতো সুন্দর বড়ো বাড়ি কি আমাদের? আমরা কি এখানে থাকবো?
¬হঁ্যা এইটা তোমার দাদুর বাড়ি। এখন থেকে আমরা এখানে থাকবো। এডওয়ার্ডের হঠাৎ ভালো লাগতে শুরু করে। নোরা শহর ছেড়ে এখানে এসে ঘাবড়ে যায়নি। বরং মজা পাচ্ছে। অবশ্য কতোদিন মজা পায় সেটা একটা বিষয়। তার ভালো লাগা আরো বেড়ে গেল যখন জমিলা একটা চার্জার বাতি নিয়ে হাজির হলো। সে সম্ভবত তাদের অপেক্ষায়ই বসে ছিলো। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন চাকর গোছের লোক ছিলো। দুয়েকজন মহিলাও ছিলো। সুন্দরী জমিলাকে দেখে এডওয়ার্ডের ভালো লেগেছিলো তা নয়। বরং ভালো লেগেছিলো বাড়িটাতে অনেক মানুষ দেখে। এরা সবাই এই বাড়ির নানা কাজে যুক্ত। এখানে আসার আগে তার ধারণা ছিলো বাড়িটা মৃতপ্রায়। লোকজন নেই। তার সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হওয়ায় সে খুশি।
ছয়.
জমিলা এডওয়ার্ডকে নিয়েছিলো আশ্রয় হিসাবে। বাস্তবিকই এডওয়ার্ডের ভিতর ছিলো তীব্র পুরুষত্ব । তার উপস্থাপন ভঙ্গি ছিলো দারুণ। কাউকে ঠকানোর কোন রকম পরিকল্পনা ছিলো না। ছিলো না প্রভুত্ব করার মতিগতি। প্রথমদিকে গ্রামের চেয়ারম্যান বা মোড়ল গোত্রীয় লোকজন তাকে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছিলো। কিন্তু যখন তারা আবিষ্কার করলো এডওয়ার্ড মানুষটা তাদের কোন সাতে পাঁচে নেই, কোন রাজনীতিতে নেই, তখন তারা তার প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করা শুরু করলো। এমনকি জমিলার সঙ্গে তার গোপন অভিসারও গ্রামে কোন অহেতুক সমস্যার সূত্রপাত করেনি।
এদিকে এডওয়ার্ড একজন জাদুকর। ফলে সে বিজ্ঞান ভালো জানে। চেয়ারম্যানের কাছে সে তদবীর নিয়ে গিয়েছিলো গ্রামের হাই স্কুলে রসায়ন ও ফিজিক্স পড়ানোর জন্য। চেয়ারম্যান খুশি হয়েই তা অনুমোদন করেছিলেন। কারণ এডওয়ার্ডের ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি জানতেন। ইচ্ছে হলেই এডওয়ার্ড যে তার চেয়ারের সব কয়টা পায়া ধরে টান মারতে পারে, ভেঙ্গে দিতে পারে ত্রিশ বছরের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তা তিনি জানতেন।
এডওয়ার্ড গ্রামে একটা বিনোদন কেন্দ্র বসিয়েছিলো। তার অভিনব আইডিয়ার এই বিনোদন কেন্দ্রটিকে ঘিরে গ্রামের মাওলানা গোষ্ঠীর তীব্র আপত্তি ছিলো। কিন্তু যখন তা তাদের উপকারেও আসতে লাগলো তখন অনেকটা আনন্দের সঙ্গেই বিষয়টার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলেন।
বিনোদন কেন্দ্রটিতে ছিলো একটা বিশাল মঞ্চ। মঞ্চটি ছিলো পাকা। মঞ্চে বিশাল টিভি স্ক্রীন লাগানো ছিলো। তবে মঞ্চটি ছিলো শান থেকে মাত্র ফুট খানেক উপরে। মঞ্চের সামনের দুই কাঠা জায়গা নিয়ে তৈরী করা হয়েছিলো বসার জায়গা। তাতে পাতা থাকতো মাদুর। এখানে টিভি স্ক্রীনে কোন কোন সময় নতুন হিন্দী, বাংলা সিনেমা চলতো। চলতো ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা। কখনো কখনো কালচারাল অনুষ্ঠান হতো, গ্রামের বিয়ে সাদি হতো, ওয়াজ মাহফিল হতো, সভা হতো, আর হতো প্রতি বৃহস্পতিবার এডওয়ার্ডের জাদু সন্ধ্যা। উপরে তেরপল টাঙ্গানো ছিলো। ছিলো জেনারেটরের ব্যবস্থা। বর্ষার দিনগুলোতে চারপাশে তেরপল নামিয়ে দিয়ে পাকা জায়গাটিতে বৃষ্টির পানি আসা আটকানো হতো। বিনোদন কেন্দ্রের পুরো বিষয়টা ছিলো উন্মুক্ত। কোন টিকিটের বালাই ছিলো না। এর চারপাশেই গড়ে উঠেছিলো চায়ের দোকান। আশেপাশের দশগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিলো এ বিনোদন কেন্দ্রের নাম। আর এতে রহিমপুর গ্রাম হয়ে উঠেছিলো এক ব্যবসা ও আড্ডার জমজমাট কেন্দ্র। এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হচ্ছিলেন লাভবান।
এডওয়ার্ডকে নিয়ে গ্রামের মানুষ গর্বিত ছিলো । কারণ সে ছিলো প্রকৃত অর্থেই অনুসরণীয় এবং দারুন জাদুকরও বটে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবারের জাদুর শো হয়ে উঠেছিলো বিশেষ বিখ্যাত। সেদিন তিল ধারণের ঠাঁই বিনোদন কেন্দ্রে থাকতো না। আসতো পার্শ্ববতী জেলা শহর থেকেও লোক। এই খ্যাতিতে এডওয়ার্ডের বিশেষ কিছু যায় আসতো না। সে তার পুরনো মতবাদ নিয়েই ছিলো¬ বিজ্ঞান ছাড়া জাদু হয় না। এদেশে বিজ্ঞানী দরকার। এ কথা বলেই সে তার জাদু শুরু করতো।
সপ্তাহের বাকি সময়টা দিনের বেলায় সে স্কুলে পড়াতো। রাতে অভিসার চলতো জমিলার সঙ্গে।