সেনাপতি হলেন সাধারণ সৈনিক—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

সিরিয়ার রণক্ষেত্র। সিরিয়ায় মুসলিম বাহিনীর সর্বাধিনায়ক খালিদ সৈন্য পরিচালনা করছেন। মদিনা থেকে খলিফা হযরত উমরের (রাঃ) দূত শাদ্দাদ ইবনে আউস খালিদের পদচ্যুতি এবং সেনাপতি আবু উবাইদার প্রধান সেনাপতি মনোনয়নের চিঠি নিয়ে এলেন সিরিয়ায়। সিরিয়ার সেনাশিবিরে সকল সৈনিক ও সেনাধ্যক্ষরা উপস্থিত।

খলিফার দূত শাদ্দাদ সকলের সামনে সর্বাধিনায়ক খালিদের পদাবনতি এবং আবু উবাইদার প্রধান সেনাপতি পদে মনোনয়নের কথা ঘোষণা করলেন। সেনা ও সেনাধ্যক্ষদের মধ্যে নিঃশব্দ নীরবতা বিরাজ করল। নীরবে খালিদও খলিফার নির্দেশনামা পাঠ শুনলেন। তারপর নীরবে নতমুখে তিনি সেনাপতির থেকে পিছনের সারিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। শূন্যস্থান পূরণ করলেন আবু উবাইদা।

সর্বাধিনায়ক খালিদ সাধারণ সৈন্যের সারিতে মিশে গেলেন। এই পদাবনতিতে খালিদের চোখ কি ক্রোধে জ্বলে উঠেছিল? কিংবা অপমানে তাঁর মুখ কি লাল হয়ে উঠেছিল? অথবা তাঁর গণ্ডদ্বয় বেয়ে কি দুঃখের অশ্রু নেমে এসেছিল? না, এগুলোর কিছুই হয়নি তাঁর। সিরিয়ার মরু দেশের প্রান্তর থেকে প্রান্তরে ঘোরা খালিদের রোদপোরা লাল মুখে তখনও আগের সেই উজ্জ্বল হাসি—সেই শান্ত, স্বর্গীয় নূরানী দীপ্তি অটুট রয়ে গিয়েছিল।

তাঁর শির মুহূর্তের জন্য নত হয়েছিল খলিফার নির্দেশ মাথা পেতে নেবার জন্য। তারপর তাঁর শির আগের মতোই উন্নত। সে শিরে লজ্জা-অপমান কোনো স্থান পায়নি, দুঃখের কালিমাও তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি পিছনের সারিতে দাঁড়িয়ে বললেন, “হযরত উমর (রাঃ) কোনো হাবশী গোলামকেও যদি আমার নেতা মনোনীত করতেন, তবু তাঁর আদেশ সানন্দে মেনে আমি জিহাদ চালিয়ে যেতাম। আর হযরত আবু উবাইদা তো কত উঁচু দরের লোক।”

পদাবনতির ফলে কি স্বাভাবিক নিরুৎসাহ হযরত খালিদকে ঘিরে ধরেছিল? তিনি কি উৎসাহ, উদ্দীপনা ও গতিবেগ হারিয়ে ফেলেছিলেন? না, কোনোটিই নয়। পদচ্যুত হওয়ার পর মুহূর্তেই সেনাপতি আবু উবাইদার নির্দেশে তিনি আবদুল্লাহ ইবনে জাফরের সাহায্যে এক রণক্ষেত্রে ছুটে যান, প্রাণপণ যুদ্ধ করেন এবং সেখানে জয়ীও হন।

এই আনুগত্য, এই আন্তরিকতা, এই নিবেদিতপ্রাণ চিত্ততার কোনো নজির ইতিহাসে নেই। একজন প্রধান সেনাপতি দেশের পর দেশ জয় করলেন, যিনি পেলেন সৈন্য ও সেনাধ্যক্ষদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও আনুগত্য। তিনি বিনা বাক্য ব্যয়ে পদাবনতি মেনে নিয়ে অধীনস্থ সেনাধ্যক্ষদের অধীনে সাধারণ সৈনিকের মতো পূর্বের ন্যায় একই আন্তরিকতা নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। নেতৃত্ব ও সামরিক শৃঙ্খলার প্রতি এমন সম্মান প্রদর্শন অপরূপ ও বিস্ময়কর।

বিস্ময়কর শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়—মুসলমানদের জন্যও, যারা যুদ্ধ করে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য; ধন, মান বা পদের লোভে নয়।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!