হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৬
আল্লাহ তায়ালা তাহার শত্রুকে ধ্বংস করিয়াছেন এবং নাজাশীর রাজত্বকে মজবুত করিয়া দিয়াছেন। হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা সেদিনের ন্যায় কখনও এরূপ আনন্দিত হইয়াছি বলিয়া আমার মনে পড়ে না। নাজাশী যুদ্ধ শেষে ফিরিয়া আসিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাহার শত্রুকে ধ্বংস করিয়া দিয়াছেন, তাহার রাজত্বকে মজবুত করিয়া দিয়াছেন। ফলে হাবশার বাদশাহী তাহার জন্য সুদৃঢ় হইয়া গেল। আমরাও তাহার নিকট সুখে শান্তিতে কালাতিপাত করিতে লাগিলাম। অতঃপর আমরা রাসূল (সাঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলেন। তিনি তখনও মক্কায় অবস্থান করিতেছিলেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাদিগকে নাজাশীর নিকট প্রেরণ করিলেন। আমরা প্রায় আশি জন পুরুষ ছিলাম। ইহাদের মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হযরত জাফর, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উরফুতাহ, হযরত ওসমান ইবনে মাযউন ও হযরত মূসা (রাঃ) ও ছিলেন। তাহারা নাজাশীর নিকট পৌঁছিবার পর কোরাইশগণ আমর ইবনে আস ও ওমারা ইবনে ওলীদকে বহু উপঢৌকন সামগ্রীসহ নাজাশীর নিকট প্রেরণ করিল। তাহারা উভয়ে নাজাশীর দরবারে পৌঁছিয়া তাহাকে সিজদা করিল এবং দ্রুত অগ্রসর হইয়া তাহার ডানে ও বায়ে বসিয়া গেল।
তারপর বলিল, আমাদের কতিপয় চাচাত ভাই আমাদের ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া আপনার দেশে চলিয়া আসিয়াছে। নাজাশী জিজ্ঞাসা করিল, তাহারা কোথায়? আমর ইবনে আস ও ওমারাহ বলিল, তাহারা আপনার দেশে ওমুক স্থানে আছে। লোক পাঠাইয়া তাহাদিগকে ডাকিয়া আনুন। অতএব নাজাশী মুসলমানদের ডাকিবার জন্য লোক তোমাদের পক্ষ হইতে আমি বাদশাহের সম্মুখে কথা বলিব। অতঃপর মুসলমানগণ সকলেই হযরত জাফর (রাঃ)কে অনুসরণ করিলেন। হযরত জাফর (রাঃ) দরবারে উপস্থিত হইয়া সালাম করিলেন, সিজদা করিলেন না।
সভাসদগণ তাহাকে বলিল, তুমি বাদশাহকে সিজদা করিলে না কেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমরা আল্লাহ ব্যতিত কাহাকেও সিজদা করি না। নাজাশী বলিল, ইহা কেমন কথা? হযরত জাফর (রাঃ) বলিলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করিয়াছেন। তিনি আমাদিগকে আদেশ করিয়াছেন, যেন আল্লাহ ব্যতিত আমরা আর কাহাকেও সিজদা না করি। তিনি আমাদিগকে নামাজ ও যাকাতেরও হুকুম দিয়াছেন। আমর ইবনে আস বলিল, ইহারা হযরত ঈসা
ইবনে মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে আপনার বিপরীত মত পোষণ করে। নাজাশী বলিল, তোমরা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ও তাঁহার মাতা সম্পর্কে কি বল? হযরত জাফর (রাঃ) বলিলেন, আমরা তাঁহার সম্পর্কে তাহাই বলি যাহা আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন। তিনি আল্লাহর কালেমা ও তাঁহার সেই রূহ, যাহা তিনি কুমারী ও পুরুষ সংস্পর্শ হইতে বসবাসকারিণী (হযরত মারইয়াম)এর নিকট প্রেরণ করিয়াছেন। যাহাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করে নাই এবং হযরত ঈসা (আঃ) কে প্রসব করার দরুন তাঁহার কুমারীত্বও নষ্ট হয় নাই।
নাজাশী মাটি হইতে কুটা উঠাইয়া বলিল, হে হাবশাবাসী, হে ঈসায়ী ধর্মের ওলামা ও পাদ্রীগণ, হে সন্যাস অবলম্বনকারীগণ আল্লাহর কসম, আমরা হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে যাহা বলিয়া থাকি এই মুসলমানগণ তাহা অপেক্ষা এই কুটা পরিমাণও অতিরিক্ত বলিতেছে না। (অতঃপর মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলিলেন,) মারহাবা তোমাদিগকে এবং তোমরা যাঁহার পক্ষ হইতে আসিয়াছ তাঁহাকেও মারহাবা। আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি সেই নবী যাঁহার আলোচনা আমরা ইনজিলে পাই।
তিনি সেই রাসূল, যাঁহার সম্পর্কে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) সুসংবাদ প্রদান করিয়াছিলেন। তোমরা আমার দেশে যেখানে ইচ্ছা হয় বসবাস কর। আল্লাহর কসম, যদি বাদশাহীর দায়িত্ব আমার উপর না থাকিত তবে আমি স্বয়ং তাঁহার খেদমতে উপস্থিত হইয়া তাঁহার জুতা মোবারক বহন করিতাম। অতঃপর নাজাশীর আদেশে কোরাইশের প্রতিনিধিদ্বয়ের উপঢৌকন সামগ্রী ফেরত দেওয়া হইল। তারপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) সকলের আগে তাড়াতাড়ি মদীনায় চলিয়া আসিলেন। ফলে তিনি বদরে শরীক হইতে পারিলেন।
হযরত আবু মুসা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাকে হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ) এর সহিত নাজাশীর নিকট যাইতে আদেশ করিলেন। কোরাইশগণ এই সংবাদ জানিতে পারিয়া আমর ইবনে আস ও ওমারাহ ইবনে ওলীদকে নাজাশীর নিকট প্রেরণ করিল। এই রেওয়াতের অবশিষ্টাংশ হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত উপরোক্ত হাদিসের ন্যায় বর্ণিত হইয়াছে।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা