রাত ৩টা। গভীর ঘুমের মধ্যে আমি। হঠাৎ মোবাইল বেজে ওঠায় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এমন সময় ঘুম ভাঙলে বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবুও কষ্ট করে মোবাইল রিসিভ করলাম। অপরিচিত নম্বর আর নারীকন্ঠের আওয়াজ। আমি হ্যালো না বলতেই ওই প্রান্ত থেকে মেয়েটি বলে, আসলে ভাইয়া, আমি এতরাতে আপনার ঘুম ভাঙাতে চাইনি, তবুও কোনো উপায় না থাকায় আপনাকে কল দিতে বাধ্য হলাম। আমি বিরক্তিকর কন্ঠে তাকে বললাম, এত কথা না বলে কী বলতে চান তা-ই বলেন।
মেয়েটি বলে, আমি কিছুক্ষণ আগে এক’শ টাকা আমার মোবাইল থেকে পাঠাতে গিয়ে টাকাগুলো আমার বান্ধবীর কাছে না গিয়ে নম্বর ভুল হয়ে আপনার নম্বরে চলে গেছে। যদি পারেন, টাকাগুলো এই নম্বরে পাঠিয়ে দেন। আমি দিচ্ছি বলে মোবাইল কেটে দিলাম। তারপর দেখি মোবাইলে একটা এসএমএস। মেসেজটাতে লেখা ছিল, ণড়ঁ যধাব ৎবপবরাবফ ঃধশধ ১০০. আমি ভাবলাম, তাই তো আমার মোবাইলে মেয়েটা ভুলে ১০০ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি তার কথামত তার মোবাইলে সেই ১০০ টাকা পাঠিয়ে দিলাম। কিছু না ভেবেই আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে ওঠার পর সকাল ১০ টায় মোবাইল হাতে নিয়ে ব্যালেন্স চেক করতেই দেখি আমার মোবাইলে আছে মাত্র ১৩ টাকা। ভাবলাম কী হলো, আমার মোবাইলে গত রাতেও ১১৫ টাকা ছিল। তখনই মনে পড়ল রাতে কল দেয়া মেয়েটার কথা।
ভাবলাম তার পাঠানো টাকাই তো আমি তাকে পাঠালাম। তবুও একটু নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার পাঠানো টাকার এসএমএসটা পড়লাম। দেখেই বুঝতে পারলাম, মেয়েটা আমার সঙ্গে বেঈমানি করেছে। তার এসএমএসটা আসলে সে নিজে এভাবে দিয়ে আমাকে পাঠিয়েছে। সে কোনো টাকা আমার মোবাইলে পাঠায়নি। বুঝতে পারলাম, মেয়েটা আমাকে বোকা বানানোর জন্য এ কাজটা করেছে। আমি চিন্তা করতে লাগলাম, কীভাবে মেয়েটাকে বোকা বানানো যায়। পরদিন তার নম্বরে একটা এসএমএস দিলাম, অঢ়হধৎ শড়হঃযড়ঃধ শযাঁ ংঁহফড়ৎ (আপনার কন্ঠটা খুব সুন্দর)। তিন ঘন্টা পর তার উত্তর, অঢ়হধৎ নড়হফযঁ যড়নড় (আপনার বন্ধু হব)। আমি মেয়েটাকে বোকা বানাতে পারলেই মনে করব আমি প্রতিশোধ নিতে পেরেছি। এরপর মেয়েটা প্রায়ই আমাকে বিভিন্ন কিছু লিখে এসএমএস দিত। আমিও দিতাম। আমি সুযোগ খুঁজছি কখন মেয়েটাকে বোকা বানিয়ে আমার প্রতিশোধ নিতে পারব।
কিছুদিন পর মেয়েটা আমাকে এসএমএস দিয়ে জানায়, আমার সঙ্গে সে দেখা করতে চায়। আমি খুব খুশি হলাম যে, তাকে বোকা বানানোর এখনই আসল সময়। দেখা করার জায়গা ঠিক করলাম আমাদের বাজারের একটা রেস্টুরেন্টে। দু’দিন পরে দেখা হবে। সেখানে যে কোন উপায়ে তাকে বোকা বানাতেই হবে।
এলো প্রত্যাশিত সেই দিনটি। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই দেখি মেয়েটা তার একটা বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়েই এসেছে। সেখানে আমরা নাস্তা করলাম। নাস্তা শেষ না হতেই মেয়েটা আমাকে বলে, এই রেস্টুরেন্টের সামনের ঝরনাটা অনেক সুন্দর, পানি পড়ার দৃশ্যটাও খুব সুন্দর। আপনার মোবাইলে দু’টা ছবি তুলব ? দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তাকে আমার ৬১২০ নকিয়া মোবাইলটা দিলাম ছবি তোলার জন্য। ভাবতে থাকলাম, কীভাবে তাকে বোকা বানাতে পারব। কিছুক্ষণ পর দেখি, ছবি তুলতে গিয়ে মেয়েটি আর ফিরে আসছে না। অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ৩ ঘন্টা শেষ। রেস্টুরেন্টের এক বয়-এর কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে মেয়েটাকে কল দিলাম। তার মোবাইল বন্ধ, সঙ্গে আমারটাও ! মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে এলাম। অসহায় হয়ে ভাবতে থাকি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মেয়েটাকে বোকা বানাতে গিয়ে আমি সত্যি দ্বিতীয়বার বোকা বনে গেলাম। মেয়েটা আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল- তা কি আমাকে দ্বিতীয়বার বোকা বানানোর জন্য ? প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এ কী হলো। হারালাম আমার দামি মোবাইলটা।
কয়েকদিন পর আমার ক্লাসমেট বান্ধবী পারভীন আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমার বাড়িতে কাল তোর দাওয়াত। পরদিন দাওয়াত খাওয়ার জন্য পারভীনের বাড়িতে গেলাম। তার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। এক ফাঁকে সে একটা ছোট্ট প্যাকেট আমাকে দিয়ে বলে, এই প্যাকেটটা বাড়িতে গিয়ে খুলবি। আমি মনে করলাম, সে আমাকে কোন গিফ্ট দিচ্ছে। মন না মানায় প্যাকেটটি খুলে ফেললাম। দেখি কিছুদিন আগে এক জল্লাদ মেয়ে কর্তৃক ছিনতাই হওয়া আমার মোবাইলটি। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বললাম, এই মোবাইলটি কোথায় পেয়েছিস ? তার উত্তর, সরি, সরি, সরি। সবটাই আমার কারসাজি। শুধু মজা করার জন্যই আমার এক বান্ধবীকে দিয়ে এ কাজগুলো করিয়েছি। আমি তখনই তাকে বললাম, মজা করার জন্য বল আর অন্য কিছু করার জন্য বল, আমাকে সত্যি তুই ডাবল (দু’বার) বোকা বানিয়ে ছাড়ছি।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।