মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি — শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

আদ্যশক্তিদেবী আছাড় খেয়েছেন শুনলে আজকাল লোকজন কেউ তেমন অবাক হয় না। কেউ যদি কাউকে গিয়ে বলে, জানো, আদ্যাশক্তি আজ আছাড় খেয়েছেন? তাহলে যাকে বলা হয় তিনি অবাক হয়ে বলেন “ওওও, এ আর এমন কী? উনার আছাড় খাওয়া অভ্যাস।
তবু কেউ যদি আছাড় খায়ই, সে আদ্যাশক্তি দেবীই হোন বা আর যে কেউ হোক, নিয়ম হল লোকজন গিযে তাকে ধরিমরি করে তুলবে। গোয়াল ঘরের চেঁচামেচি শুনে তাই সবাই দৌড়ে গেল।
গিয়ে দেখে, গোয়ালঘরের এক কোণে যেখানে ব্যায়োগ্যাসের গবেষণার জন্য হারাধন বিজ্ঞানী গোবরের তাল জমিয়ে পচাচ্ছিল সেখানে আদ্যাশক্তিদেবীর অর্ধেক ডুবে আছে। তিনি নিঃশব্দে চেঁচাচ্ছেন। অর্থাৎ তাঁর মুখ নড়ছে কিন্তু শব্দ বেরচ্ছে না।
বুড়ি ঝি কিরমিরিয়ার অভ্যাস হল, বাড়িতে কোনও রকম ঘটনা ঘটলেই সে বিলাপ করে কাঁদতে বসবে। বাড়িতে কিছু ঘটলেই কিরমিরিয়ার বিলাপ শুরু হয়ে যায়। এই তো সেদিন খুঁকির ড্রইং খাতা হারিয়ে গিয়েছিল। সে কি বিলাপ!!!.. ও বাবাগো? খোঁকির এখন কী হবে গো! ইস্কুলের দিদিমিণি এখন খুঁকিকে বকবে গো! সারাদিন তার বিলাপের জ্বালায় সবাই অস্থির। এখন বাড়িতে যাই ঘটুক, কিরমিরিয়াকে কেউ কিছু খবর দেয় না।
প্রায় দুদিন কিরমিরিয়া বিলাপ করেনি। বিলাপ না করলে তার পেট ফেঁপে যায, খিদে নষ্ট হয়ে মুখে অরুচি হয়। রোগাও হয়ে যায় সে। দুদিন বাদে জবর ঘটনা দেখে কিরমিরিয়া গিযে গোবরে অর্ধেক ডুবে থাকা আদ্যাশক্তি দেবীর মুখের সামনে উবু হযে বসে মনের সুখে কেঁদেকেটে বিলাপ করতে লাগল, ‘ও ঠাকুরঝি গো, এত জায়গা থাকতে তুমি কেন গোবরে গিয়ে পড়লে গো! উঠোনে পড়লে না, পুকুরে পড়লে না, ছাদ থেকে পড়লে না, গোবরে গিয়ে পড়লে গো! এখন তোমারই বা কী হবে, গোবরেই বা কী হবে গো!

দুঃখিত!