একটি কাক এবং একটি উপলদ্ধি

কাকটা বিলের ধারে শেওড়া গাছের ডালে বিষণ্ণ মনে বসেছিল।
একাধারে সঙ্গী হারানোর তীব্র বেদনা, অপরদিকে ক্ষুধায় আমৃত্যু অনশন!
অদূরেই নগ্ন তরুণীর গলিত লাশ ভেসে আছে।
গতরটা বেশ তাগড়া! দূর থেকেও স্পষ্ট বোঝা যায়।
ভালো করে দেখার জন্য কাকটা দেহটির পাশে গিয়ে কচুরিপানার ডগায় বসল।
ছিন্ন পোশাকে দারুণ মানিয়েছে দেহটিকে। খুবলে খুবলে নেওয়া হয়েছে দেহের এক-তৃতীয়াংশ।
ভীষণ লোভ হচ্ছিল কাকটার কয়েকটা ঠোকর দিতে।
কি নরম দেহ! দুটো ঠোকর দিতে পারলে বেশ হতো – কাকটি বসে বসে ভাবে।

—কি ভাবো?
একটা মেয়েলি কণ্ঠের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ে কাকটির।

—কিছুনা! কি ভাববো?

—মিথ্যে বলছো কেন? তুমি একটু আগে আমাকে ঠোকর দেওয়ার কথা ভেবেছিলে না?

—তা ভেবেছিলাম!

—তাহলে দাও! বসে আছো কেন?

—কিন্তু!

—কিন্তু কেন?

—কাকদের মানুষের মাংস খেতে নেই।

—তাহলে চলে যাও, বসে আছো কেন?

—তোমাকে দেখছি!

—ছি! লজ্জা করছে না তোমার? একটা নগ্ন মেয়েকে দেখতে?

—আমি তো কাক! আমার আবার লজ্জা কিসের!

—তোমাকে সহ্য করতে পারছি না। তুমি চলে যাও! নয়তো ঠুকরে ঠুকরে আরো ক্ষতবিক্ষত করে দাও! নয়ত কয়েকটা শকুন পাঠিয়ে দাও। নগ্ন দেহে ছিন্ন পোশাকে এভাবে নষ্ট পানিতে ভেসে থাকতে থাকতে মরার প্রতিও অনিহা এসে গেছে।

কাকটি উড়ে যায়। বেশি দূরে নয়, পাশের আরেকটি কচুরিপানার ধাপে।
মেয়েটির কথা শুনে কাকটির ভাবনায় নতুন চেতনার জন্ম নেয়— ভাগ্যিস সে মানুষ হয়ে জন্মায়নি!

হঠাৎই কাকটি কর্কশ কণ্ঠে ডেকে উঠে— “কা কা কা!”
বোঝা যায় না এই ডাক বিষণ্ণতার ডাক নাকি চেতনার উপলব্ধিতে প্রাপ্ত মানুষের প্রতি তীব্র ক্ষোভের ডাক!

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!