হজরত মুসা (আঃ) এর বিবাহ ও যৌবন-৩য় পর্ব
হজরত মুসা(আঃ) এর বিবাহ ও যৌবন-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছফুরা ছেলে যুবকের নিকট গিয়ে বলল, আমার আব্বা আল্লাহা তা’লার প্রেরিত একজন নবী। তিনি আপনাকে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য বলেছেন। তখন হজরত মুসা (আঃ) উঠলেন এবং বললেন চলুন। ছফুরা সম্মুখে এবং হজরত মুসা (আঃ) পিছনে পথ চলতে আরম্ভ করলেন। কিছুক্ষন পরে হজরত মুসা (আঃ) বললেন, হে নবীর বেটি! আপনি আমার পিছুনে হাঁটুন। যেহেতু আপনার পায়ের সৌন্দর্য আমার চক্ষে পড়েছে। এটা শরিয়াত বিরোধী কাজ। তখন ছফুরা বলল, আপনিত পথ চেনেন না, তখন হজরত মুসা (আঃ) বলল আপনি পিছন থেকে পথ বলে দিবেন কোন দিকে অগ্রসর হব। আমি সে অনুসারে পথ চলব।
তখন ছফুরা হজরত মুসা (আঃ) এর পিছনে পথ চলতে আরম্ভ করল। এ ভাবে কিছু সময় পথ চলার পর হযরত শোয়েব (আঃ) এর নিকট গিয়ে পৌঁছল। হযরত শোয়ায়েব (আঃ) হজরত মুসা (আঃ) কে দেখে তার প্রতি দীর্ঘ সময় তাকিয়ে রইলেন। তার পর তিনি বললেন মা ছফুরা! ছেলেটি কে কিছু খেতে দাও। সে ভীষণ ক্ষুধার্ত। বিগত তিন ধরে সে কিছু খায়নি। ছফুরা পিতার আদেশে তার জন্য খাবার নিয়ে আসল। হযরত শোয়ায়ের (আঃ) হজরত মুসা (আঃ) কে খানা খাবার জন্য বলল। হজরত মুসা(আঃ) নবীর আদেশ শীরঃধার্য মনে করে খাবার গ্রহন করলেন। তখন মুছা (আঃ) কে বিশ্রাম করতে বলা হল।
হজরত মুসা (আঃ) বিশ্রাম এক কক্ষে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করতে মনযোগী হলেন। এ সময় ছফুরা এসে পিতার নিকট এসে বলল, বাবা! এই ছেলেটী কে আপনি রাখালের চাকুরিতে নিয়োগ করুন। তার মধ্যে আমি বিরাট লক্ষন পেয়েছি। মুছা (আঃ) চলার জন্য যে কথা পথি মধ্যে ছফুরা কে বলেছিল তা বলল। হযরত শোয়ায়ের (আঃ) বললেন, মা ছফুরা! আমি তার ললাটের যে উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করেছি তা নবী ছাড়া সাধারন মানুষের থাকে না। অতএব তাকে শুধু রাখাল হিসাবে নিয়োগ করা অন্যায় হবে। তার চেয়ে আমি তার সাথে তোমাকে বিবাহ দিয়ে দিতে চাচ্ছি এবং বিয়ের মহরানা হিসাবে তাকে রাখালের দায়িত্ব দিতে পারি। ছফুরা পিতার প্রস্তাবে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করল। বিশ্রাম শেষে হজরত মুসা (আঃ) শোয়ায়েব (আঃ) নিকট আসলেন। তখন তিনি বললেন বাবা! কোথা থেকে তুমি এখানে এসে পৌঁছালে? হজরত মুসা (আঃ) তখন তার পিছনের সব ঘটনা বললেন।
হযরত শোয়ায়েব (আঃ) তার সমস্ত ঘটনা শুনে বললেন, বাবা! তোমার উপর আল্লাহ তা’লার দুনিয়া ও আখিরাতের সর্ব নবুয়াতীর দায়িত্ব অর্পণ করবেন। তাই তোমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসাবে তৈরি করে নিচ্ছেন। অতএব তুমি ধৈর্যের সাথে সকল সমস্যার মোকাবেলা করে যাও। আল্লাহ তোমার সহায়তা করবেন। এই বলে তিনি আদম কর্তৃক বেহেস্ত থেকে আনা মেছেয়াক নামের লাঠিখানা হযরত মুসা (আঃ) কে দিলেন এবং বললেন, এ লাঠি খানা আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) বেহেস্ত হতে এসেছিলেন। এ লাটি অত্যন্ত মোজেযা পূর্ন। এ লাঠি নবী ব্যত্যিত অন্য কেউ ধারণ করতে পারবে না।
এখন তুমি লাঠি স্পর্শ করে এর পবিত্রতা যাচাই কর। হযরত মুসা (আঃ) বিসমিল্লাহ বলে লাঠিটি হাতে নিলেনে এবং চুমা খেলেন। তখন তার চক্ষের সম্মুখে ফেরাউনের দরবারের বর্তমান অবস্থা, তার মায়ের পুত্র হারানো শোকাতুর চেহারা ও তার পিতার অস্থির দৃশ্য সব কিছু পরিষ্কার ভাবে ভেসে উঠল। তিনি কিছু সময় নিরবতার সাথে সব কিছু অবলোকন করার পরে পাঠ করলেন আল হামদুল্লিাহ। অতপর শোয়ায়েব (আঃ) বললেন আমি তোমার নিকট আমার বড় মেয়ে ছফুরা কে বিবাহ দিতে চাই এবং মহরানা বাবদ তোমার প্রতি আট বছরের জন্য মেষ চরানোর চাকুরি বহাল করে দিতে চাই। তবে আট বছর পরে যদি তুমি ইচ্ছে কর তবে দশ বছর পর্যন্ত এ চাকুরী বহাল থাকতে পার সেটা তোমার ইচ্ছাধীন ব্যাপার।
হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আপনি জামানার নবী, আমার পথ প্রদর্শক ও মুরব্বি। অতএব আপনার আদেশ পালন করা আমার পক্ষে ফরজের সামিল। হযরত শোয়ায়েব (আঃ) এর মতামত পেয়ে বিবাহের আয়োজন করলেন এবং সংক্ষিপ্ত ভাবে বিবাহের কার্য সমাধা করে দিলেন। অতপর তিনি মেষ দেখিয়ে বললেন এগুলা নিয়ে তুমি পাহাড়ের পাদদেশে চলে যাও। সেখানে মেষ গুলাকে উদাসীন ভাবে ছেড়ে দিওনা। কারন পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে পর্বতগুহায় বিরাট বিরাট সাপ বাস করে। ওদের সীমানায় গেলে তাকে ওরা খেয়ে ফেলবে। অতএব সাবধানে থেকো।
হযরত মুসা (আঃ) মেষ নিয়ে চলে গেলেন। যেতে যেতে তিনি সে নির্দিষ্ট এলাকা, পাহাড়ের দক্ষিন প্রান্তে পৌঁছালেন। তখন তিমি মেষগুলা কে ওখান থেকে ফিরিয়ে আসার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মেষগুলা ছিল এমন বেয়াড়া যে এদিক ওদিক ছুটাছটি করে ওখানেই থাকল পিছনের দিকে আর আসল না। হযরত মুসা(আঃ) তখন আল্লহার উপর ভরসা করে এক যায়গায় বসে বিশ্রাম নিলেন। কিছুক্ষন পরে তার চোখে ঘুম আসল তাতে তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না।
সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হজরত মুসা(আঃ) এর বিবাহ ও যৌবন-৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন