মানুষ বেশে জিব্রাইল

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসূল করীম (সাঃ) এর দরবারে বসা ছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি তথায় এসে উপস্থিত হল, তার পরিধেয় বস্ত্র সাদা ধপধপে এবং চুলগুলো ছিল কৃষ্ণ বর্ণের। তার মধ্যে ভ্রমনের কোণ চিহ্ন তথা ধূলা বালি বা ক্লান্তির কোণ কিছুই ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউই তাকে চিনতাম না। সে এসেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উভয় জানুর উপর স্বীয় হাতগুলো রেখে তাঁকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন।

প্রথমেই সে জিজ্ঞেস করলেন, হে মুহাম্মদ (সাঃ)! আমাকে বলুন, ইসলাম কাকে বলে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ইসলামের মূল বিষয় হল- ইবাদতের উপযোক্ত একমাত্র আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তার সত্য রাসূল একথা বিশ্বাস করে নামাজ পড়া, যাকাত আদায় করা, রমজানে রোজা রাখা এবং সামর্থ থাকলে হজ্জ ব্রত পালন করা।

রাসূল্লাহ (সাঃ) এর বক্তব্য শুনে উক্ত ব্যক্তি বলল, আপনি সত্য বলেছেন।

আসহাবে রাসুলরা বর্ণনা করেন, আমরা অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করছিলাম যে, আগুন্তুক ব্যক্তি কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করছে, তার অর্থ, ঐ বিষয়ে তার জানা নেই। অথচ রাসূল পাক (সাঃ) তার প্রশ্নের উত্তর দেবার পর সে তার সত্যতা অনুমোদন করছে। এর অর্থ এ বিষয়ে সে পূর্ব হতেই অবগত। ব্যাপারটি আমাদের নিকট খটকা লাগল।

অতঃপর পূণরায় প্রশ্ন করল।

আমাকে বলুন, ঈমান কাকে বলে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তরে বললেন, ঈমান হল, তুমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, তার ফেরেশতা, কিতাব, সমস্ত আম্বিয়াদের কেয়ামতের, পূনরন্থান এবং ভাল মন্দ তাকদীরের উপর নির্ভরশীল এ বিষয়ে উপর আগন্তুক এবারও বলল, আপনি সত্য বলেছেন, সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, এহসান কাকে বলে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন) এমনভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা যেন তাঁকে তুমি দেখছ, এতটা সম্ভব না হলে অন্ততঃ আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা যেন তুমি দেখছ, এতটা সম্ভব না হলে অন্ততঃ আল্লাহ তাআলা তোমাকে দেখছেন মনে মনে এ খেয়াল করা। ঐ ব্যক্তি বলল,

আপনি সত্য বলেছেন। শেষ বারের মত তিনি জিজ্ঞেস করলেন কেয়ামত কখন আসবে? তিনি উত্তর দিলেন,

এবিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশী আমার জানা নেই।

আগন্তুক ব্যক্তি এবার বলেন, কেয়ামতের নিদর্শনগুলো বর্ণনা করুন। আল্লাহ রাসূল (সাঃ) বললেন,

দাস দাসীরা তাদের মনিব জন্ম দিতে শুরু করবে। অভিজাত পরিবারে দাসী রাখার রেওয়াজ চালু হয়ে যাবে এবং তাদের গর্ভে যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে পিতৃ বিবেচনায় তাদেরকে শাহজাদা-শাহাজাদী হিসেবে গ্রহণ করা হবে, অথচ তাদের মাতা হবে দাসী। মোট কথা ভোগ-বিলাসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।

রাসূলে কারীম (সাঃ) এর উক্ত বক্তব্যের অর্থ এও হতে পারে যে, সন্তানরা মাতা-পিতার অবাধ্য হবে। তাদের সাথে এমন ভাবে কথা বার্তা বলবে যে তাঁরা ঘরের দাসী। যাহোক অতঃপর তিনি কিয়ামতের অন্যন্য আলামত বর্ণনা করে বললেন, বিত্তহীন, অভুক্ত ও রাখাল শ্রেনীর লোকেরা এত সম্পদের মালিক হবে যে, তাঁরা সুউচ্চ ভবনাদি নির্মান করবে। অতঃপর আগন্তুক অদৃশ্য হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)

সাহাবাদের বললেন, তাঁকে ডেকে আন। কিন্তু তাঁকে আর কোথাও খুজে পাওয়া গেল না।

অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, কিছুক্ষন পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান ঐ প্রশ্নকারী ব্যক্তিটি কে? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)

বললেন, তিনি জিব্রাইল (আঃ) তিনি ছদ্দবেশে তোমাদের দ্বীনের কথা বলতে এসেছিলেন। (বুখারী মুসলিম)

আরো পড়তে পারেন...

কয়েকটি বিশেষ ধরনের বেদআত

হযরত মাওলানা মুহেব্বুদ্দিন ছিলেন হাজী এমদাদুল্লাহ মক্কী (রহঃ)-এর খলীফা। তিনি কাশফওয়ালা বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। একদিন…

মুসলিম পরিচয় প্রদানকারী কয়েকজন দুবৃত্ত সম্পর্কে আগাম সতর্কবাণী

হযরত আবু ছাইদ খদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সম্মুখে উপস্থিত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ…

হযরত আবূজর (রাঃ) বিরাণ ভূমিতে ইহধাম ত্যাগ করবেন

হযরত আবূ জর (রাঃ) ইন্তেকালের সময় একটি জনমানবহীন বিরান ভূমিতে অবস্থান করছিলেন। তখন তাঁর স্ত্রীও…

