ঈদে বাসার সবার জন্যে তাদের পছন্দের সব গুলো জিনিসই কেনাকাটা করেছি। আলাদা করে রেখেছি ঈদ সেলামিও। নিজের জন্যেও বেশ কিনেছি, শহরের নামিদামি মার্কেট থেকে। শুধু একজনের জন্যে কিছুই কেনা হয়নি। বার বার কিনতে গিয়েও হাত গুটিয়ে নিয়েছি। তার জন্যেই কেনা হয়নি, যার শরীরের ভ্রƒণে আমার জন্ম। যার রক্তে মাংসে জন্মেছে আমার এক টুকরো মাংসপিন্ড, পেয়েছে আকার। নিজের শরীরটাকে দশ মাস দশ দিন আরেকটা মানুষের পরম আশ্রয়স্থল বানিয়ে পাহাড়ের মত ঠাঁয়, অটল থেকেছেন তিনি। আমার সুস্থতার কথা ভেবে নিজেই থেকেছেন অসুস্থতায়। শুয়েছেন মোটিতে উঁপুড় হয়ে, শুধু একমাত্র আমার জন্যেই। আমার আবির্ভাবকে স্বাগত জানাতে হাসপাতালের বেডে তীব্র যন্ত্রণা উপেক্ষা করে একাই যুদ্ধ করেছেন মৃত্যুর সাথে। দুই হাতের মুঠি খাটের দু’পাশে শক্ত করে ধরে, দুই পায়ে গলাকাটা মুরগীর মত লাফানো তীব্র ব্যথায়, ভূমিকম্পের মত দেহের ঝাকুনিতে, অজস্র রক্ত স্রোতের বন্যায় এবং দাঁত কামড়ানো আত্মচিৎকারে পৃথিবীতে আমার আবির্ভাব। এই ব্যথান্বিত শরীর নিয়েই ডান কাঁধটা আমার নিকট ফিরান তিনি। আমি ভালো আছিতো? চুমোয় চুমোয় ভরান আমার আঙিনা। আমি ওয়াও!ওয়াও! শব্দ করি। তিনি হাসের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাসি। সে শরীর তখন আনন্দে বিহ্বল নেচে উঠেছে, নেচে উঠেছে সমগ্র পৃথিবী। সে-ই আবার প্রথম মুখে তুলে দিয়েছেন তারই রক্ত-মাংসে গড়া দু’ফোঁটা মিষ্টি জল। এই শারীরিক অসুস্থতার প্রতিকূল পরিবেশেও হেসেছেন তিনি, নিজেই মুছেছেন চোখ-যাতে ওই কান্নার রেশ আমাকে বিষণœ না করে!
তিনিই মাথায় হাত রেখে শিখিয়েছেন ঘুম পাড়ানির গল্প। শিখিয়েছেন চাঁদ, সূর্য, গ্রহ তারার রহস্য। পৃথিবীর সকল বীর পুরুষের গৌরবান্বিত শৌর্য বীর্যে গড়া ইতিহাসের গল্প। আমার কঁচি হাতে অ আ ক খ অক্ষর জ্ঞানের দীক্ষা দিয়েছেন তিনি। বইকে পরম বন্ধু ভাবার চেতনা দিয়েছেন তিনি। পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য শুধু শিক্ষাই নিজের স¤পদ হয়ে থাকে, শিক্ষা দেয় সকল অন্যায়কে প্রতিহত করবার সাহস । মিথ্যা মিথ্যাই, এর যে কোন পক্ষ-বিপক্ষ নেই তাও শিখিয়েছেন তিনি। আমার বেড়ে ওঠায় তিনি হেসেছেন। আমি হোঁচট খেলে তিনি কেঁদে ভাসাতেন বুক। কতবার অর্বাচীনের মত এটা সেটা খেতে চেয়েছি, জানতে চাইনি তার মন ভাল ছিল কিনা! অথচ ঘুমাতে যাওয়ার আগে একবারো জানতে চাইনি তিনি খেয়েছেন কিনা? অথচ তার সমস্ত দিয়ে আমাকে সুখে রেখেছেন তিনি। সে আর কেউ নয়, আমার দরদী মা। আজ বুকের ভেতর অজানা আর্তনাদে কুঁড়ে কুঁড়ে খায় দেহ থেকে দেহান্তর। প্রতিটি নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে, চোখের অশ্র“বিন্দুতে বিষাদের করুণ ছায়া। মাঝে মাঝে থমকে দাঁড়িয়ে দেখছি শত সহস্র মা; মায়ের প্রতিচ্ছবি। শুধু দেখিনা আজ সতের বছর আমার মায়ের শীতল মুখ খানি। সতের ঈদ এলো গেল। শুধু মা-ই এলো না। আমি আমার মধ্যে আমার মাকে বহন করে চলি, আমার মধ্য থেকে জন্ম নেয় আরো এক প্রাণ, সে প্রাণেও থেকে যায় মায়ের সরলতা, কোমলতা, ভালবাসা, বিশ্বাস, আদর্শের ব্যাপ্তি। ভালো থেকো মা।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।