ডিজিটাল ফাঁদ

বোরকা পরা দু’মহিলা এগিয়ে যাচ্ছে নাঈমের দিকে। তাদের একজনের কোলে দুই বছরের একটা শিশু। একটু ইতস্তত করে নাঈমকে নিচু স্বরে ডাকল মহিলাদের একজন—
—এই যে ভাইয়া…
—উঁ… (মোবাইলের স্ক্রিন থেকে মুখটা তুলে)
—ভাইয়া, আমাদের একটু সাহায্য করবেন ভাইয়া? আমরা অনেক বিপদে পড়েছি ভাইয়া…
—কি হয়েছে?
—ভাইয়া, আমাদের বাড়ি দিনাজপুর ভাইয়া। বাবার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় গিয়েছিলাম হাসপাতালে।
—হুঁ…
—এখন বাড়ি ফিরবার টাকাও নাই ভাইয়া। বাচ্চাটা সারাদিন না খেয়ে আছে ভাইয়া। একটু সাহায্য করেন ভাইয়া…
—মাফ করেন।
—ভাইয়া, দেন না ভাইয়া, একটু সাহায্য করেন ভাইয়া।
—বললাম তো মাফ করেন। যান তো…
—ভাইয়া, বিশ্বাস করেন, আব্বা মারা যাওয়ার পর হাসপাতালের লোকজন সব টাকা নিয়ে গেছে। একটা টাকাও নাই ভাইয়া। অসহায় বোন দুটিকে একটু সাহায্য করেন…
—ওহ… মারা গেছেন!
—জি ভাইয়া।
—আপনার বাবার লাশ কোথায়?
—অ্যাম্বুলেন্সে। আসেন ভাইয়া, দেখে যান সত্যি না মিথ্যা বলছি…
—চলুন দেখি…

এবার একটু কৌতূহল জাগল নাঈমের। হাতের আইফোনটা পকেটে রেখে মহিলাদুটোর পিছে পিছে এগিয়ে চলল। বাজারের এদিকটায় লোকজন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আসে না বললেই চলে। ওরা এখানে কেন এনেছে—ভাবতে গিয়ে একটু অবাকই হলো সে। অ্যাম্বুলেন্সটার পাশেই একটা লোক দাঁড়িয়ে—বোধহয় গাড়ির ড্রাইভার।

মহিলাদের একজন এগিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খুলে দিল। এবার নাঈম এগিয়ে গেল। বাবার লাশটা সাদা কাপড়ে মোড়ানো। মুখটা দেখার জন্য একপাশের কাপড় সরাতেই চমকে উঠল সে—এ কী!! এটা তো একটা বালিশ মুড়িয়ে রাখা…

চকিতে পেছনে ঘুরে দাঁড়াল নাঈম—ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বোরকার নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে সাইলেন্সার লাগানো ভোঁতা রিভলভার…
—ভেতরে ঢোক।
—ম্… মানে?
—যা, ভেতরে… মোবাইল, মানিব্যাগ, টাকা-পয়সা সব ওই পাশের সিটে রাখ।

(কথা বলতে বলতে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে ওরা। রিভলভারটা এখনো পেট বরাবর তাক করে রাখা।)
—শিপন, গাড়ি টান দে। মিলি, বাচ্চাটা রেখে পোলাটার চোখ আর হাত-পা শক্ত করে বাঁধ।

কথামতো কাজ করে মিলি নামের মেয়েটা। বাঁধা শেষ হতেই পেছন থেকে শক্ত কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে কেউ একজন আর প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারাল নাঈম…

বৃষ্টির প্রথম ফোঁটাটা নাকে পড়তেই জ্ঞান ফিরে পেল নাঈম। চোখ মেলতেই রাতের মেঘলা আকাশের দিকে দৃষ্টি চলে গেল তার। মাথার পেছনের দিকে এখনো টিপটিপে ব্যথা করছে। দূরে হাইওয়েতে গাড়ি চলার হালকা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে…

নাঈম যেখানে পড়ে আছে সেখান থেকে অনেক দূরে…

একটা বাজার… ডাচ্‌বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে একটা ছেলে বের হয়ে এলো। দ্রুত পায়ে বোরকা পরা দু’জন মহিলা ছেলেটার পেছন পেছন হেঁটে চলল। তাদের একজনের কোলে আবার ছোটো একটা বাচ্চা। বাজারের কোনায় দাঁড়ানো একটা অ্যাম্বুলেন্স…

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!