ভূতরাজ্যের টুকিটাকি

এখন যারা বড় তারা ছোটবেলায় কমবেশি সবাই ভুতের গল্প শুনেছেন নানী-দাদীর কাছে, তবে এখন যারা ছোট তাদের একটা বড় অংশের সাধারনত এভাগ্য হয় না। তারা বড় হয় শ্রেক-নিমো দেখে আর বড় হয়ে ড্রাকুলা-ভ্যাম্পায়ারের হরহ ফিল্ম দেখে; হারিয়ে যাচ্ছে ঠাকুমার ঝুলির ভুতেরা। আজকের এই পোস্ট গ্রাম-বাংলার ভুতেদের নিয়েই। আসুন আমরা আমাদের ছোট্ট বেলার ভুতেদের কথা মনে করি।
সাধারনত অপঘাতে যারা মারা যায় মানে অপমৃত্যু হয় তারা ইহকালেও স্থান পায় না এবং পরকালেও না ; তারাই ভুত হয়ে ভুত লোকে অবস্থান করে।পুরুষরা যেমন শুধুই মিস্টার এবং মেয়েরা মিস ও মিসেস এই রীতি ভুতদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, ছেলে ভুত রা বিবাহিত-অবিবাহিত নির্বিশেষে ভুত বটে তবে কুমারি মেয়ে ভুতেরা বিয়ের পর পেত্নি থেকে ভুত্নি হয়ে যায় বলে মালুম হয়। গ্রাম বাংলায় পেত্নির প্রকোপ প্রবল এবং এর রকমফের ও আছে যেমন শাকচুন্নি,শ্যাওরাগাছের পেত্নি, ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা সাধারনত মানুষের ওপর ভর করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। সাধারণত ওঝারা এসে মরিচ পোড়া,জুতা পোড়া, জুতার বাড়ি ঝাড়ুর বাড়ি তাবিজ কবজ এবং আরো ধুন-ফুন দ্বারা ভুতাশ্রয়ীর দেহ থেকে ভুত ছাড়া করে থাকে।
এছাড়া গ্রাম বাংলার আরেকটি জনপ্রিয় ভুত হচ্ছে মেছো ভুত, রাত্রের দিকে কেউ মাচ নিয়ে জংলা পথে বাড়ি ফিরতে থাকলে ভুতেরা নাকি সুরে মাছ দাবি করিয়া থাকে এবং মুখের কথায় কাজ না হইলে মানে ভয় পাইয়া মাছ ফালায়া দৌড় না দিলে এরা বল প্রয়োগ করে থাকে বলে শোনা যায়। বিভিন্ন ভৌতিক গল্প থেকে প্রতিয়মান মেছোভুতরা গজার মাছ বিশেষ পছন্দ করে। তাদের উপস্থিতি বোঝা যায় বিকট আঁশটে গন্ধে।
এছাড়া আছে স্কন্ধকাটা ভুত, এই ভুত সাধারনত পুরাতন পরিত্যাক্ত জমিদার বাড়ির আসেপাশে থাকে, জমিদার রুষ্ট হয়ে তার সেনাপতির কল্লা নামায় দিলে (সাধারনত জমিদার কন্যাকে ভালোবাসার অপরাধে এই কল্লাকাটাকাটি হয়ে থাকে) সে আমাবস্যা-পূর্নিমার রাতে কল্লাবিহীন হাতে খোলা তরবাড়ি নিয়ে কালো ঘোরার পিঠ চরে লোকজন কে আতঙ্কিত করে।
কিছু আছে জলজ ভুত, তারা পুকুর – ডোবা- নালায় থাকে এবং কেউ স্নান করতে নামলে পা জরায়া ধরে।
এছাড়া আছে মামদো ভুত, মামদো ভুত আমাদের সময়ে ব্যাপক প্রতপত্তি নিয়ে ভয়ংকর ভুত হিসেবে বিবেচিত হলেও আধুনা ফিচকে পোলাপান হুমায়ূন আহমেদের কল্যানে মামদো ভুত কে বন্ধু ভুত বলিয়াই মনে করে থাকে।
লেডিস হোস্টেলে কিছু ভুত থাকে। বেশিরভাগ লেডিস হোস্টেলেই সিলিং ফ্যান টানানোর কোন ব্যাবস্থা থাকেনা কিন্তু কোন এক কালে এইসব হোস্টেলে সিলিং ফ্যান ছিলো এবং সেই সিলিং ফ্যানে ওড়না প্যাচাইয়া জনৈক সুদর্শনা জীবনাবসান ঘটাইয়াছিলো এবং সে আজো এই হোস্টেলের মায়া কাটাইতে পারেনাই এমন শোনাযায়। কোন কোন ক্ষেত্রে সে ভালো নর্তকী থাকে এবং নুপূর পায়ে ঘুরেবেরায়। তাকে দেখুক বা না দেখুক হোস্টেলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ডন্ডায়মান দারোয়ান এরকম কোন ঘটনার কথা উড়ায় দেক বা না দেক হোস্টেলের প্রায় সকলেই ঐ রূপসীর নুপূরের আওয়াজ শুনিয়া থাকে।
