অপরূপ সুন্দরী রাজকন্যা ও এক হাজার দিনার—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

হযরত উসমান (রাঃ)-এর শাসনকাল। নীল ভূমধ্যসাগরের তীরের তারাবেলাস নগরী। পরাক্রমশালী রাজা জার্জিসের প্রধান নগরী এটি। এই পরাক্রমশালী রাজা ১ লক্ষ ২৯ হাজার সৈন্য নিয়ে আবদুল্লাহ ইবন সা‘দের নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনীর অগ্রাভিযানের পথ রোধ করে দাঁড়ালেন। স্বয়ং রাজা জার্জিস তাঁর বাহিনী পরিচালনা করছেন। পাশে রয়েছে তাঁর মেয়ে, অপরূপ সুন্দরী সে কন্যা।

যুদ্ধ শুরু হলো। জার্জিস মনে করেছিলেন, তাঁর দুর্ধর্ষ বাহিনী এবার মুসলিম বাহিনীকে উচিত শিক্ষা দেবে। কিন্তু তা হলো না। মুসলিম বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জার্জিস বাহিনীর ব্যূহ ভেঙে পড়ল। উপায়ান্তর না দেখে তিনি সেনা ও সেনানীদের উৎসাহিত করার জন্য ঘোষণা করলেন, “যে বীরপুরুষ মুসলিম সেনাপতি আবদুল্লাহর ছিন্নশির এনে দিতে পারবে, আমার কুমারী কন্যাকে তার হাতে সমর্পণ করবো।”

জার্জিসের এই ঘোষণা তাঁর সেনাবাহিনীর মধ্যে উৎসাহের এক তড়িৎপ্রবাহ সৃষ্টি করল। তাদের আক্রমণ ও সমাবেশে নতুন উদ্যোগ ও প্রাণাবেগ পরিলক্ষিত হলো। জার্জিসের সুন্দরী কন্যা লাভের উদগ্র কামনায় তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠল। তাদের উন্মত্ত আক্রমণে মুসলিম রক্ষাব্যূহে ফাটল দেখা দিল। মহানবীর শ্রেষ্ঠ সাহাবি হযরত যুবাইরও সে যুদ্ধে শরিক ছিলেন। তিনি সেনাপতি সা‘দকে পরামর্শ দিলেন, “আপনিও ঘোষণা করুন—যে তারা বেলাসের শাসনকর্তা জার্জিসের ছিন্নমুণ্ড এনে দিতে পারবে, তাকে সুন্দরী জার্জিস দুহিতাসহ এক হাজার দিনার বখশিশ দেবেন।” যুবাইরের পরামর্শ অনুযায়ী সেনাপতি সা‘দ এই কথাই ঘোষণা করে দিলেন।

তারাবেলাসের প্রান্তরে ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হলো। যুদ্ধে জার্জিস পরাজিত হলেন। তাঁর কর্তিত শিরসহ জার্জিসকন্যাকে বন্দী করে মুসলিম শিবিরে আনা হলো। কিন্তু এই অসীম সাহসিকতার কাজ কে করল? এই বীরত্বের কাজ কার দ্বারা সাধিত হলো? যুদ্ধের পর মুসলিম শিবিরে সভা আহূত হলো। হাজির করা হলো জার্জিস-দুহিতাকে। সেনাপতি সা‘দ জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের মধ্যে যিনি জার্জিসকে নিহত করেছেন, তিনি আসুন; আমার প্রতিশ্রুত উপহার তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছি।”

কিন্তু গোটা মুসলিম বাহিনী নীরব-নিস্তব্ধ। কেউ কথা বলল না, কেউ দাবি নিয়ে এগোল না। সেনাপতি সা‘দ বারবার আহ্বান জানিয়েও ব্যর্থ হলেন। এই অভূতপূর্ব ব্যাপার দেখে বিস্ময়ে হতবাক হলেন জার্জিস দুহিতা। তিনি দেখতে পাচ্ছেন তাঁর পিতৃহন্তাকে, কিন্তু তিনি দাবি নিয়ে আসছেন না কেন? টাকার লোভ, সুন্দরী কুমারীর মোহ—সব তিনি উপেক্ষা করছেন? এত বড় স্বার্থকে উপেক্ষা করতে পারে—জগতের ইতিহাসে এমন জিতেন্দ্রিয় যোদ্ধা-জাতির নাম তো কখনও শুনেননি তিনি। পিতৃহত্যার প্রতি তাঁর যে ক্রোধ ও ঘৃণা ছিল, তা যেন মুহূর্তে কোথায় অন্তর্হিত হয়ে গেল; অপরিচিত এক অনুরাগ এসে সেখানে স্থান করে নিল।

অবশেষে সেনাপতির আদেশে জার্জিস দুহিতাই যুবাইরকে দেখিয়ে দিলেন। বললেন, “ইনিই আমার পিতৃহন্তা, ইনিই আপনার জিজ্ঞাসিত মহান বীরপুরুষ।” সেনাপতি সা‘দ যুবাইরকে অনুরোধ করলেন তাঁর ঘোষিত উপহার গ্রহণ করার জন্য।

যুবাইর উঠে দাঁড়িয়ে অবনত মস্তকে বললেন, “জাগতিক কোনো লাভের আশায় আমি যুদ্ধ করিনি। যদি কোনো পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয়, তাহলে আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।”

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!