ভালুক

তখন সন্ধ্যে বোধ করি সাড়ে ছটা কি বড় জোর সাতটা। কিন্তু তবুও মনে হয় যে রাত নটা বেজে গেছে। কাল রাত্তিরে আমার দাদা আর বৌদি এসেছে। অনেকদিন পরে তাই বাবা ও মা ওদের নিয়ে একটু ঘুরিয়ে আনতে গেছে। আমাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমি বলেছি যে আমি বড় হয়েছি। আমি একলা থাকতে পারি। আমি এখন একলা বসে বসে অঙ্ক কষছি। একটি অঙ্কের যত যখন কিছুতেই ছাড়তে পারছি না ঠিক তখন পাশের বাড়ীর কুকুর ভোলাটা ভীষণ ভাবে চেঁচাতে লাগল। আমি মনে মনে ভাবলাম এই হতচ্ছাড়া কুকুরটা চেঁচিয়ে কি যে লাভ পায় বুঝি না। আমি বিরক্ত হয়ে কুকুরটার উদ্দেশ্যে একটা বকুনি ছেড়ে দিলাম। তারপর একসাথে কয়েকটা শেয়াল ডেকে উঠল। হঠাৎ আমাকে পাশের বাড়ীর চাকর রামাদীন ডাকল, “দাদাবাবু দেখে যাও জলের ওপরে ওটা কি?” অগত্যা আমি পড়া রেখে উঠলাম।

বাইরে এসে দেখি পাশের বাড়ীর সবাই জলের দিকে কি দেখছে। মাঝে মাঝে টর্চের আলো ফেলছে। রামাদীন বলল, “জলের ওপর একটা ইয়া বড় ভালুক সাঁতার কেটে এদিকে আসছে।” আমাদের বাড়ীর পাশে একটি বিরাট দীঘি। রামাদীন জলের ওপর টর্চের আলো ফেলল। দেখলাম জলের ওপর ভালুকটা বেশ কাছে এসে পড়েছে। পাশের বাড়ীর বৌদি আমাকে বললেন, “দীপক একটা কিছু কর। নাহলে আমার ভীষণ ভয় করছে।” রামাদীন বল্ল, “দিদি অযথা ভয় পাবেন না। ওটা বোধ হয় ওপাশের জঙ্গল থেকে এসেছে। আপনিই চলে যাবে।” “তুমি চুপ করো”, বৌদি বললেন, “দীপক একটা কিছু কর।” আমি বল্লাম, “আচ্ছা বৌদি।” বলেই চলে গেলাম ঘরের মধ্যে। আমার এয়ারগানটা আর একটা গুলতি নিয়ে বেরিয়ে এলাম। এসেই রামাদীনকে বল্লাম, “রামাদীন, শীগগীর তোমাদের পাঁচ বেটারীর টর্চটা নিয়ে এস।” রামাদীন দৌরে চলে গেল। তখনও ভালুকটা জলে। আমি গুলতি ছুড়তে লাগলাম। ভালুকটা বিরক্ত হয়ে মাথা ঘোরাল। এবার ভালুকটা পাড় ধরে উঠে এল। তখন আমি দুটো এয়ারগানের গুলি ছুড়লাম। রামাদীন ততক্ষণে টর্চ নিয়ে এসেছে। আমি বল্লাম, “থ্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে ঐ ভালুকটার চোখে টর্চের আলো ফেলবে।” রামাদীন ঠিকমতো টর্চ জ্বাললো। ওর মুখে আলো পড়তেই ওটা ভয় পেয়ে জলে ঝাঁপ দিল ও উল্টো দিকে সাঁতার কেটে পালাতে লাগল। লক্ষ করিনি মারা এসে গেছে। তখন মা বল্ল, “কি হয়েছে রে দীপক তোর পড়া শেষ?” বৌদি তখন সব কথা খুলে বললেন। আমি তখনও জলে গুলতি ছুড়ছিলাম। ফিরে এলাম যখন তখন আমার মুখে বিজয়ীর হাসি।
সমাপ্ত

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!