তায়েফের হৃদয় বিদারক ঘটনা – ৩য় পর্ব
তায়েফের হৃদয় বিদারক ঘটনা – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মূসা ইবনে ওকবা (রহঃ) বর্ণিত রেওয়াতে আছে যে, তায়েফবাসী রাসূল (সাঃ)-এর পথের দুই পার্শ্বে সারিবদ্ধ হইয়া বসিয়া গেল। তিনি যখন পথ চলিতে আরম্ভ করিলেন তখন প্রতিটি পদক্ষেপ তাঁহার পদযুগলের উপর তাহারা পাথর নিক্ষেপ করিতে লাগিল এবং তাঁহাকে রক্তাক্ত করিয়া দিল। তিনি যখন তাহাদের হাত হইতে রেহাই পাইলেন তখন তাঁহার পদযুগল হইতে রক্ত ঝরিতেছিল।
ইবনে ইসহাক (রহঃ) বর্ণিত রেওয়াতে আছে যে, রাসূল (সাঃ) যখন বনু সাকীফের কল্যাণের ব্যাপারে নিরাশ হইয়া তাহাদের নিকট হইতে উঠিলেন তখন তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা যাহা করিবার করিয়াছ (অর্থাৎ আমার দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছ)। অন্ততপক্ষে এই কথাবার্তাগুলি প্রকাশ করিয়া দিও না। কারণ তিনি চাহিতেন না যে, এই সকল কথা তাঁহার কওমের নিকট পৌঁছুক এবং তাঁহার বিরুদ্ধে কওমের লোকেরা আরো বেশী দুঃসাহসী হইয়া উঠুক। কিন্তু সাকীফের সর্দারগণ এই অনুরোধ রক্ষা করিল না, বরং তাহারা বখাটে ছোকরার দল ও নিজেদের গোলামদিগকে তাঁহার বিরুদ্ধে উসকাইয়া দিল।
আর তাহারা রাসূল (সাঃ)কে গালাগাল দিতে লাগিল এবং হৈচৈ করিতে আরম্ভ করিল যাহাতে বহু লোকজনের ভীড় জমিয়া গেল। তিনি বাধ্য হইয়া ওতবা ইবনে রাবিআহ ও শাইবা ইবনে রাবিআর বাগানে আশ্রয় লইলেন ওতবা ও শাইবা তখন বাগানেই মওজুদ ছিল। সাকীফের বখাটে ছোকরার দল ও তাহাদের অনুসারী লোকজন ফিরিয়া গেল। রাসূল (সাঃ) একটি আঙ্গুর গাছের ছায়ায় বসিলেন। রাবীআর দুইপুত্র ওতবা ও শাইবা তাঁহাকে লক্ষ্য করিতেছিল এবং তায়েফের দুর্বৃত্তদের দুর্ব্যবহারও তাহারা প্রতক্ষ্য করিয়াছিল। ইবেন ইসহাক (রহঃ) বলেন, আমার নিকট ইহাও বর্ণনা করা হইয়াছে যে, বনু জুমাহ গোত্রের একজন মহিলার সহিত রাসূল (সাঃ)-এর সাক্ষাৎ হইলে তিনি তাহাকে বলিয়াছিলেন, তোমার শ্বশুরালয়ের লোকদের নিকট হইতে আমাদেরকে কত কষ্টই না সহ্য করিতে হইয়াছে।
অতঃপর নবী কারীম (সাঃ) যখন (তায়েফবাসীদের হাত হইতে) নিশ্চিন্ত হইলেন তখন তিনি এই দোয়া করিলেন-
আয় আল্লাহ, আপনারই নিকট আমি নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতা ও লোকসমাজে অবহেলিত হওয়ার অভিযোগ করিতেছি। ইয়া আরহামার রাহিমীন, আপনিই দুর্বলদের প্রতিপালক। আপনি আমাকে কাহার নিকট সোপর্দ করিতেছেন? অচেনা অনাত্মীয়ের নিকট? যে আমাকে দেখিলে মুখ বিকৃত করে না কোন এমন শত্রুর নিকট যাহাকে আমার ব্যাপারে ক্ষমতা প্রদান করিয়াছেন। যদি আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন তবে আমি কাহারো পরওয়া করি না, আপনার হেফাজত আমার জন্য যথেষ্ট।
আমি আপনার চেহারার নূর যাহা সকল অন্ধকারকে আলোকিত করিয়া দিয়াছে এবং যাহার দ্বারা দুনিয়া আখেরাতের সকল কার্যাবলী সমাধা হয় সেই নূরের উসিলায় আপনার নিকট পানাহ চাহিতেছি, যেন আমার উপর আপনার গজব পতিত না হয় আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট না হন। আপনার অসন্তোষকে দূর করা জরুরী যতক্ষণ না আপনি সন্তুষ্ট হন। আপনার তৌফিক ব্যতিত কেহ না গুনাহ হইতে ফিরিতে পারে, আর না নেক কাজে শক্তি অর্জন করিতে পারে।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
তায়েফের হৃদয় বিদারক ঘটনা – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন