বাশঝাড়ে তেলের চাষ

পুকুর পাড়ের একদিকে লোকের যাতায়াত। অন্যদিকে ইয়াবড় বাঁশের ঝাড় । ঠিক সন্ধ্যে বা ভোরবেলায় যখন হাল্কা হাল্কা বাতাস বয় তখন ক্যাঁচ কোঁচ ক্যাঁচ কোঁচ আওয়াজ হয় । একটু দূরে শ্মশান । নিশিভোরে মানুষ যখন হাটে বা কাজে যায় এবং সন্ধ্যের আঁধার নামলে বাড়ি ফেরে তখন অনেকেই এমন ভূতুড়ে শব্দে ভয়ে কুঁকড়ে যায় ।
লোক বাড়াল । পুকুরের দুদিকেই রাস্তা দরকার । বাঁশ ঝাড় উপড়ে ফেলতেই হবে । যাদের ভাগ আছে তারা নানা মুনির নানা চাহিদা পেশ করে ঝাড় রক্ষা করতে চাইল যাতে বাঁশে তেল মাখিয়ে কিছু কামিয়ে নেওয়া যায় ।
মোড়ল জুটিয়ে নিল কিছুজন । গোষ্ঠী হল । সে আবার তার মাথার কাছে বার কতক যাওয়া আসায় ব্যাখ্যা হল অন্য । আবার দু একটা বাঁশ দরকার বলে কিছু জনমজুর লাগিয়ে কাঁটা ঝোপ থেকে বাঁশও কাটতে লাগল । তাতে ফিসফাস কথা ভাসল তবে প্রকাশ্যে এল না । কিছুদিনের মধ্যে বেশ বেড়ে গেল ক্যাঁচ কোঁচ ক্যাঁচ কোঁচ। যে যেভাবে তেল দিতে পারল সেভাবেই জোটাতে লাগল গোষ্ঠী । আর নানা অছিলায় কমতে লাগল ঝাড় । অন্য রাস্তাটাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম ।
উল্টে গেল তেলের ভাঁড় – দেখে নেব আমরাও , আমাদের সাথে নববাবু আছে থানায় ওঠা বসা !
-খুব বাড় বেড়েছে বিলুর । আমার রুটি খেত চেটে চেটে এখন সাপের পাঁচ পা দেখেছে ? আর তো ছাড়ব না , আচ্ছা করে তেল মাখিয়ে আছোলা না দিলে বুঝবে না এই লাল্টু শর্মা কে ? আর কত ধানে কত চাল ।
-কবে থেকে এই ঝাড় দেখে আসছি । কত উপকারে লেগেছে । আজ এ ওকে ও তাকে ঘুরে ফিরে তেলের ফায়দায় কোথাকার জল কোথায় কি ঠেকবে কে জানে ? জনমজুর খেটে আমাদের কিছু আসছিল তাও যেতে বসেছে । যারই কথা শুনি অন্যে রাগ করে । যত দোষ আমাদের ঘাড়ে পড়ছে ।
হলও তাই । গড়াল আইন আদালত পর্যন্ত । তুলে নিয়ে গেল বাইরের বাঁশ কেটেছে যে জনমজুর তাদের । তারাই নাকি ঝাড় কব্জা করতে চায় । রাস্তা তৈরিতে বাধা দিচ্ছে । বাঁশঝাড় পরিস্কার করতে কাঁটার আঘাত আর বাবুর আঘাত তারাই সহ্য করল । এদের মধ্যে যারা বাবুদের খুব তেল দিতে পারল হাত পা চেটে দিল তারা ছাড়া পেল । কিছু একগুঁয়ে শাস্তি পেল ।
এখন বাঁশ ঝাড় একেবারে সাফ । রাস্তা হয়েছে । সেই রাস্তা ভাঙছে গড়ছে । কাঁটা বাঁশের ঝাড় ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে । তার সাথে তেল ।
চপ চপে তেল চোখে পড়ছে খুব । ছিলা অছিলা তেল মাখা বা না মাখা বাঁশ মনে মনে ঘোর প্যাঁচ খাচ্ছে । দেখা যাচ্ছে না তবে স্পষ্ট বোঝা গেলেও মুখে বলা বারন ।
আমরা মানুষ কি না ! কত কি গুছিয়ে রাখি সহজে ফেলি না !

দুঃখিত!