মধ্যরাতে হঠাৎ বাথরুমের চাপ উঠে মাহিমের। মাহিম কী করবে ভেবে পায়না। গা ছম ছম করা ভূতের গল্প শুনে ইদানিং তার ভূতের ভয় পেয়ে বসেছে। দাদুর কাছে রোজ একটি করে ভূতের গল্প শুনে তারপর বিছানায় যায়। এটা যেন তার নিয়ম মাফিক রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোজ একটি করে ভূতের গল্প তার শোনা চাই-ই চাই। আজও সে দাদুর কাছে একটি ভয়ংকর ভূতের গল্প শুনেছে। ভূতের গল্প শোনার পর থেকে তার কেমন জানি ভয় ভয় লাগতে শুরু করেছে। তারপরও সে বিশ্বাস করে- পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু নাই। ওগুলো মানুষের সব আজব-বানানো।
মাহিম কিন্তু পড়াশোনায় খারাপ না। এক দুই তিনের মধ্যে রোল না হলেও ছাত্র হিসেবে মোটামুটি ভালো। ক্লাসে তার রোল পাঁচ। সে একটু মনোযোগী হলে আর চেষ্টা করলে এক দুই তিনের মধ্যে আসতে পারে। কিন্তু বরাবরই রাত একটু বেশি হলেই পড়াশোনায় তার অনীহা। পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখেই দাদুর কাছে গল্প শুনতে ছুটে যায়। আর তাতেই বাজে বারোটা। এভাবে রোজ রোজ গল্প শোনার কারণে তার পড়াশোনা খারাপের দিকে যেতে থাকে। দাদু অবশ্য জিজ্ঞেস করেন- “তুমি কী পড়াশোনা শেষ করে এসেছো?” মাহিম জানে যদি সে বলে-না, আর একটু বাকী আছে, তাহলেই হলো। দাদু বেঁকে বসবে। চশমাটা ফাঁক করে বড় বড় চোখ করে দাদু বলবে-“যাও, আগে পড়া শেষ করে আসো, তারপর গল্প। পড়া শেষ না হলেতো তোমাকে আমি গল্প শোনাতে পারবোনা দাদু ভাই। কন্ডিশন কী ভুলে গেছো?” দাদু বেঁকে গেলেই তার গল্প শোনা বৃথা। তাই সত্য মিথ্যা মিশেল করে দাদুকে রাজি করিয়ে সে গল্প শোনে। আজ ভয়ংকর যে ভূতের গল্প মাহিম শুনেছে এবং দাদু এই ভূতটার যে রকম বর্ণনা দিয়েছে ঠিক সে রকমই একটা ভূতের ছবি সবসময় তার মনের মাঝে ভাসছে। ঘুম ভাঙার পর মাহিম বাথরুমের দিকে যাবে কিনা ভাবছে।
কিন্তু তার আজ খুব ভয়ও করছে। আবার সে এটাও ভাবছে যে, ধূত! ভূত-টুথ বলে কিছু আছে নাকি?
হঠাৎ সে দেখতে পেলো একটি কালো রঙের ছায়া তার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। প্রথমে সে মনে করলো এটা কল্পনা। কিন্তু, না সত্যি সত্যি একটা ছায়া মূর্তি তার দিকে এগিয়ে আসছে। মাহিম তার চোখ কঁচলিয়ে বুঝে উঠার চেষ্টা করলো- সত্যিই কিনা! দেখলো, সত্যি সত্যি একটি কালো ভূত তার সামনে এসে দাঁড়ালো। মাহিম ভয়ে জড়োসড়ো। একেবারে বাকরুদ্ধ। চিৎকার করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে এই মুহূর্তে। সে কম্পমান দৃষ্টিতে ভূতটার দিকে তাকিয়ে আছে। দেখলো, ভূতটা ইয়া লম্বা, বড় বড় কুলোর মত দুইটা কান, চোখ দুটো আগুনের গোলসার মত। প্রায় একশোর উপরে দাঁত, নাকটা এক হাত লম্বা আর হাত দুটো শরীরের তুলনায় এত্ত বড় বড়…! ঠিক দাদু তার আজকের গল্পে যে ভূতের বর্ণনা দিয়েছেন, সব কিছু মিলে যাচ্ছে তার দেখা এই ভূতের সাথে। হঠাৎ ভূতটা র্ককশ স্বরে কথা বলে উঠলো- “শোন মাহিম্ম্ম্, তুমি কিন্তু দাদুর কাছে রোজ রোজ মিথ্যা বলে বলে ভূতের গল্প শুনে পড়াশোনায় খারাপ করে ফেলছোছোছো। এজন্য কিন্তু তোমাকে খেসারত দিতে হবেবেবেবে…। মাহিম কোন উত্তর দিতে পারলোনা। সে ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে গেলো। ভূতটা আবার বললো- “শোন, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ডন্ডন্ড। শিক্ষা ছাড়া কেউ উন্নতি করতে পারেনানানা। তোমার লেখাপড়ায় মন দেয়া উচিতত্ত্। তুমি যদি লেখাপড়া না করে করে পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করে ফেলো তাহলে কিন্তু আমরা ভূতেরা ভীষন কষ্ট পাবো এবং তোমাকে ধরে আমাদের দেশে নিয়ে যাবোবোবো। এ কথা শোনার পর মাহিম না না করে চিৎকার করে উঠলো। হঠাৎ মাহিমের ঘুম ভেঙে গেলো। সে বুঝতে পারলো, সে দুঃস্বপ্ন দেখছিলো। সে দেখলো, সকাল হয়েছে, সূর্য উঠছে, পাখি ডাকছে কিন্তু তখনো ভূতের জ্ঞানগর্ভ কথাগুলো তার কানে বাজছিলো। ‘শিক্ষাই জাতির…।এরপর মাহিম সিদ্ধান্ত নিলো সে আর পড়াশোনায় অবহেলা করবেনা এবং পরীক্ষায় ফার্স্ট হবে।।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।