হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রাঃ ) ও তাঁহার স্ত্রী ফাতেমা (রাঃ ) অর্থাৎ হযরত ওমর (রা:) এর বোনের কষ্ট সহ্য করা – ২য় পর্ব
বর্ণনাকারী বলেন, হযরত ওমর (রাঃ) বই-পুস্তকাদি পড়িতে জানিতেন। বোন বলিলেন, তুমি নাপাক, এই কিতাব পবিত্র ব্যক্তি ব্যতিত স্পর্শ করিতে পারে না। উঠিয়া গোসল অথবা ওযু করিয়া লও। হযরত ওমর (রাঃ) ওযু করিলেন। তারপর কিতাব হাতে লইয়া সূরা তা-হা পড়িতে আরম্ভ করিলেন এবং এই আয়াত পর্যন্ত পড়িলেন-
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
অর্থঃ আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতিত কোন মাবুদ নাই। অতএব আমরাই এবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামাজ কায়েম কর।
অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, আমাকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর নিকট লইয়া চল। হযরত খাব্বাব (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)এর এই কথা শুনিয়া ঘরের ভিতর হইতে বাহির হইয়া আসিলেন এবং বলিলেন, হে ওমর, সুসংবাদ গ্রহণ কর। রাসূল (সাঃ) বৃহস্পতিবার রাত্রে এই দোয়া করিয়াছিলেন, হে আল্লাহ! ওমর ইবনে খাত্তাব অথবা আমর ইবনে হিশাম আবু জেহেলের ইসলাম গ্রহণ দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি করুন। আমি আশা করি তাঁহার এই দোয়া তোমার পক্ষে কবুল হইয়াছে।
বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় রাসূল (সাঃ) সাফা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি ঘরে অবস্থান করিতেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) যখন সেখানে পৌঁছিলেন তখন ঘরের দরজায় হযরত হামজা ও হযরত তালহা (রাঃ)সহ রাসূল (সাঃ)এর সাহাবাদের মধ্য হইতে কতিপয় লোক উপস্থিত ছিলেন। হযরত হামজা (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ)এর কারণে লোকদেরকে ভীত হইতে দেখিয়া বলিলেন, হ্যাঁ, এই ওমর, যদি আল্লাহ তায়ালা তাহার জন্য মঙ্গল চাহিয়া থাকেন তবে সে ইসলাম গ্রহণ করিয়া নবী কারীম (সাঃ)-এর অনুসারী হইবে। অন্যথায় তাহাকে হত্যা করা আমাদের জন্য অতি তুচ্ছ ব্যাপার। রাসূল (সাঃ) তখন ঘরের ভিতরে অবস্থান করিতেছিলেন এবং তাঁহার উপর ওহী নাযিল হইতেছিল।
অতঃপর রাসূল (সাঃ) বাহির হইয়া হযরত ওমর (রাঃ)এর নিকট আসিলেন এবং তাঁহার জামার বুক ও তরবারীর ফিতা ধরিয়া বলিলেন, তুমি কি ক্ষান্ত হইবে না? হে ওমর! তুমি কি ইহার কি ইহার অপেক্ষা করিতেছি যে, আল্লাহ তায়ালা তোমার উপরও সেই অপমান ও শাস্তি নাযিল করেন যাহা ওলীদ ইবনে মুগীরার উপর নাযিল করিয়াছেন? আয় আল্লাহ, এই ওমর ইবেন খাত্তাব, আয় আল্লাহ, ওমর (রাঃ) বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করিয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আপনি মসজিদে হারামে নামাজের উদ্দেশ্যে বাহির হউন। (বিদায়াহ)
তাবারানী হইতে বর্ণিত অপর এক রেওয়াতে আছে যে, হযরত সাওবান (রাঃ) বলিয়াছেন, রাসূল (সাঃ) বলিলেন, আয় আল্লাহ, ওমর ইবনে খাত্তাবের দ্বারা ইসলামকে শক্তিশালী করুন। সেই রাতের প্রথম অংশে হযরত ওমর (রাঃ)এর বোন-
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ অর্থঃ (হে নবী) আপনি নিজ রবের নাম লইয়া কোরআন পাঠ করুন, যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন।
তিলাওয়াত করিতেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) তাহাকে মারিয়া ফেলিয়াছেন। ভোররাতে হযরত ওমর (রাঃ) ঘুম হইতে উঠিয়া পুনরায় তাহাকে উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করিতে শুনিতে পাইয়া বলিলেন, আল্লাহর কসম, ইহা না কোন কবিতা আর না অস্পষ্ট কোন কথা যাহা বুঝা যায় না। অতএব তিনি সেখান হইতে সোজা রাসূল (সাঃ)-এর নিকট আসিয়া দরজায় হযরত বেলাল (র:) কে পাইলেন। তিনি দরজায় করাঘাত করিলে হযরত বেলাল (রাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, কে? তিনি উত্তর দিলেন, ওমর ইবনে খাত্তাব। হযরত বেলাল (রাঃ) বলিলেন, অপেক্ষা কর আমি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট হইতে তোমার জন্য অনুমতি লইয়া আসি।
অতঃপর হযরত বেলাল (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ওমর দরজায় উপস্থিত হইয়াছে। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, আল্লা তায়ালা যদি ওমরের ভাল চাহেন তবে তাহাকে দ্বীন ইসলাম গ্রহণের তৌফিক দিবেন এবং হযরত বেলাল (রাঃ) কে বলিবেন, দরজা খুলিয়া দাও। রাসূল (সাঃ) বাহির হইয়া আসিলেন এবং হযরত ওমর (রাঃ)এর দুই বাহু ধরিয়া ঝাঁকুনি দিয়া বলিলেন, তুমি কি চাও, কেন আসিয়াছ? হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, আপনি যে বিষয়ে দাওয়াত দিয়া থাকেন তাহা আমার নিকট পেশ করুন। নবী কারীম (সাঃ) বলিলেন, তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবু নাই, তিনি এক তাঁহার কোন শরীক নাই এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁহার বান্দা ও রাসূল। হযরত ওমর (রাঃ) তৎক্ষণাৎ ইসলাম গ্রহণ করিলেন এবং বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ বাহিরে চলুন।