হযরত আলী রাঃ এর পিতৃকুল ও মাতৃকুলের বংশ পরিচয়
হযরত আলী (রাঃ) পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয় দিক থেকেই হাশেমী এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আপন চাচাত ভাই। এ কারণে ভিন্ন কোন বংশ তালিকা এখানে উপস্থাপন করা হয়নি।
তালিকাঃ
আলী ইবনে আবু তালিব ইবনে আবদুল মুত্তালিব ইবনে হাশেম ইবনে আবদে মানাফ ইবনে কুসাই ইবনে কিলাব ইবনে মুররাহ ইবনে কায়াব ইবনে লোবী। হযরত আলী (রাঃ) এর পিতা আবু তালিব মক্কার অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁরই স্নোহক্রোড়ে লালিত-পালিত হয়েছিলেন এবং নবুয়াত প্রাপ্তির পর তাঁর ছাত্রছায়ায় মক্কার মুফরিস্তানে ইসলামের সত্য বাণীর দাওয়াত দিয়েছিলেন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমর্থনে আবু তালিব হামেশা বুক পেতে দিয়েছিলেন এবং তাঁকে কাফিরদের জুলুম-নির্যাতন থেকে রক্ষা করেছিলেন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পৃষ্ঠপোষকতা ও তাঁর প্রতি সমর্থনদানের কারণে কুরাইশ মুশরিকগণ আবু তালিব ও তাঁর পরিবারবর্গকে নানা প্রকার কষ্ট দেয়। তাঁদেরকে একটি পাহাড়ের উপথ্যকায় অবরুদ্ধ করে রাখে। তাঁদের সাথে কাজ কারবার, লেনদেন বন্ধ করে দেয়। বিয়ে শাদীর সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। এমনকি তাদের সাথে পানাহারও বন্ধ করে দেয়। মোটকথা সর্বপ্রকারে তাঁদেরকে পেরেশান করে। কিন্তু এ সতস্বভাবসম্পন্ন ব্যক্তিটি নিজের জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রকে নিজের স্নেহ থেকে বঞ্জিত করেননি।
আবু তালিবের হৃদয়দেশ ঈমানের আলোকে আলোকিত করাই ছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আন্তরিক বাসনা। তিনি ব্যক্তিগত সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে খিদমত করেছিলেন, তার বিনিময়ে তাঁকে চিরন্তন বেহেশতের সম্পদ দান করাই ছিল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঐকান্তিক কামনা। তাই আবু তালিবের ওফাতের সময় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে তাঁকে কালেমায়ে তাওহীদের দাওয়াত দেন। জবাবে আবু তালিব বলেন, প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্র! কুরাইশদের নিন্দার ভয় না থাকলে আমি সানন্দে তোমার দাওয়াত গ্রহণ করতাম। সীরাতে ইবনে হিশাম হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনা উদ্ভুত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রাণবায়ু নির্গত হওয়ার সময় তিনি কালেমায়ে তাওহীদ পড়ছিলেন। কিন্তু এ বর্ণনাটি দুর্বল। বলাবাহুল্য, আবু তালিব প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ না করলেও অত্যন্ত যত্ন সহকারে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে লালন পালন করেন এবং কাফিরদের মোকাবেলায় দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সাথে তাঁকে সাহায্য-সমর্থন করতে থাকেন। এজন্য ইসলামের ইতিহাসে চিরদিন কৃতজ্ঞতা সহকারে তাঁর নাম উল্লেখ থাকবে।
হযরত আলী (রাঃ)-এর মাতা হযরত ফাতেমা রাদিয়লাল্লাহু আনহা বিনতে আসাদও অত্যন্ত আগ্রহ ও মমতা সহকারে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লালন-পালন করেন। নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় জানা যায়, তিনি ইসলাম গ্রহণ করে হিজরত করে মদীনায় গমন করেন। তাঁর ইন্তিকাল হলে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের পবিত্র জামা দিয়ে তাঁর কাফন তৈরী করেন্ এবং নিজে তাঁকে কবরের মধ্যে শায়িত করেন। লোকেরা তাঁর প্রতি এ অনুগ্রহের কারণ জিজ্ঞেস করলে বলেন, চাচা আবু তালিবের পর এ সুচরিতা ও উন্নত হৃদয়বৃত্তির অধিকারিনী মহিলার কাছে আমি সব চেয়ে বেশি ঋণী।
রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত লাভের দশ বছর আগে হযরত আলী (রাঃ) জন্মগ্রহন করেন। আবু তালিবের সন্তান ছিল অনেক বেশি। অর্থ-সংকট তাঁকে পেরেশান করে রেখেছিল। তদুপরি অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ তাঁর সংকট অধিকতর বৃদ্ধি করেছিল। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় চাচার এ অভাব-অনটন দেখে হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, এ বিপদের সময় আমাদের চাচাকে সাহায্য করা উচিত। হযরত আব্বাস (রাঃ) হযরত জাফর (রাঃ)-এর লালান-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিলেন হযরত আলী (রাঃ)-এর দায়িত্ব। এ সময় থেকে আলী (রাঃ)-এর রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে প্রতিপালিত হন।