হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের উদ্দেশ্যে হাবশার দিকে রওয়ানা – ১ম পর্ব
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমার জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর হইতেই আমি আমার পিতামাতাকে ইসলামের উপর পাইয়াছি। প্রতিদিন সকাল বিকাল দুইবেলা রাসূল (সাঃ) আমাদের ঘরে আসিতেন। মুসলমানদের উপর কাফেরদের অত্যাচারের মাত্রা চরমরূপ ধারণ করিলে হযরত আবু বকর (রাঃ) হিজরতের উদ্দেশ্যে হাবশার দিকে রওয়ানা হইলেন। বারকুল গিমাদ পর্যন্ত পৌঁছার পর কারাহ গোত্রের সর্দার ইবনে দাগিনার সহিত সাক্ষাৎ হইল।
ইবনে দাগিনা জিজ্ঞাসা করিল, হে আবু বকর, কোথায় যাইতেছেন? হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, আমার কওম আমাকে বাহির করিয়া দিয়াছে। এখন আমার ইচ্ছা হইতেছে, জমিনের বুকে ভ্রমণ করিতে থাকিব এবং আমার পরওয়ারদিগারের এবাদত করিতে থাকিব। ইবনে দাগিনা বলিল, হে আবু বকর (রাঃ) আপনার ন্যায় ব্যক্তি না দেশ ত্যাগ করিতে পারে আর না দেশত্যাগে বাধ্য করা করা উচিত হইবে। কারণ আপনি তো গরীব দুঃখীর অন্ন যোগান, আত্মীয়-স্বজনের সহিত সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় অনাথের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, মেহমানদারী করেন এবং বিপদ-আপদে সাহায্য করেন।
আমি আপনাকে আশ্রয় প্রদান করিলাম। চলুন, আপনি নিজ শহরে নিজ রবের এবাদত করিবেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) ফিরিয়া আসিলেন এবং তাহার সঙ্গে ইবনে দাগিনাও আসিল। সেদিন সন্ধ্যায় ইবনে দাগিনা কোরাইশের সর্দারের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বলিল, আবু বকরের ন্যায় ব্যক্তি দেশ ত্যাগ করিতে পারে না এবং তাহার ন্যায় ব্যক্তিকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করাও উচিত হইবে না।
তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বাধ্য করিতেছ, যিনি গরীব-দুঃখীর অন্ন যোগান, আত্মীয়-স্বজনের সহিত সদ্ব্যবহার করেন, অসহায়-অনাথের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, মেহমানদারী করেন এবং বিপদ-আপদ সাহায্য করেন? কোরাইশ ইবনে দাগিনার আশ্রয় দানের কথাকে অস্বীকার করিল না, বরং তাহারা ইবনে দাগিনাকে বলিল, আবু বকরকে বলিয়া দাও, সে যেন আপন রবের এবাদত নিজ ঘরে বসিয়া করে।
ঘরের ভিতরেই নামাজ ও যত ইচ্ছা কোরআন পড়ে। প্রকাশ্যে এই সকল কাজ করিয়া আমাদিগকে কষ্ট না দেয়। তাহার কারণে আমরা আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের গোমরাহ হওয়ার আশঙ্কা করিতেছি। ইবনে দাগিনা এইকথাগুলি হযরত আবু বকর (রাঃ)কে বলিয়া দিল।
হযরত আবু বকর (রাঃ) কিছুদিন পর্যন্ত (কোরাইশদের শর্ত অনুযায়ী) নিজ ঘরেই আপন রবের এবাদত করিতে থাকিলেন। উচ্চস্বরে নামাজ পড়িতেন না এবং নিজ ঘর ব্যতিত অন্য কোথাও কোরআন তিলাওয়াত করিতেন না। কিছুদিন পর তাহার খেয়াল হইল এবং তিনি নিজ ঘরের আঙ্গিনায় একটি মসজিদ বানাইয়া উহাতে নামাজ ও উচ্চস্বরে কোরআন তিলাওয়াত করিতে আরম্ভ করিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) অত্যাধিক কান্নাকাটি করিতেন। কোরআন তিলাওয়াতের সময় তিনি নিজের অশ্রু সংবরণ করিতে পারিতেন না।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের উদ্দেশ্যে হাবশার দিকে রওয়ানা – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন