উমার ইবনে ইয়াসিরের নামায—আমরা সেই সে জাতি –– আবুল আসাদ

নবী (সাঃ) কোনো এক যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন। এক পাহাড়ি এলাকায় এসে সন্ধ্যা হলো। পাহাড়ের এই উপত্যকায় রাত্রি কাটাবেন বলে তিনি মনস্থ করলেন। তিনি পাহাড় থেকে কিঞ্চিৎ দূরে সমতল উপত্যকায় তাঁবু খাটাতে নির্দেশ দিলেন।

রাত্রিবাসের সব ব্যবস্থা সম্পন্ন হলে তিনি সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন,
“কাফেলা ও সৈন্যদলের পাহারায় আজ কাদের রাখা যাবে?”
অমনি একজন মুহাজির ও একজন আনসার উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“এ দায়িত্ব আজকের রাতের জন্য আমাদের দিন।”
মহানবী (সাঃ) তৎক্ষণাৎ সন্তুষ্টচিত্তে তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন। তিনি তাদের নির্দেশ দিলেন,
“পাহাড়ের ওই এলাকা দিয়ে শত্রু আসবার ভয় আছে, সেখানে গিয়ে তোমরা দু’জন পাহারা দাও।”

মুহাজিরের নাম ছিল আবদুল্লাহ ইবন বাশার আর আনসার ব্যক্তির নাম ছিল উমার ইবন ইয়াসির। মহানবী (সাঃ)–এর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা দু’জন পাহাড়ের নির্দিষ্ট জায়গায় চলে গেলেন। এরপর আনসার মুহাজির ব্যক্তিকে বললেন,
“আমরা একসঙ্গে না জেগে বরং পালা করে পাহারা দিই। রাতকে দু’ভাগ করে একাংশে তুমি জাগবে, অপর অংশে জাগব আমি। এতে দু’জন একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ার ভয় থাকবে না।”

এই চুক্তি অনুসারে রাতের প্রথম অংশের জন্য মুহাজির আবদুল্লাহ ইবন বাশার ঘুমালেন। আর পাহারায় বসলেন আনসার উমার ইবন ইয়াসির। পাশে আবদুল্লাহ ঘুমোচ্ছেন। ইয়াসির বসেছিলেন পাহারায়। শুধু বসে বসে আর কতক্ষণ সময় কাটানো যায়! অলসভাবে সময় কাটাতে ভালো লাগছিল না তাঁর। কাজেই অজু করে নামাজে দাঁড়ালেন।

এমন সময় পাহাড়ের ওপাশ থেকে আসা শত্রুদের একজনের নজরে পড়লেন তিনি। এক ব্যক্তিকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আর কেউ আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য আনসারকে লক্ষ্য করে সে তীর ছুড়ল। পরপর দু’টি তীর গিয়ে তাঁর পাশে পড়ল। কিন্তু আনসার অচল, আটল, ভ্রুক্ষেপহীন। তৃতীয় তীর গিয়ে ইয়াসিরের পায়ে বিদ্ধ হলো। ইয়াসির তবু অচঞ্চল। এইভাবে পরপর কয়েকটি তীর এসে তাঁর পায়ে বিঁধল। ইয়াসির তীরগুলো গা থেকে খুলে ফেলে রুকু–সিজদাসহ নামাজ শেষ করলেন।

নামাজ শেষ করে ইয়াসির আবদুল্লাহকে ডেকে তুললেন। আবদুল্লাহ তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালেন। দূরে পাহাড়ের এ পাশে দাঁড়ানো শত্রু একজনের স্থলে দু’জনকে দেখে মনে করল, নিশ্চয় আরও লোক পাহারায় আছে। এই ভেবে আর সামনে বাড়তে সাহস পেল না। পালিয়ে গেল।

আবদুল্লাহ জেগে উঠে ইয়াসিরের রক্তাক্ত দেহের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“কেন তুমি আমাকে আগেই জাগাওনি?”

আনসার উমার ইবন ইয়াসির বললেন,
“আমি নামাজে সূরা কাহাফ পড়ছিলাম। সূরাটা শেষ না করে রুকু দিতে মন চাইছিল না। কিন্তু ভাবলাম, তীর খেয়ে যদি মরে যাই, তাহলে মহানবী (সাঃ)–এর দায়িত্ব পালন করা হবে না। তাই তাড়াতাড়ি রুকু–সিজদা করে নামাজ শেষ করেছি। এ ভয় যদি না থাকত, তাহলে মরে গেলেও সূরাটি খতম না করে আমি রুকুতে যেতাম না।”

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!