মানুষ বেশে জিব্রাইল

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসূল করীম (সাঃ) এর দরবারে বসা ছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি তথায় এসে উপস্থিত হল, তার পরিধেয় বস্ত্র সাদা ধপধপে এবং চুলগুলো ছিল কৃষ্ণ বর্ণের। তার মধ্যে ভ্রমনের কোণ চিহ্ন তথা ধূলা বালি বা ক্লান্তির কোণ কিছুই ছিল না। আমাদের মধ্যে কেউই তাকে চিনতাম না। সে এসেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উভয় জানুর উপর স্বীয় হাতগুলো রেখে তাঁকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন।

প্রথমেই সে জিজ্ঞেস করলেন, হে মুহাম্মদ (সাঃ)! আমাকে বলুন, ইসলাম কাকে বলে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ইসলামের মূল বিষয় হল- ইবাদতের উপযোক্ত একমাত্র আল্লাহ এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) তার সত্য রাসূল একথা বিশ্বাস করে নামাজ পড়া, যাকাত আদায় করা, রমজানে রোজা রাখা এবং সামর্থ থাকলে হজ্জ ব্রত পালন করা।

রাসূল্লাহ (সাঃ) এর বক্তব্য শুনে উক্ত ব্যক্তি বলল, আপনি সত্য বলেছেন।

আসহাবে রাসুলরা বর্ণনা করেন, আমরা অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করছিলাম যে, আগুন্তুক ব্যক্তি কোন বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে প্রশ্ন করছে, তার অর্থ, ঐ বিষয়ে তার জানা নেই। অথচ রাসূল পাক (সাঃ) তার প্রশ্নের উত্তর দেবার পর সে তার সত্যতা অনুমোদন করছে। এর অর্থ এ বিষয়ে সে পূর্ব হতেই অবগত। ব্যাপারটি আমাদের নিকট খটকা লাগল।

অতঃপর পূণরায় প্রশ্ন করল।

আমাকে বলুন, ঈমান কাকে বলে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তরে বললেন, ঈমান হল, তুমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন কর, তার ফেরেশতা, কিতাব, সমস্ত আম্বিয়াদের কেয়ামতের, পূনরন্থান এবং ভাল মন্দ তাকদীরের উপর নির্ভরশীল এ বিষয়ে উপর আগন্তুক এবারও বলল, আপনি সত্য বলেছেন, সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, এহসান কাকে বলে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন) এমনভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা যেন তাঁকে তুমি দেখছ, এতটা সম্ভব না হলে অন্ততঃ আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা যেন তুমি দেখছ, এতটা সম্ভব না হলে অন্ততঃ আল্লাহ তাআলা তোমাকে দেখছেন মনে মনে এ খেয়াল করা। ঐ ব্যক্তি বলল,

আপনি সত্য বলেছেন। শেষ বারের মত তিনি জিজ্ঞেস করলেন কেয়ামত কখন আসবে? তিনি উত্তর দিলেন,

এবিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে বেশী আমার জানা নেই।

আগন্তুক ব্যক্তি এবার বলেন, কেয়ামতের নিদর্শনগুলো বর্ণনা করুন। আল্লাহ রাসূল (সাঃ) বললেন,

দাস দাসীরা তাদের মনিব জন্ম দিতে শুরু করবে। অভিজাত পরিবারে দাসী রাখার রেওয়াজ চালু হয়ে যাবে এবং তাদের গর্ভে যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে পিতৃ বিবেচনায় তাদেরকে শাহজাদা-শাহাজাদী হিসেবে গ্রহণ করা হবে, অথচ তাদের মাতা হবে দাসী। মোট কথা ভোগ-বিলাসের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।

রাসূলে কারীম (সাঃ) এর উক্ত বক্তব্যের অর্থ এও হতে পারে যে, সন্তানরা মাতা-পিতার অবাধ্য হবে। তাদের সাথে এমন ভাবে কথা বার্তা বলবে যে তাঁরা ঘরের দাসী। যাহোক অতঃপর তিনি কিয়ামতের অন্যন্য আলামত বর্ণনা করে বললেন, বিত্তহীন, অভুক্ত ও রাখাল শ্রেনীর লোকেরা এত সম্পদের মালিক হবে যে, তাঁরা সুউচ্চ ভবনাদি নির্মান করবে। অতঃপর আগন্তুক অদৃশ্য হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)

সাহাবাদের বললেন, তাঁকে ডেকে আন। কিন্তু তাঁকে আর কোথাও খুজে পাওয়া গেল না।

অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, কিছুক্ষন পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান ঐ প্রশ্নকারী ব্যক্তিটি কে? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)

বললেন, তিনি জিব্রাইল (আঃ) তিনি ছদ্দবেশে তোমাদের দ্বীনের কথা বলতে এসেছিলেন। (বুখারী মুসলিম)

আরো পড়তে পারেন...

খৃষ্টান মহিলার প্রেমে পাগল হওয়ার ঘটনা

বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, একদা আমি হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এর দরবারে বসেছিলাম। এমন সময় আমাদের…

এক বুজুর্গের কসমের উছিলায়

হযরত আবূ আব্দুল্লাহ কাররাশী (রাঃ) বলেন, একবার মুশরিক সৈন্যরা স্পেন শহরে প্রবেশ করে বিনা যুদ্ধে…

স্বপ্ন যোগে রাসূলের দিদার।

ইমাম কাফেলায় হাবীবের ঈমানী চেতনার প্রকাশ্য শক্তি যেন কয়েকগুণ বাড়াল। ইমাম হোসাইন (রাঃ) গভীর রাতে…