পুরুষ হোস্টেলের ভুতেরা সাধারনত খাটে শুয়ে শুয়ে মশারির নিচ থেকে দশহাত দূরের সুইচ টিপিয়া বাত্তি নেভানো ছাড়া আর কিছু করে না।
আরেক শ্রেণীর মায়াময়-মায়াবতী ভুত আছে যারা রাত্রে বিশেষ ব্যাক্তিকে ডাকে এবং সেইব্যাক্তি সেই ডাকে সাড়া দিয়া ঘরের বাইরে চলে যায় আচ্ছন্নের মতন; এজাতিয় ডাক কে নিশির ডাক এবং নিশির ডাক শোনা মানুষ কে নিশিতে পাওয়া মানুষ বলে।
ভুতেদের মেইন কাজ হইতেছে মানুষকে ভয় দেখানো; এছাড়া আর কোন কাজকর্ম তারা করে বলে মনে হয় না;যদিও কিছু ব্যাতিক্রমী ভুত বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে থাকে।হুমায়ূন আহমেদের মতে ভুতদেরও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আছে; সেখানে কি করিয়া মানুষকে ভয় দেখাইতে হয় তা শেখানো হয়;তার মতে ভুতেরা আলো খায়, জোছনার আলো তাদের বিশেষ পছন্দ তারা শহরের জন্ডিসবাত্তির হলুদ আলো হজম করতে পারে না তবে টিউব লাইটের আলো খুব একটা পছন্দ না হইলেও খাইয়া থাকে। কেউ কেউ বলে ভুত মরে মার্বেল হয় তবে হুমায়ূন আহমেদের মতে ভুত মরে টুত হয়। টুতদের সম্বন্ধে আমি বিশেষ ভাবে অজ্ঞ তাই আর কিছু লিখলাম না।
গ্রাম বাংলার ভুতেরা সাধারনত বটগাছ, গাবগাছ, তেতুলগাছ, শ্যাওরাগাছ, বাশঝারে থাকে। শহরে এগুলা না পাইয়া এরা মনেহয় খাটের নিচে থাকে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস পিচ্চিকালে আমার কহাটের নিচে এক্টা ভুত ছিলো যেটার খুটখাট শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেলে আমি মামনির খাটে চলে যেতাম ঘুমানোর জন্য।তবে ভয়ংকর ভুতেরা শ্বশান এবং গোড়স্থানে থাকে।
এছাড়া আছে সাধারনভাবে ভুতদের সমগোত্রিয় জ্বীন-পরী,কিন্তু আসলে এরা ভুতদের থেকে আলাদা, এরা অন্যজগতের ঠিকই কিন্তু মৃতদের জগতের না। এরা পরীস্থানে থাকে, এদের রাজধানী কোহেকাফ নগর, এরা আগুনের তৈরী, এরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অসম্ভব রূপবতি-রূপবান আবং অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারি।মাঝে মাঝে পত্র-পত্রিকায় জ্বীন ডাক্তারের জটিল অপারেশন করে রুগীকে বাচানোর পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়ে থাকে।
রাক্ষস — খোক্ষস, ডাইনি, দৈত্য-দানো ও ভুতদের থেকে আলাদ, তারা ধরে ধরে মানুষ খায়, বিভিন্ন তন্ত্রমন্ত্র করলেও এরা যে মৃতদের জগৎ থেকে আগত এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই।
বিভিন্ন রাক্ষসী বিভিন্ন সময় মানুষের রূপ ধারনকরে মানব সম্প্রদায় কে বিবাহ করিয়া থাকে বিভিন্ন
দৈত্যও মানুষরাজকন্যার প্রেমে পপরিয়া তাকে ছিনতাই করিয়া বিবাহ করতে উদ্যত হয়
তবে সাধারনত ব্যার্থ হয় ডালিম কুমার রা রাজকন্যা ছিনায়া নিয়া আসে।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!