হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৫

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

তিনি আল্লাহর সেই কালেমা যাহা তিনি কুমারী ও পুরুষের সংশ্রব হইতে নিঃসঙ্গ জীবন যাপনকারিণী মারইয়ামের নিকট প্রেরণ করিয়াছিলেন। নাজাশী হাত বাড়াইয়া মাটির উপর হইতে একটি কাঠি উঠাইয়া বলিল, আল্লাহর কসম, তুমি যাহা বলিয়াছ তাহা অপেক্ষা হযরত ঈসা (আঃ) এই কাঠি পরিমাণও অতিরিক্ত নহেন। নাজাশীর এই কথা শুনিয়া তাহার চারিদিকে উপরিষ্ট সেনা কর্মকর্তাগণ রাগে বিড়বিড় করিতে লাগিল। নাজাশী বলিল, তোমরা যতই বিড়বিড় করা না কেন, আল্লাহর কসম, ইহাই সত্য।

অতঃপর নাজাশী মুসলমানের উদ্দেশ্যে বলিলেন, যাও, তোমরা আমার দেশে সম্পুর্ণ নিরাপদ। যে তোমাদিগকে গালি দিবে, তাহার উপর জরিমানা হইবে। পুনরায় বলিলেন, যে তোমাদিগকে গালি দিবে তাহার উপর জরিমানা হইবে। এক পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়েও আমি তোমাদের কাহাকেও কষ্ট দেওয়া পছন্দ করিব না।

অতঃপর নিজের লোকদেরকে বলিলেন, কোরাইশ প্রতিনিধিদ্বয়ের উপঢৌকন সামগ্রী তাহাদিগকে ফেরত দিয়া দাও, এই সকল উপঢৌকনের আমার কোন প্রয়োজন নাই। আল্লাহর কসম, আল্লাহ তায়ালা যখন আমার রাজত্ব আমাকে ফিরাইয়া দিয়াছিলেন তখন তিনি আমার নিকট হইতে কোন উৎকোচ গ্রহণ করেন নাই। কাজেই আমি আল্লাহর ব্যাপারে কি করিয়া উৎকোচ গ্রহণ করতে পারি? আল্লাহ তায়ালা আমার ব্যাপারে

লোকদের কথা শুনেন নাই, আমি কেন আল্লাহর ব্যাপারে লোকদের কথা শুনিব? অতএব কোরাইশ প্রতিনিধিদ্বয় তাহাদের আনীত উপহারসামগ্রী সহ লাঞ্ছিত ও অপমানিত হইয়া দরবার হইতে বাহির হইয়া আসিল। আর আমরা তাহার নিকট নিশ্চিন্তে বসবাস করিতে লাগিলাম। এলাকা হিসাবে অতি উত্তম স্থান ছিল এবং প্রতিবেশী হিসাবেও সেখানকার লোকজন অতি উৎকৃষ্ট ছিল। আল্লাহর কসম, নাজাশীও এই অবস্থার উপর বিদ্যমান ছিল। এমন সময় হঠাৎ এক শত্রু রাজত্ব ছিনাইয়া লইবার উদ্দেশ্যে তাহার উপর আক্রমণ করিয়া বসিল। ইহাতে আমরা এত বেশী চিন্তিত হইলাম যে, ইতিপূর্বে আমরা কখনও এরূপ চিন্তিত হই নাই।

আমরা এই ভাবিয়া শঙ্কিত হইতেছিলাম যে, যদি শত্রু নাজাশীর উপর জয়লাভ করে তবে এমন ব্যক্তি বাদশাহ হইবে, যে নাজাশীর ন্যায় আমাদের হক চিনিবে না (এবং আমাদের সহিত ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করিবে না।)

হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, নাজাশী শত্রুর মোকাবিলায় অগ্রসর হইলেন। তাহার ও শত্রু সৈন্যের মাঝে নীলনদের ব্যবধান ছিল। নাজাশী তাহার সৈন্যদল সহ নীলনদ পার হইয়া অপর পারে গেলেন (এবং সেখানেই যুদ্ধের ময়দান কায়েম হইল।) রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবা (রাঃ) বলিলেন, কে আছে, যুদ্ধের অবস্থা স্বচক্ষে দেখিয়া আসিয়া আমাদিগকে জানাইবে? হযরত যুবাইর ইবনে আওয়াম (রাঃ) বলিলেন, আমি প্রস্তুত আছি। সকলে বলিলেন, হ্যাঁ, তুমি এই কাজের

উপযুক্ত। তিনি সাহাবা (রাঃ)দের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কম বয়সের ছিলেন। মুসলমানরা (নদী পার হইবার জন্য) একটি চামড়ার মশকে বাতাস ভরিয়া তাহাকে দিলেন। তিনি উহা বুকে বাঁধিয়া লইলেন এবং সাঁতরাইয়া নদীর যে পাড়ে যুদ্ধ হইতেছিল সেখানে পৌঁছিয়া গেলেন। নদী পার হইবার পর কিছু দূর হাঁটিয়া তিনি যুদ্ধস্থলে পৌঁছিলেন।

হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আমরা নাজাশীর জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করিলাম, যেন আল্লাহ তায়ালা তাহাকে শত্রুর উপর বিজয় দান করেন এবং সারা দেশের উপর তাহার রাজত্বকে মজবুত করিয়া দেন। আল্লাহর কসম, আমরা দোয়ায় মশগুল ছিলাম এবং যুদ্ধের খবরাখবরের অপেক্ষায় ছিলাম, এমন সময় হযরত যুবাইর (রাঃ)কে সম্মুখ হইতে দৌঁড়াইয়া আসিতে দেখিলাম। তিনি কাপড় নাড়িয়া বুঝাইতেছিলেন যে, তোমরা সুসংবাদ লও, নাজাশী জয়লাভ করিয়াছে।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

হযরত জাফর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবা (রাঃ) দের প্রথম হাবশায় ও পরে মদীনায় হিজরত – পর্ব ৬ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।